সন্ধ্যা নদীর কোলে গড়ে ওঠা সবুজ-সতেজ একটি জনপদের নাম স্বরূপকাঠি। পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার এ অঞ্চলটি বিখ্যাত গাছের জন্য। এ যেন বৃক্ষের জনপদ। সমগ্র অঞ্চলজুড়ে এতটাই গাছগাছালির সমারোহ যে মাটিতে সূর্যের আলো পৌঁছানোই কষ্টকর। প্রকৃতিপ্রিয় মানুষগুলোর কাছে স্বরূপকাঠি যেন এক বোটানিক্যাল গার্ডেন।
গাছের ছোট্ট চারা-কলম থেকে শুরু করে ঘর-আসবাবপত্র তৈরির সব কাঠ পাওয়া যায় এখানে। শত শত নার্সারিতে ফুল-ফলের হাজার রকমের চারা উৎপাদন হয় এ অঞ্চলে। সেসব চারাগাছ পাইকারের হাত হয়ে চলে যায় ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত এলাকায়। যেসব গাছের চারা খুঁজে পাওয়া দুর্লভ, সেগুলোও এখানে পাওয়া যায় খুব সহজে। ঢাকার অফিস কিংবা আবাসিক ফ্ল্যাটের বারান্দায় যে সুন্দর ফুলের টব দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ চারা জন্ম হয়েছে স্বরূপকাঠিতে। এসব কারণে স্বরূপকাঠিকে বলা হয় গাছের নানাবাড়ি।
এখানকার কোথাও পতিত জমি খুঁজে পাওয়ার উপায় নেই। প্রচুর আমড়া, পেয়ারা, সুপারি আর নারকেল গাছ রয়েছে স্বরূপকাঠিতে। তাই ডাব-নারকেল, ঝাড়ুর শলা, ঝাড়ু, নারকেলের ছোবড়া ইত্যাদিও এখানে বিক্রি হয় পাইকারি দরে।
প্রতিদিনই এখানে বসে গাছের চারা কিংবা কাঠ বিক্রির পসরা। তবে সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দুদিন এখানে হাট বসে। সেদিন পাইকারি ক্রেতা ও বিক্রেতার সমারোহে পুরো জমজমাট থাকে স্বরূপকাঠি। শুধুই সমগ্র বরিশাল বিভাগ নয়, সেদিন দূরবর্তী অনেক জেলা থেকেই শত শত পাইকার গাছ কিনতে আসে এখানে। লক্ষাধিক টাকা লেনদেন হয় এই বিখ্যাত হাটে।
নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষ যে নদী ও নৌকার ওপর কতটা নির্ভরশীল, তা এখানে এলে খুব ভালোভাবে অনুধাবন করা যায়। নৌকা নেই, এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বিয়ে, বাজার, বাণিজ্য, পরিবহন, চলাচলসহ সব কাজেই নৌকার প্রাধান্য এখানে সবার আগে।
হাতে একটু সময় নিয়ে এই বৃক্ষসাম্রাজ্যে একবার ঘুরতে গেলে আরও দেখা যাবে নেছারাবাদ দরবার শরিফ, ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে সেই জলাবাড়ি জমিদার বাড়ি, আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগান, ভাসমান সবজি বাগান, ভাসমান চালের বাজার, আদমকাঠি আশ্রম, বিশাল আয়তনের আমড়া ও সুপারির একাধিক বাগান। ভৌগলিকভাবে স্বরূপকাঠির খুব সন্নিকটেই রয়েছে মাধব রাজার দুর্গাসাগর ও সান্টুর মসজিদ। বানারিপাড়ায় রয়েছে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের জন্মভিটে। সেখানে দর্শনার্থীদের উদ্দেশে শেরেবাংলার ব্যবহার্য আসবাবপত্র ও মালামাল দিয়ে সাজানো হয়েছে একটি জাদুঘর। এ ছাড়া দেখা যাবে ঐতিহ্যবাহী ফজলুল হক কলেজ, ভাসমান বাজারসহ অনেক কিছু।
যাতায়াত
ঢাকা সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে বাসযোগে সরাসরি পৌঁছানো যাবে স্বরূপকাঠি। ঢাকা সদরঘাট থেকে সরাসরি লঞ্চে করে যাওয়া যাবে স্বরূপকাঠি। এ ছাড়া সদরঘাট থেকে রাতের লঞ্চে বরিশাল হয়ে স্থানীয় বাহনে যাওয়া যাবে স্বরূপকাঠি। তাই স্বরূপকাঠির স্বরূপ চোখ বুলিয়ে নিন একবার। আপনাকে স্বাগত জানাবে সেখানকার স্নিগ্ধ প্রকৃতি।