চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার প্রায় আড়াই বছর পটিয়া সার্কেল হিসেবে কাজ করেছেন। ওই সময়ে প্রতি সপ্তাহে দুই দিন দুই ঘণ্টা করে থানায় ডিউটি অফিসার হিসেবে তিনি কাজ করতেন। জানার চেষ্টা করতেন পুলিশি সেবায় ঘাটতি আছে কিনা বা সেবাপ্রত্যাশীরা সেবা পাচ্ছেন কিনা।
ডিউটি অফিসারের চেয়ারে বসা তারিক রহমানকে সেবাপ্রত্যাশীরা চিনতে না পারলেও সেবা পেতে বেগ পেতে হয়নি কাউকে। ওই মানবিক অফিসার তারিক রহমানকে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ছেড়ে যেতে হবে রাজশাহী। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের আদেশে তাকে বদলি করা হয়েছে।
তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে তারই ব্যাচের ড. আশিক মাহমুদকে। তিনি বিদেশে মিশন শেষ করে দেশে আসার পর তাকে পটিয়া সার্কেলে বদলি করা হয়েছে।
জানা গেছে, তারিক রহমান ২০১৪ সালে ৩৩তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডারে পুলিশে যোগদান করেন। পরে খুলনা, সাতক্ষীরা ও নরসিংদীর রায়পুরা সার্কেলে দায়িত্ব পালনের পর ২০২০ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে পটিয়া সার্কেলে যোগদান করেন। তার সময়ে পটিয়া বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার ক্লু উদঘাটন হয়েছে তারই কর্মদক্ষতায়। ২০২১ সালে পটিয়ায় নুর আলম হত্যার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতার করেছিলেন তিনি। পরবর্তীতে খুনি মোমিন ও নেজামকে গ্রেফতার করেন।
বেশ কয়েকটি ক্লু-লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করে বেশ প্রশংসিত হন এডিশনাল এসপি তারিক। এরপর আকিব হত্যা, সোনা ব্যবসায়ী বিমান ধর হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন ও আসামিদের গ্রেফতারও করেন।
২০২০ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত পটিয়া সার্কেলে দায়িত্বপালন তার নেতৃত্ব পরিচালিত সফল অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১১ লাখ ৭০ হাজার ইয়াবা, ১৪ হাজার ৩৩৯ লিটার মদ, ১৩৪.৩২০ কেজি গাঁজা, ২৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৩০৫টি কার্তুজ ও ৬৭টি দেশীয় অস্ত্র।
পটিয়া ও বোয়ালখালী উপজেলার দুইটি পৌর নির্বাচন এবং দুইটি ইউনিয়ন পরিষদে অবাধ-সুষ্ঠু এবং অনুষ্ঠিত পরিচ্ছন্ন নির্বাচনে স্থানীয় সর্বসাধারণের প্রশংসা অর্জন করেন। সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য ‘আইজিপি গুড সার্ভিসেস ব্যাজ ও বেশ কয়েকবার শ্রেষ্ঠ অতিরিক্ত পুলিশ হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছেন।
এ বিষয়ে এডিশনাল এসপি তারিক রহমান বলেন, পুরস্কার পাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করিনি। মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান পাওয়ার আশায় কাজ করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আকাঙ্ক্ষা ছিল পুলিশ হওয়ার। জনগণের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার ও সেবা দেওয়ার সুযোগ আছে পুলিশে। পুলিশের একজন গর্বিত অংশীদার হয়ে আজীবন মানুষের সেবা করে যেতে চেয়েছিলাম। এ কারণে বিসিএস পরীক্ষায় একমাত্র পছন্দ হিসেবে পুলিশ রেখেছিলাম। যেখানেই চাকরি করেছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আনুকূল্য পেয়েছি এবং প্রত্যাশার চেয়েও সাধারণ মানুষের আন্তরিক ভালোবাসা পেয়েছি। যতদিন চাকরি আছে, মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেটা নিশ্চিত করতে কাজ করবেন বলে তিনি অঙ্গীকার করেন।