দিনে মাঠে, রাতে ত্রাণ নিয়ে ঘরে ঘরে পুলিশ কর্মকর্তা মাহমুদ
প্রকাশ: ১০ মে, ২০২০, ৫:২৪ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মামুনুর রশীদ নোমানী : সময়ে সময়ে আলোচনা-সমালোচনায় পুলিশের খারাপ দিকগুলোই বেশি মুখরোচক হয়ে ওঠে। পুলিশ যে জনগণের বন্ধু, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করার পাশাপাশি তারা যে মানবিক কাজের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই তা আমরা ভুলে যাই। দু-একজনের অপকর্মে পুরো পুলিশ বাহিনীকে সমালোচনায় বিদ্ধ করি আমরাই। তবে পুলিশ বিভাগে রয়েছে এম এম মাহমুদের মত অসংখ্য মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা। যারা সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মতো মানবিক কাজগুলোও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করেন।
ঝালকাঠি সদর সার্কেলের অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে কর্মরত এম. এম. মাহমুদ হাসান। তিনি করোনা পরিস্থিততে প্রশাসনিক দ্বায়িত্ব পালন ও জন সচেতনতা তৈরি করতে সারাদিন থাকেন কর্মক্ষেত্রে। আর রাতের আধারে নিম্ন আয় ও মধ্যবিত্ত্বদের তালিকা করে ঘরে ঘরে পৌঁছৈ দিচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। আর এটি করছেন, নিজের বেতন থেকে কিছু টাকা বাচিঁয়ে এবং বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে টাকা ধার করে এবং বন্ধুদের সহযোগীতায় । করোনারোধে প্রতিদিনই তিনি সকাল থেকে রাত অবধি জনগনের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন সেই শুরু থেকে।
ঝালকাঠির গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বৈদারাপুর গ্রামের একজন বৃদ্ধা, স্বামী, পরিত্যক্তা মেয়ে ও তার নাতিসহ চার সদস্যের পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছেন। এমন সংবাদ পেয়ে গতকাল বৃদ্ধাকে চাল, ডাল, তৈল, আলু ও পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন মাহমুদ হাসান। অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু এই একটি পরিবারই নয়, প্রতিদিন অন্তত কয়েকটি পরিবারকে এভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী কিনে নিজ দায়িত্বে রাতের আধারে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এম. এম. মাহমুদ হাসান বলেন, করোনার প্রভাবে খেটে-খাওয়া এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারও লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা না পারছেন লাইনে দাড়িয়ে ত্রান নিতে, না পারছেন পরিচিত জনদের কাছে সহযোগিতা চাইতে। এমন বেশ কিছু পরিবারের সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। কারণ প্রতিনিয়তই ঝালকাঠি জেলার অনেক মানুষ যারা দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত রয়েছেন এমনকি প্রবাসীরা ও বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষকরে ফোন কল, ফেসবুক মেসেঞ্জারে আমাকে তাদের পরিবারে খাদ্য সংকটের কথা জানান। এসব সংবাদ পেয়ে আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করি এবং সার্মথ্য অনুযায়ী তাদের পরিবারে অতিগোপনে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেই।
ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার অসহায় দুটি ব্যক্তি তাদের স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দু’বেলা দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে না পেরে নিরূপায় হয়ে ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ হাসানের মোবাইলফোনে কল করেন। কিছুক্ষণ পর তিনি ওই দুই ব্যক্তির পরিবারের কাছে ১০ দিনের জন্য খাবার পৌঁছে দেন। এতো অল্প সময়ের মধ্যে খাবার পেয়ে পরিবারগুলো রীতিমত অবাক ও খুশি হয়।
তিনি দেশের চলমান সংকট মোকাবিলায় সমাজের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানান।
এম.এম মাহমুদ হাসান বলেন, দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় ও অনুপ্রেরণায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি অসহায় অনেক পরিবারকেই এমন মানবিক সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছি। খেটে খাওয়া পরিবারগুলো এ সময়টাতে খুব কষ্টে আছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে তাদের বাড়িতে থাকতে বলা হয়েছে। সাধ্যমতো তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
অসহায় মানুষদের তিনি নীরবে দায়িত্বের বাহির গিয়ে মানুষকে সাহয্যে করে আসছেন। তার এ কার্য্যক্রম এখনও চলমান।
মানবিকতার এমন দৃষ্টান্ত খুবই কম। সমাজের বিত্তবান মানুষেরা যদি একটি অভাবি পরিবারের পাশে দাঁড়ান, তাহলে সমাজে আর অভাবি কোনো মানুষ থাকবে না।