অন্য ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইন্সেস নিয়ে তা দিয়েই করা হচ্ছে পুরান ঢাকায় কেমিক্যালের ব্যবসা। ভবনের সামনের দিকে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্য সাজিয়ে রাখা হলেও পেছনের দিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। কেবল পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছেই এসব কেমিক্যাল বিক্রি করা হচ্ছে। আর বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জেনেও না জানার ভান করছেন।
জানা যায়, ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলী কেমিক্যাল গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের পর পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল সংক্রান্ত নতুন ট্রেড লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। আগের যে সকল কেমিক্যাল ব্যবসায়ী ছিলেন তাদের ট্রেড লাইসেন্স নবায়নও বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ নিমতলীর ঘটনার পর পুরান ঢাকায় বিভিন্ন সময় উল্লেখযোগ্য একাধিক অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের পর জানা গেছে, ওই সকল ভবনে কেমিক্যালের গোডাউন ছিল।
এমনকি আবাসিক ভবনে অগ্নিকািণ্ডের কারণ এবং এতে হতাহতের কারণ হিসেবেও কেমিক্যাল ও প্লাস্টিকের কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। যেখানে ১২ বছর ধরে কেমিক্যাল ব্যবসার অনুমোদনই দিচ্ছে না সিটি কর্পোরেশন, সেখানে কীভাবে এত বছর ধরে কেমিক্যাল ব্যবসা চলছে, গোডাউন গড়ে উঠছে? এর সঠিক উত্তর দিতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা।
তবে এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চরম অনিয়মের এসব তথ্য। দেখা যায়, অন্য ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে তা দিয়েই চালানো হচ্ছে কেমিক্যালের ব্যবসা। ভবনের সামনের দিকে প্লাস্টিকসহ অন্যান্য পণ্য সাজানো, পেছনের দিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল। শুধুমাত্র জানাশোনা ব্যবসায়ীদের কাছেই এসব কেমিক্যাল বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানলেও না জানার ভান করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, অসাধু এ সকল কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে ট্রেড লাইন্সেস প্রদানকারী সিটি কর্পোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় অতিঝুঁকিতে থাকা ১ হাজার ৯২৪ জন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী ও গোডাউনের তালিকা করে এদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে গঠিত টাস্কফোর্স সুপারিশ করলেও তা আদৌ সম্ভব হয়নি। তালিকা করা কেমিক্যাল গোডাউন যেন ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। আগুনের ছোঁয়া পেলেই অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় দোকানপাট, বাড়িঘর, মানুষজন। তাই এমন পরিস্থিতিতে পুরান ঢাকাবাসী শতভাগ অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
নিমতলী ট্র্যাজেডির পর সিটি কর্পোরেশন, শিল্প মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ বেশ কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। এই কমিটি পুরান ঢাকায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, এমন ১ হাজার ৯২৪ জন কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর তালিকা করে। এই তালিকা মন্ত্রিসভায়ও জমা দেয়া হয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) এক গবেষণায় উঠে এসেছে, পুরান ঢাকায় ২৫ হাজার কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এসবের মধ্যে ১৫ হাজার আছে খোদ বাসা-বাড়িতে। মাত্র আড়াই হাজার গোডাউনকে ট্রেড লাইসেন্স দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। বাকি ২২ হাজারের মতো গোডাউন অবৈধ। এসব গোডাউনে ২০০ ধরনের ক্ষতিকর ও ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের ব্যবসা চলছে।
আর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, দুই দশকে বাংলাদেশে শিল্পকারখানায় ২৬টির বেশি দুর্ঘটনায় দুই হাজারের মতো শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। আর গত ১১ বছরে শুধু পুরান ঢাকায় পৃথক ঘটনায় অন্তত দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। হতাহতের দিক থেকে সবচেয়ে ভয়াবহ ১৫টি অগ্নিকা-ের মধ্যে মাত্র ৩টি ঘটনার পর মামলা হয়েছে। এসব দুর্ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অগ্নিকা-ে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও দোষীদের চিহ্নিত করা গেলেও তারা সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে যায়। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলছে, পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউনের ৯৮ ভাগই অবৈধ।
বেশ কয়েকদিন পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার তাজমহল টাওয়ার, মাহুতটুলী, মিটফোর্ড সড়ক, শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী সড়ক, আরমানিয়ান স্ট্রিট ও চকবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ভবনের আন্ডারগ্রাউন্ডে ও ফার্স্ট ফ্লোরের সামনের দিকে প্লাস্টিকের বিভিন্ন পণ্য, বাচ্চাদের খেলনা গাড়িসহ হরক রকমের পণ্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে। পেছনের দিকে রয়েছে বস্তা ও ড্রাম ভর্তি কেমিক্যাল। লুকিয়ে রাখা এসব কেমিক্যাল যার-তার কাছে বিক্রি করেন না তারা। কেবল পরিচিত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
ব্যবসায়ী সেজে বেশ কয়েকজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, যে কোন ধরনের কেমিক্যালই দেয়া যাবে এবং চাহিদা অনুযায়ীও দেয়া যাবে। এসব গোডাউনে গ্লিসারিন, সোডিয়াম অ্যানহাইড্রোস, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, মিথাইল-ইথাইল কাইটন, থিনারসহ আরও অনেক ধরনের কেমিক্যাল বিক্রি হচ্ছে।
জানা যায়, কেমিক্যাল ব্যবসায়ীরা এখন ড্রামে করে কেমিক্যাল বহন করেন না। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে অন্য কোন পণ্যের ড্রামে করে রাতের আঁধারে কেমিক্যাল বহন করা হয়। তবে দুর্বলতার সুযোগে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানা পুলিশ কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিচ্ছে বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের ডিসি মোঃ জাফর হোসেন বলেন, সম্প্রতি কামালবাগে আগুনে ৬ হোটেল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় কেমিক্যালের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। এ ঘটনার পর সিটি কর্পোরেশনকে আমরা বলেছি অভিযান পরিচালনা করতে, আমরা তাদের পুলিশি সহায়তা দিব।
বেশ কয়েকদিন আগে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়ে একটি কারখানাকে জরিমানা ও মালামাল জব্দ করেছে। আমরা তাদের সহযোগিতা করেছি। আমরাও ডিএমপির ম্যাজিস্ট্রেট এনে অভিযান চালিয়েছি। এটি চলমান রয়েছে। তবে কোন থানা পুলিশ অসাধু কেমিক্যাল ব্যবসায়ীর সঙ্গে জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, রাসায়নিকের এক একটি ড্রাম এক হাজার বোমার চেয়েও বেশি শক্তিশালী, যা থেকে আগুনের সূত্রপাত হলে পুরান ঢাকার অধিকাংশ জায়গাই পুড়ে যেতে পারে। কারণ, এসব গুদামের কোনটাতেই অগ্নিনির্বাপকের তেমন ব্যবস্থা নেই। আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের কারখানা চালানো, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গুদাম করা সম্পূর্ণ অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ফায়ার সার্ভিস, সিটি কর্পোরেশন, থানা, বিস্ফোরক অধিদফতর, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ কমপক্ষে ছোট-বড় অন্তত নয়টি সরকারী দফতরের অনুমোদন নিতেই হয় কেমিক্যাল ব্যবসায়। সরকারের নিয়মনীতি মেনে আবাসিক এলাকায় এ ধরনের ব্যবসা করার কোন সুযোগই নেই। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পুরান ঢাকায় যুগ যুগ ধরে চলে আসছে বিপজ্জনক এ ব্যবসা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিব্যি রাসায়নিকের ব্যবসা চালানো হচ্ছে।
পুরান ঢাকার বাসিন্দারাও চাচ্ছেন, এরকম কেমিক্যাল গোডাউন না থাকুক। কিন্তু কে শুনে কার কথা। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী মহলই কেমিক্যাল ব্যবসা করছে। তারা থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই যুগ যুগ ধরে এই ব্যবসা করে আসছে।
এক সংস্থা দেখাচ্ছে অন্য সংস্থাকে ॥ তবে অভিনব পন্থায় ও লুকিয়ে যে সকল ব্যবসায়ী কেমিক্যালের ব্যবসা করছে, তাদের কারও বর্তমানে ব্যবসার অনুমোদন নেই। ১২ বছর ধরে সিটি করপোরেশন লাইন্সেস না দেয়ায় বর্তমানে সবাই অবৈধ ভাবেই ব্যবসা করছেন। তবুও এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা। বরং এক সংস্থা অন্য সংস্থাকে দেখাচ্ছে।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, নিমতলী ট্র্যাজেডির পর থেকে পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য নতুন করে ট্রেড লাইন্সেস দেয়া হচ্ছে না। আগের ব্যবসায়ীদের ট্রেড লাইন্সেস নবায়নও বন্ধ রাখা হয়েছে। এ সকল ব্যবসায়ীকে কেমিক্যাল পল্লীতে স্থানান্তর করা হলে, ব্যবসায়ীরা সেখানে গেলে তখন আবার নতুন করে লাইসেন্স দেয়া শুরু হবে। তবে নতুন করে ট্রেড লাইন্সেস না দেয়ায় ও আগেরগুলো নবায়ন বন্ধ রাখায় সিটি কর্পোরেশন বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে।
সিটি কর্পোরেশন ছাড়াও বিস্ফোরক পরিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস, আমদানি-রফতানিকারক কর্তৃপক্ষসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কেমিক্যাল ব্যবসার জন্য অনুমোদন দিয়ে থাকে। শুধু সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করলে হবে না। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কাজ শিল্প মন্ত্রণালয়ের জানিয়ে তিনি বলেন, তালিকা করে জমা দেয়া কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে শিল্প মন্ত্রণালয়কে বারবার বলে আসছি। কিন্তু এখনও সেটি হচ্ছে না। নতুন করে ট্রেড লাইন্সেস না দেয়ার পরও যে সকল অসাধু ব্যবসায়ী কেমিক্যালের ব্যবসা করছেন, তাদের বিষয়ে বিস্ফোরক পরিদপ্তর, শিল্প মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিবে।
এভাবে অসাধু কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে এক সংস্থা আরেক সংস্থাকে দোষারোপ করছে। বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহাঃ নায়েব আলীও দুষলেন শিল্প মন্ত্রণালয়কে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় যথাযথ জবাব দিতে পারবে। এ সংক্রান্ত একটি কমিটিও হয়েছে। সেই কমিটিও এর জবাব দিতে পারবে।
আবার শিল্প মন্ত্রণালয় দুষছে সিটি কর্পোরেশন, বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থাকে। কেমিক্যাল ব্যবসায়ীদের জন্য শ্যামপুর ও গাজীপুরে দুটি কেমিক্যাল পল্লী করা হচ্ছে। কেমিক্যাল পল্লীর কাজ জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও শেষ হয়নি। ডিসেম্বর মাসে এটির কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু এই দুটি কেমিক্যাল পল্লীতে ৫৪ জন করে মাত্র ১০৮ জন ব্যবসায়ীকে জায়গা দেয়ার সুযোগ হবে। অথচ পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ব্যবসায়ী রয়েছে কয়েক হাজার। আর ১০৮ জনের স্থান হলেও তাও যেতে রাজি হচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ৫০ বছর ধরে তিলে তিলে এই ব্যবসা গড়ে তুলেছেন তারা। এখান থেকে অন্যত্র গেলে কেমিক্যাল ব্যবসাই হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তাদের। তাই তারা যেতে চাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা বলেন, যে সকল ব্যবসায়ী আসতে চান, প্রথমে তাদের কেমিক্যাল পল্লীতে নেয়া হবে। তবে এই দুটি কেমিক্যাল পল্লীতে তাদের ক্ষণস্থায়ীভাবে রাখা হবে। সিরাজদিখানে ৩০০ একর জমিতে বৃহৎ আকারে আরেকটি কেমিক্যাল পল্লী হচ্ছে। এটি হয়ে গেলে শ্যামপুর ও গাজীপুর থেকে ব্যবসায়ীদের এখানে নিয়ে আসা হবে। নতুন এই কেমিক্যাল পল্লীতে ব্যবসায়ীদের জায়গা হয়েও থেকে যাবে। এটির কাজ মাত্র শুরু হয়েছে। ৪০ শতাংশ মাটি ভরাটের কাজ শেষ হয়েছে। আরও সময় লাগবে।
শতভাগ ঝুঁকিতে পুরান ঢাকাবাসী ॥ ফায়ার সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, প্রায় এক যুগে পুরান ঢাকায় অগ্নিকা-ে পুড়ে ছাই হয়ে কয়লা হয়েছে দুইশ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কোটি কোটি টাকার। তাই অতীতের বহু অগ্নিকা-ের ঘটনার প্রেক্ষিতে ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরান ঢাকাবাসী শতভাগ অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে।
জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, পুরান ঢাকায় বিভিন্ন সময়ে লাগা অগ্নিকা- নির্বাপণে গিয়ে দেখা গেছে, আবাসিক ভবনের নিচতলায় কেমিক্যালের গোডাউন, ওপরে বসবাস। এমন আগুনে ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হয়ে অনেকে মারা যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড অনুযায়ী একটি বহুতল ভবনে যা যা থাকার কথা, ভবনগুলোতে এর কিছুই নেই। ভবনের সবধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ভবন মালিকের হলেও তিনি তা করছেন না।
আবার ঝুঁকি জেনেও অনেক সচেতন নাগরিক পরিবার নিয়ে এসব ভবনে বসবাস করছেন। এ ছাড়া পুরান ঢাকা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এরকম একটি জায়গায় কেমিক্যালের মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেয়ায় পুরান ঢাকার বাসিন্দারা শতভাগ ঝুঁকিতে রয়েছে। এই এলাকায় ভবিষ্যতে নিমতলী ট্র্যাজেডির মতো একই পরিমাণ কিংবা এর চেয়েও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। পুুরান ঢাকাবাসীকে অগ্নিঝুঁকি থেকে মুক্ত করতে হলে আবাসিক এলাকায় ও ভবনের ভেতরে কেমিক্যাল গোডাউন না রাখা, অল্প ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়তে পারে এমন ভবন এখনই ভেঙ্গে ফেলা, যত সম্ভব রাস্তা প্রশস্ত করা, ফায়ার সার্ভিসের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করার পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা।