প্রাচীন অসংখ্য পুরাকীর্তির ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ পর্যটন নগরী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা। এসব পুরাকীর্তির উল্লেখযোগ্য হলো সাচিলাপুর এলাকায় সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সমাধি, ঐতিহাসিক পাঁচ পীরের সমাধি ও মসজিদ, মোগরাপাড়ায় দানেশ মান্দ ইব্রাহিম ও মুন্না শাহের সমাধি, গোয়ালদীতে আলাউদ্দিন হোসেন শাহী মসজিদ, দমদমা ও পানাম নগরীতে নীলকুঠি, টাকশাল বাড়ী, পানাম পঙ্খীরাজ খালের ওপর সেতু, বারদীতে অসংখ্য অট্টালিকা, মঠ, মন্দির, খাজাঞ্চি, দরবার কক্ষ, গুপ্ত পথ, ভোজনালয়, বিচারালয় ও প্রমোদালয় ইত্যাদি।
সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের সমাধি : শাচিলাপুর গ্রামের খালের পাড়ে আছে সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মাজার। ১০ ফুট লম্বা, সাড়ে ৫ ফুট চওড়া ও ৩ ফুট উঁচু সমাধিটি সম্পূর্ণ কালো কষ্টি পাথরে তৈরি। সমাধির কার্নিশের মধ্যে রয়েছে সূক্ষ্ম অলংকরণের কারুকাজ। দুপাশে খোদিত তিনটি করে খাজ বিশিষ্ট খিলান, প্রলম্বিত শিকল ও ঝুলন্ত ঘণ্টার নকশা।
পাঁচ পীরের মাজার মসজিদ : ভাগলপুর গ্রামে পাঁচ পীরের মাজার সংলগ্ন একটি মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়। চুনসুড়কির গাঁথুনির এ মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং দেয়ালগুলো সাড়ে ৩ ফুট চওড়া। স্থানীয়দের মতে ৭০০ বছর আগে এ মসজিদটি নির্মিত। মসজিদের পাশে ৬০ ফুট লম্বা প্রাচীর বেষ্টিত এক সঙ্গে পাশাপাশি পাঁচটি কবর ও ইটের তৈরি একটি দোচালা (চেরাগদানী ঘর) রয়েছে।
মগ জলদস্যুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার প্রাক্কালে পাঁচ ভাই একসঙ্গে নিহত হলে তাদের এখানে সমাহিত করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সোনারগাঁয়ে পাঁচপীর বা ফকিরের শ্রেণিবদ্ধ রূপে পাঁচটি মাজারের ভগ্নাবশেষ আজও বিদ্যমান আছে। তার ওপরে লেখা আছে গয়েসদি, সামসদি, সিকান্দর, গাজী ও কালু। গয়েসদি-বাদশাহ গয়েসউদ্দিন, সামসদিÑপূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গের স্বাধীন শাসনকর্তা সামসুদ্দিন। সিকান্দার-বাংলার প্রসিদ্ধ বাদশাহ, যাহার হাতে বাংলা জরিপ হয়েছিল। গাজী-ধর্মযুদ্ধে জয়ী হওয়া গাজী খাঁ, কালুÑহিন্দু ফকির গাজীর মন্ত্রণদাতা ও অত্যন্ত প্রিয় সহচর।
দমদমা : প্রাচীন পুরাকীর্তির বেশির ভাগই দমদমার অভ্যন্তরে অবস্থিত। সুলতান জালাল উদ্দিন ফতে শাহর মসজিদ, মুন্নাশাহ ও দানেশমান্দ ইব্রাহীমের মাজার সংলগ্ন নহবত খানা, টাকশালসহ অসংখ্য প্রাচীন ইমারতের অনেক নিদর্শনই দমদমা এলাকায়। এই দমদমাকে স্থানীয়রা বার আউলিয়ার এলাকা বলে থাকে।
আলাউদ্দিন হোসেন শাহী মসজিদ : গোয়ালদীতে প্রায় ৪৫০ বছরের পুরোনো একটি মসজিদ রয়েছে। আলাউদ্দিন হোসেন শাহর রাজত্বকালে মোল্লা হায়বর খান ১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে ১২টি আয়তাকার পোড়া মাটির কাঠামো নির্মিত ফলক সাদৃশ্য মসজিদটি নির্মাণ করেন। এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির চারদিকে ফুল পাতা এবং মাঝে ঝুলন্ত নকশা রয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও পানাম নগরী : সোনারগাঁ একটি অতি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক জনপদ এর প্রাচীন নাম সুবর্ণ গ্রাম। ৪০০ বছরের পুরোনো ইংরেজ আমলে তৈরি মঠবাড়ি, পোদ্দার বাড়ি, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নীলকুঠি, কাশিনাথের বাড়িসহ রয়েছে নানা প্রাচীন ভবন। দুটি লাইনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ইটের তৈরি দোতলা, তিনতলা বিশিষ্ট ইমারত গুলি সোনারগাঁয়ের প্রাণকেন্দ্র ছিল। সে সময় গড়ে ওঠা অধিকাংশ ভবনই এখন জীর্ণদশা ও ভগ্নাবশেষ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। তৎকালীন সোনারগাঁ থেকে ঈসাখার রাজধানী স্থানান্তর হলেও আজও সর্বত্র পরিলক্ষিত হয় ইংরেজ আমলের তৈরি অসংখ্য ইমারত ও ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে থাকা বাংলার প্রাচীন রাজধানীখ্যাত সুবর্ণ গ্রাম সোনারগাঁ।