অপেক্ষার প্রহর শেষ। স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। আজ সকালে সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই পদ্মা পাড়ের মানুষের ঘরে ঘরে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলাবে পদ্মা সেতু। ব্যবসা বাণিজ্যে আসবে নতুন দিগন্ত। চরাঞ্চলে লাগবে নগরায়ণের ছোঁয়া। এক সময়কার অবহেলিত জেলা শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও গোপালগঞ্জ,বরিশালসহ আশপাশের অঞ্চলের চিত্রই পাল্টে যাবে। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে এসব অঞ্চলে। পদ্মা সেতু রাজধানীর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করেছে দক্ষিণাঞ্চল।
এই অঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন দুয়ার উন্মোচিত হবে। যোগাযোগে কমবে সময়ের দূরত্ব। গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। দেশের ইতিহাসে নিজস্ব অর্থায়নে এটাই সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। শরীয়তপুর প্রান্তের প্রতিটি চায়ের দোকান, ঘরবাড়ি কিংবা ছোট জমায়েতে আলোচনার বিষয়বস্তু পদ্মা সেতু। সবাই অধীর আগ্রহে বসে আছেন সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। ভাগ্য বদলের শুভক্ষণ কাছ থেকে দেখতে চান তারা। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকেও উদ্বোধনের পূর্ব প্রস্তুতি দেখতে শরীয়তপুরে এসেছেন অনেকে। এই অঞ্চলের বাসিন্দারা বলছেন, পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য বড় স্বপ্ন।
সেতু চালু হলে তারা সরাসরি এর সুবিধা পাবেন। দূর হবে তাদের রাজধানীতে যাতায়াতের ভোগান্তি। কৃষকদের কৃষিপণ্য সরাসরি রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতে পারবেন। পদ্মা সেতু হলে এম্বুলেন্স নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেরীর জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিতে ঢাকায় যেতে পারবেন কয়েক ঘণ্টায়। ঝড় তুফানের কারণে পদ্মার উত্তাল ঢেউয়ে এই অঞ্চলের অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। পদ্মা সেতু দিয়ে যাতায়াত করলে সেই শঙ্কা থাকবে না। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, কর্মসংস্থান সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। শিবচরের কুতুবপুর ইউনিয়নের ফার্মাসিস্ট মাহবুব আলম। ঢাকা থেকে ওষুধ কিনে এনে বিক্রি করেন। এজন্য তাকে নানা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হতো। অনেক সময় অপচয় হতো। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে ভাগ্য ফিরবে তার। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের কাছে অনেক বড় স্বপ্ন। এখন তা বাস্তব হচ্ছে। যাতায়াতে আমাদের হয়রানি কমবে। বড় সুফল পাবো। সেতুর জন্য আমাদের এখানকার জমি-জমার দাম তিনগুণ বেড়েছে। আমরা সচ্ছল হচ্ছি। আমাদের জরুরি পণ্য খুব সহজেই রাজধানী থেকে আনা যাবে।
হাসমত মুন্সী বলেন, পদ্মা সেতুর জন্য রাস্তা হওয়ার পর থেকে আমাদের এই অঞ্চল উন্নত হতে শুরু করেছে। এখানে নতুন নতুন হোটেল-রেস্তরাঁ হচ্ছে। আমাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে অগ্রযাত্রা বাড়বে। আমাদের ব্যবসা আরও বাড়বে। বাড়বে জীবিকার সুবিধা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণাঞ্চল নয় দেশের পুরো অর্থনীতির মোড় ঘুরিয়ে দেবে। অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি হবে এটি। এতে দেশের জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে। এই অর্থ নির্মিত পদ্মা সেতু ব্যয়ের তিনগুণের বেশি। আর এসব কারণেই উচ্ছ্বাসিত পদ্মাপাড়ের মানুষসহ পুরো দেশ। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দুদিন আগেই শরীয়তপুর প্রান্তে অবস্থান করছেন বরগুনা উপজেলার সাবেক কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু হলে যাতায়াত সুবিধা ছাড়াও আমরা অনেক সুবিধা পাবো। আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।
আগে কোনো পণ্য আনতে হলে ২-৩ দিন সময় লেগে যেতো। ফেরীর জন্য ঘাটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এখন সেই কষ্ট করা লাগবে না। এখন কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পণ্য চলে আসবে। আমরা অধীর আগ্রহ নিয়ে আছি। শাহ আলম হাওলাদার নামের শিবচরের বাসিন্দা বলেন, আমরা অনেক আনন্দিত। এখন সহজে গাড়িতেই ঢাকা আসা-যাওয়া করতে পারবো। আগে অনেক সময় লাগতো। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করি, নিয়মিত ঢাকা আসা-যাওয়া করা লাগে। এতদিন নানা সমস্যা হতো। একদিনের মধ্যে ঢাকা গিয়ে আসার কোনো উপায় ছিল না। এখন খুব সহজেই যাতায়াত করা যাবে। অর্থনৈতিকভাবেই আমরা উন্নত হবো।