ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এসবের মধ্যেই প্রতিনিয়ত গ্রেপ্তার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা বলে মনে করেন দেশের ৭৯ শতাংশ সাংবাদিক। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের এক জরিপে এ তথ্য ওঠে এসেছে। ১০ মে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়।
কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ে দেশের আটটি বিভাগের ১০০ জন সাংবাদিকের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬৩ শতাংশ ছিলেন ঢাকা বিভাগের, বাকি ৩৭ শতাংশ দেশের অন্য সাতটি বিভাগে কর্মরত। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩০ শতাংশ নারী। ২০২০ সালে মহামারির প্রথম লকডাউনের সময়কে বিবেচনায় নিয়ে পরিচালিত জরিপটি ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়।
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৭৯ শতাংশ বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে একটি বাধা ছিল। ২৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারীর মতে, মহামারিকালে কাজ করার সময় বাহ্যিক হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। ১৩ শতাংশ সাংবাদিক মহামারিকালে তাদের সম্পাদকদের দ্বারা বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে বাধা বলে মনে করেন দেশের ৭৯ শতাংশ সাংবাদিক।
এ জরিপে কর্মক্ষেত্রে কোভিড মহামারির প্রভাব, সাংবাদিকতার মৌল তাত্ত্বিক বিষয়াদি, নৈতিকতা, সামাজিক অবস্থান ইত্যাদি বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এসব ক্ষেত্রেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে।
জরিপে আরও বলা হয়েছে, করোনার সময়ে নিয়মিতভাবে সম্পুর্ণ বেতন পেয়েছেন এবং ৩৬ শতাংশ তাদের মূল বেতনের অর্ধেক বেতন পেয়েছেন।
বাকি ২৪ শতাংশ সাংবাদিক মাসিক বেতন পুরোটাই পেয়েছেন কিন্তু অনিয়মিতভাবে। ৪ শতাংশ সাংবাদিক মহামারীর কারণে তাদের চাকরি হারিয়েছেন।
এই সময়ে ৬০ শতাংশ সাংবাদিক বিভিন্ন ধরনের মানসিক চাপের সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানান।
সিজিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারির সময় ৩৪ শতাংশ সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মাত্র ১০ শতাংশ সাংবাদিক কোভিড-১৯ মহামারি সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
সিজিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রশিক্ষণের অভাব একটি উল্লেখযোগ্য সীমাবদ্ধতা রয়েছে। জরিপটি ইঙ্গিত করে যে উত্তরদাতাদের প্রায় অর্ধেক (৪৮%) স্বাস্থ্য সাংবাদিকতার তাত্ত্বিক বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত নন।
জরিপে অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের ৮৮ শতাংশ বলছেন, তারা দুর্যোগ বা মহামারি পরিস্থিতির সময় মাঠ পর্যায়ের প্রতিবেদনের জন্য কোনো প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেননি।
জরিপে উত্তরদাতাদের মতামত বিশ্লেষণ করে যেকোনো দুর্যোগ বা মহামারির সময় সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করার জন্য কিছু সুপারিশ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে-সাংবাদিকদের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ভ্যাকসিন এবং সঠিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার মতো উপযুক্ত আর্থিক ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করা। প্রতিটি সম্ভাব্য ঝুঁকি কমানোর উপর জোর দিয়ে নিরাপত্তা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং এমন পরিবেশ তৈরি করা যেখানে সাংবাদিকরা কোনো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপ ছাড়াই কাজ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারের সমালোচনা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হচ্ছে। এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের যেসব ঘটনা ঘটছে, পরিষ্কারভাবে তা গণমাধ্যম ও বাকস্বাধীনতার জন্য মারাত্মক হুমকি।
তারা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার আসামির দণ্ড মওকুফ হয় অথবা দ্রুত জামিন হয়, ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাত থেকে লুটপাটকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে, হাজার-কোটি টাকা বিদেশে পাচারকারী সহজেই দেশ ছাড়তে পারে, কিন্তু ফেসবুকে সরকারবিরোধী কিংবা ক্ষমতাসীন সরকারের লোকজনের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যেন তার চাইতে বড় অপরাধ!
তারা বলেন, যে নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়েছে, সে আইন নিয়ে বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে— এ আইন কার জন্য করা হয়েছে? আইন তো তৈরি করা হয় সাধারণ জনগণের জন্য। এই আইন আসলে কার নিরাপত্তা দিচ্ছে? এ আইনে যারা বাদী হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন দলের কর্মী, এমপি, মন্ত্রী ও প্রশাসনের লোকজন। আর যারা আইনের শিকার হয়েছেন তারা সাংবাদিক, লেখক ও অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের সাহস গড়ে তোলেন একজন লেখক, সাহিত্য, অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক। তারা যেন মুক্তভাবে কথা বলতে পারে সেজন্য তাদের সমর্থন করুন। আর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একটি নিপীড়নমূলক আইন গণতন্ত্রের দেশে থাকতে পারে না।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘দেশের সংবিধানে বাকস্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ডিজিটাল অ্যাক্টসহ যেসব আইন হয়েছে, সেগুলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে যে বাকস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছি, তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক। এগুলো স্বাধীন সাংবাদিকতার পথকে সংকুচিত করেছে।’
তারা বলেন, সারা বিশ্ব দেখছে, এই দেশটি সাংবাদিক নিপীড়নকারী দেশ এবং গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে এমন একটি দেশ। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা চাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চাই। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রাষ্ট্রের জন্য, সরকারের জন্য এবং সুশাসনের জন্য দরকার।’
Mamunar Rashid Nomani, an editor of a newspaper of Barisal, has
been in jail for weeks after a local Ward councilor filed a case
against him and his friends in September 2020 under the DSA. He
was granted interim bail on September 29, 2020. He is yet to be
indicted or granted permanent bail, thus requiring him to appear
before the court regularly.