নদী ভাঙ্গনে ছোট হচ্ছে দক্ষিণের মানচিত্র : জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ
প্রকাশ: ২২ আগস্ট, ২০২২, ৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মামুনুর রশীদ নোমানী : মৌসুম বায়ু বাংলাদেশর ওপর পুরোপুরি ভাবে সক্রিয় থাকায় দেশে বৃষ্টি পাতের প্রবণতা বেড়েছে । তার প্রভাব পরেছে দক্ষিণাঞ্চলে। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। ঘরবাড়ি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। প্রতিকারে সরকারি ভাবে তেমন কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তীব্র আকার ধারনা করছে দক্ষিণের নদী ভাঙ্গন। যে কারনে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে দক্ষিণের মানচিত্র। ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে পরেছে নদী পাড়ে বসবাসরত মানুষ। শুধু শান্তানা নিয়েই আতঙ্কে পার করছে জীবন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশালে কীর্তনখোলা নদী থেকে গত কয়েক দিন ধরে বন্যার পানির তীব্র স্রোতে বরিশালের বেশ কয়েকটি এলাকায় নদীভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এতে রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি এবং অনেক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। ঠাঁই নিচ্ছে শহর কেন্দ্রিক এলাকা গুলোতে। নদী তীরবর্তী মানুষ আছেন চরম আতঙ্কে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বরিশাল সদরের অন্তত ছয়টি স্থানে নদীভাঙন তীব্র হয়েছে। এসব স্থানে বালুভর্তি (জিও) ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বরিশাল সদরের চরমোনাই, চড়বাড়িয়া, শায়েস্তাবাদ, কীর্তনখোলা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের গর্ভে বিলীন হচ্ছে ইছাগুড়া কালীগঞ্জ বাজার ও গ্রাম। সরেজমিনে দেখা যায়, বরিশাল সদরের চড়বাড়িয়া ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামটিতে কীর্তনখোলা নদীর ব্যাপক ভাঙ্গন চলছে। গত কয়েক দিনের ভাঙ্গনে চরবাড়িয়া থেকে লামছড়ি যাওয়ার পাকা সড়কটির অন্তত ১০০ ফুট পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন চারণ দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের বসতভিটা ও লাইব্রেরি এবং আশপাশের গ্রামের মানুষের বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি হুমকিতে রয়েছে। এখানে এর আগে জিও ব্যাগ ফেলে সাময়িক ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হলেও একটি চরের কারণে ঢেউ আছড়ে পড়ে ভাঙছে লামছড়ি। একইভাবে চরমোনাই, চড়বাড়িয়া, আটহাজার ও এলাকায় কীর্তনখোলার গর্ভে প্রতিদিন বিলীন হচ্ছে নানা কিছু। চরবাড়িয়া এলাকার লামচরী ৮নং ওয়াডের বাসিন্দা টিপু ভুঁইয়া বলেন, আজ আমাদের একটি মাত্র মসজিদ ভুঁইয়া বাড়ির সামনে। নদী ভাঙ্গনে কিছু অংশ কির্তনখোলা নদীতে নিয়ে জায়। ‘আমরা নদীভাঙনে বসতবাড়ি, সহায়-সম্পদ সব হারিয়েছি। এখন রাস্তার পাশের যে জমিতে মাথাগোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছি। তাও ভাঙ্গনের আশঙ্কায় আছে। এই সপ্তাহের ভাঙ্গনে লামছড়ি পোটকার চর ও ভুইয়া বাড়ির রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। এখন ভাঙ্গন আরও সামনে যাচ্ছে। একইভাবে আড়িয়াল খাঁ নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে চরমোনাই ইউনিয়নের ইছাগুড়া কালীগঞ্জ এলাকা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত কয়েক বছরে কালীগঞ্জ বাজার কয়েক দফা ভাঙনের শিকার হয়েছে। নতুন করে বাজার তৈরি করলেও পুরো বাজারটি এবার নদীগর্ভে চলে গেছে। একই সঙ্গে গত কয়েক বছরের ভাঙ্গনে এই এলাকার কয়েক`শ পরিবারের বসতঘর, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। গত ৩ থেকে ৪দিন ধরে ভাঙ্গনের তীব্রতা বাড়ায় এখন প্রতিদিনই নতুন নতুন জমি, স্থাপনা বিলীন হচ্ছে। ভাঙ্গনের শিকার এসব নিঃস্ব পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে অন্যের জমি ও সরকারি রাস্তার পাশের জমিতে। চরম মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
এসব এলাকার বাসিন্দারা বলেছেন, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক গত ৩১ জুলাই নদী ভাঙ্গনকবলিত এসব এলাকা পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে এবং স্থায়ী ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের আশ্বাস দেন। কিন্তু ভাঙ্গনের যে অবস্থা তাতে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এসব এলাকা রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। এদিকে, শনিবার বিকেলে এসকল এলাকা পরিদর্শনে আসেন বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মধু।
তিন বলেন, বরিশাল সদর উপজেলা চরবাড়িয়া ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গনের কাজ চলমান রয়েছে। তবে মন্ত্রী মহাদয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী মহাদয়কে জানিয়ে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, লামচরী ভুঁইয়া বাড়ি মসজিদ সহ আরো একটি মসজিদ ভেঙ্গে নিয়ে গেছে আমি ভেঙ্গে জাওয়া ভুঁইয়া বাড়ির কিছু অংশ আছে আমি ওই খানে মাগরিবের নামাজ পরছি তার পরে এলাকা বাসীকে বলে এসেছি, অতি তারা তারি কাজ করা হবে তার পরে ওই খান থেকে বিদায় নিয়ে বরিশালের দিকে চলে আসি বিষয়টি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে আমরা অবহিত করার পর তিনি এসব এলাকায় যান। নিজের চোঁখে ভাঙ্গনের ভয়াবহতা দেখেছেন। নদীভাঙ্গন প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী আপদকালীন এবং স্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।