সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা এখন প্লাস্টিকসহ ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব। এতে সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র্যও পড়ছে হুমকির মুখে।
বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে পটুয়াখালী জেলার সর্বদক্ষিণে রয়েছে অফুরন্ত সৌন্দর্যের সৈকত কুয়াকাটা। সৈকতটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটার। আশির দশক থেকে দক্ষিণাঞ্চলের সম্ভাবনাময় ও দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর সৈকতটির কদর বাড়তে থাকে ক্রমশ। তখন থেকেই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ছুটে আসছেন কুয়াকাটা। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে ধীরে ধীরে ভ্রমণপিপাসুদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছে সৈকতটি। একই স্থানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার এটিই দেশের একমাত্র সমুদ্রসৈকত। তাই সব ঋতুতেই পর্যটকে মুখর থাকে।
সৈকতটির বিভিন্ন পয়েন্টে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পলিথিন, পানির খালি বোতল, চিপসের প্যাকেট। এতে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত ভ্রমণপিপাসুরা সৈকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তাঁরা সৈকতের সৌন্দর্য ও পরিবেশ বিনষ্ট এবং জীববৈচিত্র্যও হুমকির আশঙ্কা করছেন।
ঢাকার কলাবাগান থেকে আসা পর্যটক আফরোজা শিরিন বলেন, ‘আমরা এ সৈকতে এসেছি সুন্দর পরিবেশে ক’টা দিন কাটাতে। কিন্তু সৈকতের নোংরা পরিবেশ এবং অব্যবস্থাপনা দেখে খুই খারাপ লেগেছে। দুর্গন্ধও আসছে। এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন এবং সৈকত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া প্রয়োজন।’
ঢাকার রামপুরা থেকে আসা মো. আমিনুল ইসলাম আমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ায় সহজেই সপরিবারে চলে এলাম কুয়াকাটায় ঘুরতে। খুবই ভালো লাগছে। কিন্তু সৈকতজুড়ে নোংরা ও ময়লা-আবর্জনা দেখে খুবই খারাপ লেগেছে।’
কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (টোয়াক) সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, ‘সৈকতটি পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব সবার। কিন্তু আমরা অসচেতন হয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে চলছি। এখানকার ব্যবসায়ী, পর্যটক সবাই নির্দিষ্ট স্থানে পলিথিন, প্লাস্টিকসহ ময়লা-আবর্জনা না ফেলে সৈকতের যত্রতত্র ফেলছে।
পৌরমেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, এ পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা কর্মী মাত্র ৩০ জন। এর মধ্যে ১০ জন নিয়োজিত সৈকত পরিস্কারের জন্য। কিন্তু শুক্র ও শনিবার কুয়াকাটায় পর্যটক আসেন কয়েক হাজার। সেখানে ১০ জন দিয়ে বিপুল পরিমাণ আবর্জনা অপসারণ সম্ভব নয়। সবাই সচেতন হলে সৈকতের এ অবস্থা থাকবে না।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত সুপার আব্দুল খালেক জানান, সৈকতে ময়লা-আবর্জনা ফেলা সম্পূূর্ণ নিষেধ এবং বিষয়টি মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়। ট্যুরিস্ট পুলিশের উদ্যোগে প্রতি সপ্তাহে একবার সৈকতটি পরিস্কার করা হয়। কিন্তু স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের অসচেতনতার কারণে সৈকতটি ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায়।