বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   বুধবার ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপব্যবহার উদ্বেগজনক
প্রকাশ: ৯ আগস্ট, ২০২২, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অপব্যবহার উদ্বেগজনক

আলমগীর হোসেন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ আইনে মামলার শিকার অধিকাংশ ব্যক্তি জামিন পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। রিমান্ডে নিয়ে কাউকে কাউকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করারও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে আইনটি পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিশিষ্টজনরা। তাদের মতে, প্রয়োজনে আইনটি সংশোধন করা যেতে পারে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে ৩০০ দিন কারাবন্দি থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। একই মামলার আরেক আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারে মারা যান। তার মৃত্যুর পর আইনটি বাতিলে জোরালো আন্দোলন-প্রতিবাদ চলে। বলা হচ্ছে, জামিন পেলে হয়তো মুশতাক মারা যেতেন না। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ নম্বর ধারা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি করা হয়। ২০০৬ সালে আইসিটি আইন প্রথম প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে এতে ৫৭ ধারা যুক্ত করা হয়। মানহানি, কটূক্তি, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগে ইলেকট্রনিক মাধ্যমে লেখালেখির বিরুদ্ধে এ ধারায় মামলার সংখ্যা বাড়তে থাকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মত, ৫৭ ধারা বাতিলে আন্দোলন করায় সরকার নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি আরও কঠোর করে। আইসিটি আইনের ৫৭ ধারার নির্যাস নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তথ্য ও মতপ্রকাশে আরও কিছু কড়া বিষয় নতুন আইনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাশের পর ২ বছর ৪ মাসের মতো পেরিয়েছে। গত বছর হওয়া ১৯৭টি মামলা বিশ্লেষণে দেখা যায়, ‘কটূক্তি’, ‘মানহানিকর বক্তব্য’, ‘বিকৃত ছবি শেয়ার’, ‘গুজব ছড়ানো’ এবং ‘সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’ জাতীয় অভিযোগে বেশিরভাগ মামলা হয়েছে। ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মামলার বাদী পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। আইনটি পর্যালোচনা করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। তাদের মতে, প্রয়োজনে আইনটি সংশোধন করা যেতে পারে।

এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। তবে এ আইনের ‘অপব্যবহার বা দুর্ব্যবহার’ কীভাবে বন্ধ করা যায়, সরকার সেই চেষ্টা করছে। ৫ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইনটি সংশোধনের কোনো চিন্তাভাবনা আমরা করছি না। তবে এটার অপব্যবহার এবং দুর্ব্যবহার বন্ধ করার চেষ্টা করছি।

এদিকে আইনটির অপপ্রয়োগকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। যুগান্তরকে তিনি বলেন, দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে এমন কোনো কথা কারও বলার অধিকার নেই। আমি মনে করি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটি রাখার প্রয়োজন আছে। তবে, এটার যেন অপপ্রয়োগ না হতে পারে, সে ব্যাপারে বিধিনিষেধ অবশ্যই করতে হবে।

সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমরা তো গণতান্ত্রিক সমাজে সংবিধান অনুযায়ী আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করছি। সাংবাদিক, লেখকের একটা কর্তব্য আছে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে সমাজের ক্ষতি হয়, রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। এ ধরনের কাজ নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করে, কে কী কাজ করেছে তার ওপর। আইন বাতিলের আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যদি দেখা যায় এ আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে, তাহলে আন্দোলনের প্রশ্ন আসবে। এখন সাংবাদিক বা লেখক যদি দেখাতে পারেন যে, এ ধারাগুলো সংশোধন করা দরকার, তাহলে নিশ্চয়ই সরকার তা গ্রহণ করবে। সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে লেখার সুযোগ দিতে হবে। তবে স্বাধীন মানে এই নয় যে, অন্যের ক্ষতি হয়, রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়।’ ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, আইনটিতে ভাবমূর্তি বা মানহানির কোনো ব্যাখ্যা নেই। এর ব্যাখ্যা ঠিক করে পুলিশ। ফলে সরকার বা ক্ষমতাশালীরা যেভাবে মনে করে সেভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করা হয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আলোচনা করে আইনের অনাকাঙ্ক্ষিত ধারাগুলো সংশোধন করা সম্ভব। ২৭ ফেব্রুয়ারি এক ভার্চুয়াল সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, কোনো আইনই সম্পূর্ণ নয়, বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। আইনের যথাযথ প্রয়োগ যেমন আছে তেমনি আছে অপপ্রয়োগ। আর তাই প্রয়োজনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটির প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যেতে পারে। একই সেমিনারে বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, আইনটির অধিকাংশ ধারায় জামিন অযোগ্যতা, পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশের তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা আইনটির দুর্বলতা।

তিনি বলেন, জনগণের মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা সুরক্ষায় সরকারের দ্রুত আইনের চারটি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে আবারও উদ্বেগের কথা জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এক বিবৃতিতে পরিষদ বলেছে, আইনটির আপত্তিকর ধারাগুলো সংশোধন করা হলে হয়তো আজকের পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগে সংবাদকর্মী ও মুক্তমত প্রকাশকারী ব্যক্তিরা ক্রমাগতভাবে নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে একটি সমীক্ষার ফল প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ আইনে ৭৮৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সমীক্ষায় বলা হয়, আইনটিতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ১৩ দশমিক ৬৮ শতাংশ মামলা হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, শিক্ষার্থীদের ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, শিক্ষক ২ দশমিক ৯১ শতাংশ, বেসরকারি চাকরিজীবী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, ব্যবসায়ী ২ দশমিক ১৮ শতাংশ, সরকারি চাকরিজীবী ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ ও আইনজীবী শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ আইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার পরিমাণ ২৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া