ইসলামের ইবাদতগুলোর মধ্যে কোরবানি অন্যতম। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলিমের উপর কোরবানি আবশ্যক। ধর্মীয় গুরুত্বের পাশাপাশি কোরবানির রয়েছে অর্থনৈতিক গুরুত্ব। কোরবানির পশু উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, পশু জবাই ও তৎপরবর্তী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে অর্থনীতির সংশ্লিষ্টতা আছে। প্রাণিসম্পদ, চামড়া শিল্প, প্রাণির খাদ্য উৎপাদন, লবণ উৎপাদন ও মসলা বাণিজ্য, পর্যটন শিল্প, হজ ব্যবস্থাপনা, পরিবহন খাতসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আরো কিছু ক্ষেত্রে কোরবানির ব্যাপ্তি রয়েছে। সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা থেকে আসে সরকারের বিপুল রাজস্ব। কোরবানিকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলো অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অর্থনৈতিক এই বিশাল কর্মযজ্ঞ নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা হয়নি।
আরবি ‘কুরবান’ শব্দটি ফারসি বা উর্দুতে ‘কোরবানি’ রূপে পরিচিত হয়েছে, যার অর্থ ত্যাগ, উৎসর্গ, নৈকট্যলাভ ইত্যাদি। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় কোরবানি হলো, জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১৩ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট জন্তু জবাই করা। কোরবানি এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা যায়।
মহান আল্লাহ সৃষ্টির ওপর তার নাম নেয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি যাতে আমি তাদের রিজিক হিসেবে যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মা‘বুদ একই মা‘বুদ, সুতরাং তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ করো এবং সুসংবাদ দাও বিনীতজনদের’ (সূরা হজ, আয়াত ৩৪)।
কোরবানি হলো হজরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সুন্নাত। এ বিধান কেয়ামত পর্যন্ত সব জাতি ও ভূখণ্ডের জন্য বলবৎ ছিল ও থাকবে। কোরবানি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘আর আমরা তাকে (ইসমাঈল আ:) মুক্ত করলাম এক মহান কোরবানির বিনিময়ে। এবং এটিকে (কোরবানির এ প্রথাটিকে) পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি’ (সূরা ছাফফাত-১০৭-১০৮)।
কোরবানি ইসলামের একটি ‘মহান নিদর্শন’ যা ‘সুন্নাতে ইবরাহিমী’ হিসেবে রাসূল সা: নিজে মদিনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং সাহাবিরাও নিয়মিতভাবে কোরবানি করেছেন।
কোরবানির অর্থনৈতিক তাৎপর্য
কোরবানির সাথে জড়িয়ে আছে নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। ঈদুল আজহা তথা কোরবানিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর গড়ে ৫০-৫৫ হাজার কোটি টাকার বেচা-বিক্রি হয়। এই কর্মকাণ্ডের অন্যতম হলো প্রাণী উৎপাদন। মুসলিম বিশ্বে কোরবানির দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, ২০২২ সালে কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও উট মিলিয়ে ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি প্রাণি প্রস্তুত ছিল। কোরবানি হয় ৯৯ লাখ ৫০ হাজার প্রাণী। একদশক আগেও চাহিদার প্রায় অর্ধেক আমদানি করত বাংলাদেশ। গত ৪ বছরে কোরবানির জন্য কোনো প্রাণী আমদানি করতে হয়নি। কোরবানির প্রাণীর চাহিদা পূরণে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কোরবানির প্রাণীর চাহিদা পূরণে গড়ে উঠেছে অসংখ্য খামার। ঈদ সামনে রেখে খামারিরা প্রস্তুতি নেন। সারা দেশে খামারিসহ পশু পালন কার্যক্রমের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ২ কোটি মানুষ জড়িত। সংবাদপত্রের সূত্রে জানা যায়, দেশে খামারের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। কোরবানির প্রাণী উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণ খাদ্যের চাহিদা পূরণে ফিড শিল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া কোরবানির মৌসুমে খড়, ঘাস, গাছের পাতা ও ভুসি ইত্যাদি খাদ্যের ব্যবসা বাজারে ও শহরের অলি-গলিতে জমে উঠে।
প্রাণি বাজারজাতকরণের সাথে অনেক পক্ষ জড়িত। কৃষক, খামারি, ব্যবসায়ী, হাট কর্তৃপক্ষ, যানবাহন, শ্রমিকসহ নানা পক্ষ এই বিপণন প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়। কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে সারা দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ জড়িত, যারা খামারিসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কোরবানির প্রাণী ক্রয় করে বড় বড় হাঁটগুলোতে বিক্রি করে। সর্বোপরি বিভিন্ন স্তরে অসংখ্য ব্যবসায়ীর মাধ্যমে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছে যায় কোরবানির প্রাণিগুলো।
প্রতি বছর পুরনো হাটের পাশাপাশি কোরবানি উপলক্ষে গড়ে ওঠে অনেক নতুন হাট। শুধু ঢাকা শহরেই দুই সিটি করপোরেশনে প্রায় ৪০টি হাট বসে। পরিচালিত হয় অর্থনৈতিক বিশাল কার্যক্রম। কোরবানির প্রাণী অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২১ সালে ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৭৯টি কোরবানির প্রাণী অনলাইনে বিক্রি হয়, যার আর্থিক মূল্য ছিল ২,৭৩৫ কোটি টাকা। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে অনলাইনে ক্রয়-বিক্রয় ৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোরবানি উপলক্ষে দুই ধরনের পরিবহনের চাহিদা বেড়ে যায়। তা হলো কোরবানির প্রাণী পরিবহনের জন্য ও ঈদে ঘরমুখো মানুষের জন্য। মানুষ গ্রাম থেকে শহরে প্রাণী আনা-নেয়ার জন্য ট্রাক, পিক-আপসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের ব্যবহার বেড়ে যায়। কোরবানি উপলক্ষে এই পরিবহনের সাথে জড়িত লোকদের আয় অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া কোরবানি উপলক্ষে শহরের মানুষ গ্রামে যাওয়ার প্রবণতা অন্য সময়ের চেয়ে এমনকি ঈদুল ফিতরের চেয়ে অধিক পরিলক্ষিত হয়। বিডি নিউজ ২৪.ডট কম-এর তথ্য মতে, এ সময় পরিবহন খাতে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বাড়তি ব্যবসা বা আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে।
শহরকেন্দ্রিক কোরবানির প্রাণী জবাই করা ও গোশত কাটাকাটির সাথে অনেক মানুষ জড়িত। এ সময় দক্ষ কসাইদের পাশাপাশি অনেক অগণিত মৌসুমি কসাই এ উপলক্ষে গ্রাম থেকে শহরে আসেন। গড়ে ২-৩ জনের একটি গ্রুপ সারা দিনে দক্ষতাভেদে ৫-৭টি গরু কাটাকাটি করে থাকেন। প্রতিটি গরু জবাই থেকে শুরু করে গোশত কেটে প্রস্তুত করে দেয়ার জন্য গড়ে ৮-১০ হাজার টাকা লাগে।
বিটিএ এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে সারা বছর যত চামড়া বাজারে আসে তার প্রায় ৫০% শুধু কোরবানি থেকে আসে। প্রায় ৬ লাখ মানুষ চামড়াশিল্পে কর্মরত রয়েছে। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোরবানির প্রাণীর চামড়া এই শিল্পে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। এই চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের সব ধরনের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা রয়েছে। বিশ্বে প্রথম শ্রেণীর চামড়া ও চামড়াজাত প্রস্তুতকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য। এ শিল্পের অধীনে আছে ট্যানারিসহ, অসংখ্য জুতা, ব্যাগ, বেল্ট ও সুদর্শন সরঞ্জামাদি তৈরির কারখানা। কোরবানির প্রাণীর চামড়া সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, বিক্রয় ও ব্যবহার উপলক্ষে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষের ও প্রতিষ্ঠানের কর্মযোজনা সৃষ্টি হয়। কোরবানির ওপর ভর করেই টিকে আছে উজ্জ্বল সম্ভাবনার এ খাতটি।
গোশত আর চামড়ার পাশাপাশি কোরবানির প্রাণীর নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, রক্ত ও চর্বি ইত্যাদির বাণিজ্যিক ব্যবহার দিন দিন বেড়ে চলেছে। প্রাণীর এসব অঙ্গ ওষুধ শিল্পসহ অন্যান্য শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়। সার্বিকভাবে এসব অঙ্গের রফতানি বাণিজ্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০০০ কোটি টাকায়।
কোরবানিকেন্দ্রিক সংরক্ষণের জন্য আমাদের প্রতি বছর ১ লাখ টন লবণ প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের প্রায় ১৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লবণ শিল্পের সাথে জড়িত। এ সময় মসলা বাণিজ্যও উল্লেখযোগ্য।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদের মতে, গোশত রান্না ও চামড়া সংরক্ষণ কাজে ব্যবহৃত মসলা বাবদ এই সময়ে প্রতি বছর প্রায় ৪০০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়ে থাকে। প্রতি বছর দেশে ২২ লাখ টন পেঁয়াজ, ৫ লাখ টন রসুন আর ৩ লাখ টন আদার চাহিদা থাকে। এর উল্লেখযোগ্য অংশই ব্যবহার হয় কোরবানিতে।
কোরবানির গোশত সংরক্ষণে বছরের যেকোনো সময়ের তুলনায় রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ বিক্রির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দেশে বছরে ১৪ লাখ ফ্রিজের চাহিদা আছে। বছরের ৩০ শতাংশ ফ্রিজই বিক্রি হয় কোরবানি ঈদে।
কোরবানির সময়ে কামারশালাগুলোতেও বাণিজ্যিক তৎপরতা অনেক বৃদ্ধি পায়। কোরবানির প্রাণী জবাই ও রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় ছুরি-কাঁচি-বঁটি-দা’র ব্যবসা জমে উঠে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, কোরবানিতে এসব পণ্যের বাজার ১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম উপাদান গরু বা ছাগল পালন। তারা কোরবানির সময় সেগুলো বিক্রি করে থাকে। খামারের বাইরে উল্লেখযোগ্য কোরবানির প্রাণীই কেনা হয় গরিবের কাছ থেকে। এতে গরিবের অর্থনৈতিক চাকা সচল হয়। অন্য দিকে ইসলামের বিধান অনুযায়ী, চামড়া বিক্রি করা হলে লব্ধ অর্থ পুরোটাই জাকাতের মতো দরিদ্র-অসহায়দের দান করে দিতে হয়।
কোরবানির ঈদের সময় দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রসহ স্থানীয়ভাবেও পর্যটন স্পটগুলো ভরে ওঠে। পর্যটন স্পটগুলোর এন্ট্রি, পরিবহন, খাওয়া, রাইড ফিসহ বিভিন্নভাবে মানুষ প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। এই উৎসবে পর্যটন বাবদ ব্যয় হয় ৪০০০ কোটি টাকা। আরো কিছু ক্ষেত্র আছে যার অর্থ মূল্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি।
সাধারণত অর্থনীতিতে চাহিদার সাথে জোগানের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। চাহিদা যখন বেশি থাকে তখন সে অর্থনীতির উৎপাদন ক্ষমতা বা উৎপাদনের প্রবণতা থাকে বেশি। বিভিন্নভাবে ভোক্তার কাছে নগদ অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের চাহিদা অনেক গুণ বেড়ে যায়। ফলে অর্থনীতিতে উৎপাদন প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
মানুষ সাধারণত ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ সঞ্চয় করে। বিনিয়োগের সাথে সম্পর্ক থাকে মানুষের আয়ের; আয় বেশি হলে সঞ্চয় বেশি, সঞ্চয় বেশি হলে বিনিয়োগ বেশি হবে। মানুষের হাতে যখন অর্থ আসে তখন ব্যয়ের অতিরিক্ত অর্থ তারা সাধারণত সঞ্চয় করে থাকে। মোট বিনিয়োগে বেসরকারি বিনিয়োগের অবদানই বেশি। তা হয়তো সে নিজে বিনিয়োগ করে অথবা ব্যাংকে রাখে। ব্যাংক সেই অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে।
কোরবানিকেন্দ্রিক সব কার্যক্রমই জিডিপিতে অবদান রাখছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২৩ অনুসারে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে জিডিপিতে শুধু প্রাণী খামারের অবদান ছিল ১.৭৬%। এ ছাড়া জিডিপিতে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প খাতের অবদানও উল্লেখযোগ্য।
বিশ্বে চামড়া খাতে রফতানির শতকরা দুই ভাগ হচ্ছে বাংলাদেশের। চামড়াজাত সামগ্রী রফতানি করে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রফতানি আয়ে এ খাতের অবদান ২.৩৯ শতাংশ তৈরী পোশাক শিল্পের পর রফতানি আয়ে এ খাতের অবস্থান দ্বিতীয়। সরকার চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী রফতানি করে ২০২৪ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এ খাত থেকে ২০১১-১২ সালের ৩৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আয় ২০২১-২২ সালে প্রায় চারগুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,২৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
কোরবানিকেন্দ্রিক সব অর্থনৈতিক কার্যক্রম সরকারের রাজস্বে অবদান রাখে। প্রাণীর হাট ইজারা দিয়ে শুধু ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনেরই আয় হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া মসলা আমদানিতে লবণ বাণিজ্যে, প্রাণী খাদ্য ক্রয়-বিক্রয়ে ভ্যাট-ট্যাক্স আদায়ের মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়।
আমরা প্রতি বছর প্রাণিসম্পদ খাত থেকে আমিষ চাহিদার ৪৪ শতাংশ পাই যার ৫২ শতাংশই আসে রেড মিট থেকে। গত এক দশকে গোশতের উৎপাদন ৪.৬৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে গোশতের মোট উৎপাদন ছিল ৯২.৬৫ টন। যার বেশির ভাগই আসে কোরবানির পশু থেকে।
কোরবানিকেন্দ্রিক সব অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলো বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, কোরবানির সাথে বেশ কয়েকটি শিল্প জড়িত। প্রথমত চামড়া শিল্প, দ্বিতীয়ত মসলা শিল্প, তৃতীয়ত লবণ শিল্প, চতুর্থত প্রাণিখাদ্য শিল্প ইত্যাদিসহ আরো কিছু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে উঠেছে।
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে হলে প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের প্রয়োজন টেকসই পরিকল্পনা। কোরবানিসংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কার্যক্রমগুলোতে রয়েছে নানা দুর্বলতা ও অনিয়ম। সার্বিক দিক বিবেচনা করে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি দৃষ্টি দেয়া দরকার: চামড়া পাচার বন্ধ করতে হবে এবং স্থানীয় বাজারে চামড়ার মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। চামড়া সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সহজ শর্তে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের উদ্যোগ নিতে হবে যাতে বিদ্যমান খামারগুলোর পাশাপাশি অনেক নতুন উদ্যোক্তা গড়ে তোলা সম্ভব হয়। পর্যাপ্ত ও দক্ষ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে ব্যাপক ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে খামার কার্যক্রমকে একটি শক্তিশালী শিল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিবেশ দূষণের বিষয়টির সমাধান করে বায়োগ্যাস ও জৈব সার উৎপাদন সম্ভব। এ দুটি শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হলো গরুর বর্জ্য বা গোবর। পরিকল্পিতভাবে বায়োগ্যাস উৎপাদনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুতের ওপর কিছুটা হলেও চাপ কমানো সম্ভব।