নলছিটিতে ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি তৈরির উপকরন পাইত্রা বাগানে আগুন
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল, ২০২১, ৬:০৮ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মিলন কান্তি দাস,নলছিটি,ঝালকাঠিঃ
ঝালকাঠি জেলার এতিহ্যবাহী শীতলপাটি তৈরির অন্যতম উপকরন মুর্তা গাছ’র (পাইত্রা) বাগানে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
২৫ এপ্রিল রবিবার দুপুরে নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের পূর্ব কামদেরপুর গ্রামের বিবেকানন্দ পাটিকরের মুর্তা (পাইত্রা) বাগানের ৪০/৫০ শতাংশ জমির পাইত্রা গাছ আগুনে পুড়ে গেছে। আগুনের সূত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে তা নিশ্চিত করে কেহই বলতে পারছেন না। সরেজমিনে গেলে বাড়ির মহিলরা জানান দুপুরের দিকে বাগানে ধোয়া ও আগুন দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে সবাই ছুটে আসেন। বাড়ির মহিলা-পুরুষ ও আশপাশের মানুষ ছুটে এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। অনেক চেষ্টার পর আগুন নেভানো গেলেও ততক্ষণে বাগানের চরম ক্ষতি হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ বাগানের মালিক ও ওই ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার বিবেকানন্দ পাটিকর সাংবাদিকদের বলেন কিভাবে আগুন লেগেছে জানি না তবে আমার সন্দেহ হচ্ছে বাগানের ভিতর একটা সংঘবদ্ধ দল তাসের এবং মাদক সেবনসহ সিগারেট আড্ডা বসায়। এই আড্ডা ও মাদক সেবনের সময় আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। এছাড়া বাগানের ভিতর আগুন লাগার আর কোন কারন দেখছি না।
অগ্নিকাণ্ডে তার ৫ লক্ষাধিক টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন। এ ব্যাপারে তিনি ২৬ এপ্রিল সোমবার নলছিটি থানায় একটি সাধারন ডায়রি করেছেন।
ওই ইউনিয়নের নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান সেন্টু ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন এখানে তৈরি শীতল পাটি শুধু ঝালকাঠি জেলার ঐতিহ্য নয়,এটি সারা বাংলাদেশের ঐতিহ্য। এখানকার হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী শীতল পাটি বাংলাদেশ মহামান্য রাষ্ট্রপতিকেও উপহার দেওয়া হয়েছিল। এই শিল্পের উপর নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ও সুবিদপুর ইউনিয়নের ৫০/৬০ টির বেশি পরিবারের জীবন জীবিকা নির্ভর করে। যে বা যারা এমন কাজ করেছে তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সরকারের আর্থিক সহযোগিতা পেতে পারেন তার দাবি জানান। ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি বিজয় দত্ত বলেন বাগানের ভিতর তাস ও মাদক সেবনের ঘটনা থেকেই আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে। সংখ্যালঘু হওয়ার কারনে এরা কিছুই বলতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সহযোগিতা ও দোষীদের খুঁজে বের করার দাবি জানান। ওই ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বর আবদুর রব বলেন এই পরিবার গুলোর সবাই ভদ্র। এরা এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখছে। এক সময়ে এদের বাড়িতে বিদ্যুত ছিল না,আমি এমপি মহোদয়ের কাছে বলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি। আগুনে বাগান পুড়ে যাওয়ার ফলে এদের অনেক টাকার ক্ষতি হয়েছে। যারা এই কাজ করেছে তাদের শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সাহায্যের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
নলছিটির উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুম্পা সিকদার বলেন বিষয়টি তিনি জেনেছেন। বাগানে আগুন লাগার বিষয়টি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছেন,তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।
মোল্লারহাট ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান কবির হোসেন বলেন, আমি ঘটনা শুনেছি এরকম আগুন লাগার ঘটনা এই প্রথম এবং বিষয়টি দুঃখজনক।
এদিকে নিরীহ পাটি শিল্পীদের আয়ের উৎস পাটি তৈরীর কাচামাল পাইত্রা বাগানে আগুন দেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বরিশাল বিভাগীয় পাটিকর সমিতির সভাপতি রনজিত দত্ত ও উপদষ্টো রফকিুল আলম। তারা এই ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দুস্কৃতিকারীদের অবলিম্বে আইনের আওতায় আনার দাবী জানিয়েছে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী এ শীতল পাটি তৈরি করছে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ও সুবিদপুর ইউনিয়নের ৫০/৬০ টির মতো পরিবার।এরা বংশগতভাবে শীতলপাটি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তাদের তৈরি করা শীতল পাটি বাংলাদেশেই নয় বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। আগুনের ক্ষতি যাতে পুষিয়ে নিতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বিভিন্ন মহল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন।