খোলাশ গ্রামে খেলনা তৈরির ঐতিহ্য প্রায় ৬০ বছরের। শুরুটা ষাটের দশকে। খোলাশ গ্রামের তিন জন দিনমজুর কুরানু মোল্লা, আবুল হোসেন ও সুলতান ফকির কাজের খোঁজে নীলফামারীর সৈয়দপুরে যান। সেখানে তারা খেলনা কারখানায় কাজ নেন এবং দ্রুত সবাই পাকা কারিগর হয়ে ফিরে আসেন গ্রামে। নিজেরাই নানা ধরনের খেলনা তৈরি করতে শুরু করেন। তাদের তৈরি খেলনাগুলো সারা দেশে বাজার পায় এবং গ্রামীণ মেলা, উত্সব-তিথি-পার্বণে শিশুদের নজর কেড়ে নেয়। বাঁশের কাঠি ও মাঠির পাত্রে (খুড়ি) কাগজ লাগিয়ে তাতে রঙ দিয়ে তৈরি করেন মেলার বিশেষ আকর্ষণ টমটম বা ‘টরটরি গাড়ি’।
আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র—এই তিন মাস ছাড়া বছরের বাকি ৯ মাসই খোলাশ গ্রামে দিনরাত খটখট শব্দে খেলনা তৈরির কর্মযজ্ঞ চলে। বাড়ির উঠানে-আঙিনায় কারিগরদের খুলি-কাঠ, বাঁশ আর রংবেরঙের কাগজ দিয়ে টমটম গাড়ি বা টরটরি, কাঠের গাড়ি, চরকি, কাঠের পাখি, বেহালা, সারিন্দা, ঘিন্নিসহ হরেক খেলনা তৈরির ধুম পড়ে। আর বাড়ির ভেতরে নারী ও কিশোরীরা ঐসব খেলনায় রং লাগানো ও কাগজে আলপনা আঁকায় ব্যস্ত থাকেন। তবে বিক্রির ভরা মৌসুম হলো চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাস। কারণ, এই তিন মাসে সারা দেশে শত শত মেলা ও উত্সব বসে। সেইসঙ্গে সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহসহ দেশের অন্যান্য এলাকার মেলায় ও বাজারে খোলাশের খেলনা যায়।
ঐ গ্রামের কারিগর আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘করোনা হামাকোরোক করুণা দিয়্যা গ্যাছে। দুই বছর মেলা কর্যা পারিনি। এবার মেলার জন্যি খেলনা বানাচি। দুই বছরে ব্যাংক এবং স্হানীয় এনজিওদের কাছ থেকে ঋণ করা লাগিছে। প্রতি সপ্তাহে ৫ হাজার ট্যাকা কিস্তি দিই।’
৫৫ বছর বয়সি খেলনা নির্মাতা দেলোরা বেওয়া বলেন, খেলনা তৈরি করা অনেক নারীর পেশা হয়ে উঠেছে এবং তারা তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারেন।
উদ্যোক্তা লুত্ফর মোল্লা বলেন, ‘আমাদের আমদানি করা চাইনিজ খেলনার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়।’
খোলাশ গ্রামের ক্ষুদ্র কুটির শিল্প ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আয়তানূর ফকির বলেন, গ্রামের মানুষ খেলনা তৈরি করেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। কিন্তু করোনার কারণে মেলা বন্ধ থাকায় এখন ঋণের বোঝা চেপেছে কারিগরদের ঘাড়ে।
দুপচাঁচিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, খোলাশ গ্রামের শতাধিক পরিবার খেলনা গাড়িসহ বিভিন্ন ধরনের খেলনা তৈরি করে ব্যবসা করেন। তাদের মধ্যে যারা গরিব ,তাদের সহযোগিতা করা হয়।