হঠাৎই আলোচনায় আরাভ খান ওরফে রবিউল ইসলাম ওরফে সোহাগ মোল্লা। দুবাইয়ে তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে সাকিব আল হাসানসহ তারকাদের ছুটে যাওয়ার খবর এখন পুরনো। আরাভ যে পুলিশ কর্মকর্তা খুনের মামলার পলাতক আসামি সামনে এসেছে তাও। যদিও দুবাইয়ে তার বিপুল অর্থের মালিক আসলে কে তা নিয়ে রয়ে গেছে রহস্য। চলছে নানা গুঞ্জন।
দুবাইয়ের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আরাভ খানই কোটালীপাড়ার আশুতিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম সোহাগ মোল্লা। তার উত্থানের গল্প বিস্ময়কর। ৩৫ বছর বয়সী আরাভ তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড়। তার বাবা জীবিকার তাগিদে যুবক বয়সে কোটালীপাড়ায় এসেছিলেন। সেখানে সিলভারের হাঁড়ি-পাতিল কাঁধে বহন করে ফেরি করতেন। সংসারের অভাব দেখে ঢাকায় চলে আসে আরাভ।
এরপর মূলত: উচ্চবিত্ত শ্রেণির নারীদের টার্গেট করতে থাকে সে। বিয়ে করেন একাধিক। ৫-৭ জন নারী এলাকায় তার স্ত্রী দাবি করেছিলেন। এ নিয়ে নানা সময়ে সালিশও হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে আরাভ নিজের টাকায় গ্রামে একটি পাকা ওয়ালের টিনশেড বাড়ি করেন। সেখানে আরাভের একমাত্র ছেলেকে নিয়ে তার বাবা-মা বসবাস করতেন। গ্রামের বাড়ি গেলে বড় অংকের অর্থ খরচ করে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করতেন। দুবাইয়ে তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের আগেই একমাত্র ছেলে, বাবা-মা এবং দুই বোনকে সেখানে নিয়ে যায়। বর্তমানে তাদের গ্রামের বাড়ি ফাঁকা। আরাভের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় তার মা এবং দুই বোনকেও আসামি করা হয়
এ বিষয়ে কথা হয় হিরণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাজহারুল আলম পান্নার সঙ্গে। তিনি বলেন, আরাভ ওরফে সোহাগের ১৫টিরও বেশি বিয়ের তথ্য আমরা জেনেছি। স্থানীয়ভাবে প্রায় ৫ থেকে ৭ জন নারী বিয়ের অভিযোগ এনে নালিশ করলে সেটা আমি মীমাংসা করে দেই। সম্প্রতি ওমরাহ্ হজ করতে গেলে সেখানে এলাকার লোকজন আমাকে সংবর্ধনা দিতে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আরাভও এসেছিলেন। এরপর তিনি সেখানে প্রায় আধাঘণ্টার মতো অবস্থান করে চলে যান। দুবাইতে তার স্বর্ণের দোকান উদ্বোধনের আগে আমাকে ফোন দিয়ে সেখানে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়। অনুষ্ঠানে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানসহ অন্য তারকারা উপস্থিত থাকবেন বলে আমার জন্য দুবাই ভ্রমণের টিকেট পাঠাতে চাইলে আমি অস্বীকৃতি জানাই। কারণ যে ছেলের বৈধ কোনো উপার্জন নেই সে দুবাইয়ের মতো স্থানে কীভাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে স্বর্ণের দোকান দিয়েছে। কোনোভাবেই হিসাব মিলছে না। পুলিশ সদস্য হত্যা মামলাসহ স্থানীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা এবং অভিযোগ রয়েছে। জনপ্রতিনিধি হওয়ার কারণে আরাভকে বরাবরই এড়িয়ে চলতাম।
তিনি বলেন, সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে একের পর এক সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরে তার বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- বাবা-মা, ছেলে এবং দুই বোনকে দুবাই নিয়ে গেছেন। এর কিছুদিন আগে আমার স্ত্রীর সঙ্গে ওর মায়ের কথা হয়। এ সময় তিনি জানান, আমরা বিদেশ চলে যাবো। ছেলের কাছে দুবাই যাবো। এর কিছুদিন পর দেখি ফাঁকা বাড়ি। কেউ নেই। সম্ভবত তারা ছেলের কাছেই আছেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময় আরাভ এলাকায় এসেছিলেন। এরপর আর তিনি বাড়ি আসেননি।
পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন ইমরান খানকে ২০১৮ সালে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। সেই হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম আপন ওরফে আরাভ খান। এ ঘটনায় তার ভাই ডিএমপি’র বনানী থানায় ২০১৮ সালের ১০ই জুলাই একটি মামলা করেন। ওই মামলায় ২০১৯ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। মামলার এজাহার অনুযায়ী আরাভের আসল নাম রবিউল ইসলাম আপন ওরফে সোহাগ ওরফে হৃদয়। আরাভ অবশ্য এক ফেসবুক লাইভে এ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।