নমুনা পরীক্ষা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ
প্রকাশ: ৭ জুলাই, ২০২১, ১২:০৩ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
রিপোর্ট পেতে ৩ দিন বিলম্ব, ল্যাবে নমুনা জট
বরিশাল খবর ডেক্স :
ল্যাবের সক্ষমতার চেয়ে বেশি পরিমাণ করোনা পরীক্ষার নমুনা আসায় রিপোর্ট দিতে হিমশিম খাচ্ছে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ। নমুনা পরীক্ষা করতে দেওয়া অধিকাংশ রোগীদেরই রিপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে। ভোলায় আরটি পিসিআর ল্যাব থাকলেও বাকি ৫ জেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার একমাত্র ভরসাস্থল বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাব। এ ল্যাবে দৈনিক ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা থাকলেও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই (শেবাচিম) গড়ে প্রায় দুশ’ নমুনা জমা হচ্ছে। এর বাইরে বিভাগের অপর জেলা ও উপজেলাগুলো থেকেও আসছে সাড়ে তিনশ থেকে চারশ নমুনা। বিভিন্ন উপজেলায় জিন এক্সপার্ট ও রেপিট এন্টিজেন্ট টেস্টে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০টি নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হলেও বাকিটা চলে আসে শেবাচিমে। ফলে গত কয়েকদিন ধরে সক্ষমতার কয়েকগুন বেশি নমুনা নিয়ে বিপাকে পড়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
চাপ সামলাতে শুক্রবার ৩৬৬টি নমুনা ঢাকায় পাঠিয়েছে বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু এসব নমুনাসহ শেবাচিমের আরটি পিসিআর ল্যাবে জমে থাকা নমুনার ফলাফল পেতে ৩ থেকে ৪ দিন কারো কারো আরও বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে বেশি সময় লেগে যাওয়ায় অনেক রোগী চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা না নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আবার কারোর তেমন উপসর্গ না থাকায় অবাধে চলাফেরা করার ৩/৪ দিন পর জানতে পারছে পজেটিভ। অনেকের উপসর্গ থাকলেও তারা নানান কারণে নমুনা পরীক্ষা না করানোর ফলে সংক্রমিত হচ্ছে আশপাশের মানুষ। এতে করে বিভাগে প্রতিদিনই আগের দিনের চেয়ে বেশি আক্রান্তের চিত্র ফুটে উঠেছে। এছাড়াও উপসর্গ থাকা রোগীদের নমুনা সংগ্রহ (নাক-মুখের ভেতরের লালা) সংগ্রহ থেকে শুরু করে পরীক্ষাগারে তা প্রক্রিয়াজাত করার জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সংকট রয়েছে বিভাগের সকল জেলা ও উপজেলাগুলোতে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ৬ জেলা ও ৪২টি উপজেলার হাসপাতালে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ প্রায় অর্ধেক শূন্য রয়েছে।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবের দায়িত্বরতরা জানিয়েছেন, ৫ জেলা ও শেবাচিম হাসপাতাল মিলিয়ে বর্তমানে দৈনিক গড়ে ৫শ’র অধিক নমুনা আসছে। অথচ সক্ষমতা রয়েছে ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার। যদিও নমুনা বেশি পরিমাণে জমে গেলে তা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অফিসের তত্ত্বাবধানে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু এতে করে নমুনার রিপোর্ট পেতে অধিক সময়ক্ষেপণ হচ্ছে। শনিবার দিনশেষে তাদের হাতে দু’শ অতিরিক্ত এবং শের-ই-বাংলা মেডিকেল থেকে ১৯৮টি যুক্ত হয়েছে। এর বাইরের ৫ জেলা থেকে আরও নমুনা আসলে কমপক্ষে ৭শ’ নমুনা যুক্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
শেবাচিমের পিসিআর ল্যাবের প্রধান ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক একেএম আকবর কবীর জানান, গত কয়েকদিন ধরে সক্ষমতার অধিক নমুনা আসছে। তবে কয়েকদিন পর পর ৩ থেকে ৪শ’ করে নমুনা স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, এ ল্যাবে বর্তমানে একজন ল্যাব কনসালটেন্ড সহ ৭ জন কর্মরত রয়েছে। এদিকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দৈনিক প্রায় ১৭০ জনের নমুনা সংগ্রহ হওয়ায় সেখানে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত করোনার নমুনা সংগ্রহ করার কথা থাকলেও বেলা ১১টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ এবং অনেককেই ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে এই কাউন্টার থেকে সেই কাউন্টারে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে রোগীরা। একাধিক রোগী ও তার স্বজনরা জানান, একদিকে করোনা পরীক্ষায় ভোগান্তি অপরদিকে রিপোর্ট পেতে বিলম্ব সব মিলিয়ে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ সূত্র জানায়, গত এক সপ্তাহ ধরেই বিভাগে গড়ে আক্রান্ত হচ্ছে দু’শ’র বেশি মানুষ। উপসর্গ ও আক্রান্ত মিলিয়ে গড়ে ১০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। প্রয়োজনের চেয়ে কয়েকগুণ কম জনবলের শেবাচিমের ১৫০ বেডে’র করোনা ওয়ার্ডে আরো ৫০ বেড বাড়িয়ে ২শ’তে উন্নীত করলেও চিকিত্সা সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। গতকাল ১৮৫ জন রোগী ভর্তি থাকায় চিকিত্সা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। নতুন ১০টি সহ আইসিইউ বেড রয়েছে ২২টি। এর মধ্যে ২১টি বেডে চিকিত্সাধীন রয়েছেন আশংকাজনক রোগী। এছাড়াও আরটি পিসিআর ল্যাবের সব শেষ রিপোর্টে শনিবার করোনা শনাক্তের হার ৫৪ দশমিক ৭৩। ১৯০ জনের পরীক্ষায় ১০৪ জনের নমুনা পজেটিভ আসে। আগেরদিন শুক্রবার প্রকাশিত রিপোর্টে শনাক্তের হার ছিলো ৫৩ ভাগ। বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিলো ৫৩ দশকি ৩৬ ভাগ।
বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার দাস জানান, করোনার নমুনা সংগ্রহ বিভাগ জুড়ে বর্তমানে ৭শ’র অধিক। ভোলা ও বরিশালের আরটি পিসিআর ল্যাবের বাইরে উপজেলাগুলো জিন এক্সপার্ট ও রেপিট এন্টিজেন্ট টেস্ট করা হচ্ছে।