খুলনায় নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার সমাজ ভিত্তিক মাছ চাষ শুরু
প্রকাশ: ৩ অক্টোবর, ২০২২, ৪:২৫ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
ফকির শহিদুল ইসলাম,খুলনা থেকেঃ
নারীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ডুমুরিয়া মৎস্য দপ্তরের উদ্যােগে উপজেলার কয়েকটি এলাকায় সমাজ ভিত্তিক মাছ চাষ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের সংগে সংশ্লিষ্ট অনাগ্রসর নারীরা নতুন করে আশার আলো দেখছেন।বুনছেন স্বপ্নের জাল।
উপজেলা মৎস্য অফিস ও নারী মাছ চাষীদের সংগে কথা বলে জানা গেছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘কমিউনিটি-বেইজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েট ফিশারিজ এ্যান্ড এ্যাকােয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদশ’ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর মে মাসে ডুমুরিয়া উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে মাছ চাষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনগ্রসর নারীদের প্রশিক্ষণের উদ্যােগ নেয়া হয়। ওই প্রশিক্ষণ উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের শােলগাতিয়া জেলে পাড়ার ১২ জন নারী ২ বার মােট ৪ দিন ধরে অংশ নেন। সেই প্রশিক্ষনের আলােকে মৎস্য অফিসের তত্ত্বাবধায়নে ওই ১২ জন নারীর সঙ্গে এলাকার আরও ১৩ জন পুরুষ কে নিয়ে ‘রুদাঘরা বাগদা চাষি সিবিও’ সমিতি গড়ে তােলা হয়। সমিতিভুক্ত প্রত্যক সদস্য মাসে ২’শ টাকা করে চাঁদা ও প্রশিক্ষণ থেকে পাওয়া সাড়ে ১২ হাজার টাকা নিয়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলার পর মােট ৪৫ হাজার টাকা জমা করেন। পরে জুন মাসে মাছ চাষের জন্যে দু’জনের কাছ থেকে বছরে ৭০ হাজার টাকা হারি চুক্তিতে ‘হরি নদী’র চরে ১ একর জমি লিজ নেন। তখন মৎস্য অফিস থেকে ওই সমিতিকে মাছ চাষের জন্য ২ লাখ ৭ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়। ততদিন লিজ নেয়া জমিটি মাছ চাষের জন্য তৈরি করে জুন মাসের ২০ তারিখে সেখানে সাড়ে ১৫ হাজার বাগদা ও ২০ হাজার ৮’শ গলদা চিংড়ির রেনু-সহ বিভিন্ন প্রকার সাদা মাছও ছাড়া হয়। সম্প্রতি ওই খামার থেকে ৩০ হাজার টাকার বাগদাও বিক্রি করা হয়ছে। নারীদের তত্ত্বাবধায়নে মাছ চাষের এ প্রকল্পটি দেখে এলাকাবাসীর মধ্য দারুণ সাড়া পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে মাছ চাষি স্বপা রানী বলেন, শােলগাতিয়া এলাকায় হাজারেরও বেশি চিংড়ি ঘের আছে। কিন্তুু মৎস্য অফিসের অনুপ্রেরণায় এই প্রথম আমরা এলাকার নারীরা ১টা ঘের করেছি। খুব আনন্দ লাগছে। সুমতি বিশ্বাস বলেন, এই মাছ চাষের জন্য ঘর থেকে একটু বের হতে পারছি। অনেক আশা নিয়ে মাছ চাষও শিখছি। কল্পনা বিশ্বাস বলেন, স্বামীর টাকায় হিসাব দিতে হয়, কিন্তু আমরা উপার্জন করলে কাউকে হিসাব না দিয়েই নিজের ইচ্ছামতাে কিছু সঞ্চয় বা খরচও করতে পারবাে। রুদাঘরা বাগদা চাষি সিবিও’র সভাপতি মুক্তা বিশ্বাস বলেন, উপজেলা মৎস্য অফিসারের সার্বিক সহায়তায় আমাদের মেয়েদের মাছ চাষ কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। আমাদের সকল লেন-দেন ব্যাংকের মাধ্যমে চলছে। আশা করছি এই সমিতির মাধ্যমে এলাকায় নারীরা নতুন স্বপ নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার মােঃ আবু বকর সিদ্দিক বলেন “নারীর সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যােগে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা’য় বাগদা চাষ প্রকল্পে ২ লাখ ৭ হাজার টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। ওখান মােট ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকা দেয়া হবে। আর উপজেলার ওড়াবুনিয়া’য় নারীদের গলদা চাষের আরও একটি সিবিও চালমান আছে। তাছাড়া শরাফপুরের আঁকড়া’য় নারীদের মাছের জাল বুনা ও ডুমুরিয়ার নলঘোনা’য় পেনে মাছ চাষ চলমান আছে। ছাড়াও আরও কয়েকটি সিবিও শীঘ্রই গঠন করা হবে। সিবিও গঠনের ক্ষেত্রে শতকরা ৫০ ভাগের বেশি নারীর অংশগ্রহণ ও দরিদ্র মৎস্যজীবীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।”
প্রকল্প পরিচালক সমীর সরকার বলেন “নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতকরন, নারীদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মুক্তির জন্য নারীর অংশগ্রহণ কমপক্ষে ৫০% করা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জলবায়ু সহনশীল প্রজাতির মাছ চাষে মৎস্যজীবী ও তাদের পরিবারকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।”
প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হাসনাত বলেন “প্রকল্পটি এফএও ফান্ড দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কাঠিয়ে উঠার জন্য চাষি ও মৎস্যজীবীদের দক্ষ করে তোলা হবে। আবহাওয়া ও জলবায়ু পূর্বাভাস নিয়েও কাজ করবে প্রকল্পটি।”
খুলনা জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল বলেন “ডুমুরিয়া ও দাকোপ উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মৎস্যজীবী ও মৎস্যচাষিদের সিবিও গঠনের মাধ্যমে তাদেরকে সংগঠিত করা হচ্ছে। তাদেরকে প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।”
সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আমাদের মেয়েরা মাছ চাষে এগিয়ে এসেছে, এটা খুবই শুভ ইঙ্গিত। ‘মাছ-ভাতে বাঙ্গালী’ এই শ্লোগানের মতাে প্রতিদিনই আমরা মাছ খাই। তাই মাছের উৎপাদন বাড়াতে পারলে দেশবাসীর চাহিদা যেমন মিটবে, তেমনি বৈদশিক মুদ্রাও অর্জিত হবে।