কিডনি রোগীরা ভোগান্তিতে শেবাচিমে ১০ ডায়ালাইসিস মেশিন প্যাকেটবন্দি
প্রকাশ: ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:০৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে কিডনি রোগীরা ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসক ও নার্সরাও সেবা দিতে বিপাকে পড়ছেন। অথচ এক মাসেরও অধিক সময় ধরে ১০টি নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন প্যাকেটবন্দি হয়ে আছে। স্বতন্ত্র নেফ্রোলজি বিভাগ (কিডনি ওয়ার্ড) না থাকায় এবং স্থান সংকটে মেশিনগুলো বসানো যাচ্ছে না। এতে রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসক ও নার্সদের দাবি, অবিলম্বে আলাদা স্থানে নেফ্রোলজি বিভাগ চালু করা হোক।
শেবাচিমে কিডনি রোগীদের নামমাত্র ইউরোলজি ও নেফ্রোলজি বিভাগ (কিডনি বিভাগ) থাকলেও স্বতন্ত্র ওয়ার্ড নেই। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হাসপাতালের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে কিডনি রোগীদের ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চালু করা হয়। ২০০৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুটি হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন, একটি ডিজিটাল রেডিওলজি (ডিআর) মেশিন, একটি পানি শোধন মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়। কিন্তু স্থান সংকটে কর্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চালুই করতে পারেনি। এরপর ২০১৬ সালে হিমো ডায়ালাইসিস মেশিন চালুর উদ্যোগ নিলেও মেশিনগুলো অকেজো হয়ে যাওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালের ১২ মে হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মেডিসিন ব্লকে নেফ্রোলজি বিভাগ নতুন করে যাত্রা শুরু করে। এক কোটি ৩৮ লাখ টাকার দামের ১০টি জাপানি ডায়ালাইসিস মেশিন বসানো হয়। এর সঙ্গে পৃথক খরচে পাঁচটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, অটোমেটিক ডাইলাইজার রিফ্রেসর মেশিন ও ১০টি ডায়ালাইসিস শয্যা স্থাপন করা হয়। এরপর প্রতিদিন ১০টি মেশিনে ২০ জনকে ডায়ালাইসিস সেবা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে ১০ গুণ বেশি রোগী ডায়ালাইসিসের জন্য প্রতিদিন আবেদন করছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চাহিদার অনুকূলে এক মাসেরও অধিক সময় আগে আরও ১০টি ডায়ালাইসিস মেশিনসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়েছে ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর (সিএমআইচডি)। কিন্তু স্থান সংকটে তা প্যাকেটবন্দি অবস্থাতেই রয়ে গেছে। এ কারণে বিভাগের চিকিৎসক ও নার্সদের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
কিডনি রোগীর স্বজন আরাফাত হোসেন জানান, সরকারি হাসপাতালে কম খরচে ডায়ালাইসিস করাতে দুই-তিন দিনেও সিরিয়াল পাওয়া যায় না। আমরা গরিব মানুষ। বেসরকারিভাবে ডায়ালাইসিস করানো সম্ভব নয়। তাই রোগী নিয়ে চরম ভোগান্তিতে রয়েছি। নেফ্রোলজি বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স বিউটি বেগম বলেন, এখানে ডায়ালাইসিস সেবা ৪০০ টাকায় দেওয়া হয়। আর ছয় মাসের প্যাকেজে ডায়ালাইসিস সেবা পেতে ২০ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। খরচ কম হওয়ায় এখানে ডায়ালাইসিস সেবার চাহিদা ১০ গুণ বেড়ে গেছে। এছাড়া স্বতন্ত্র ওয়ার্ড না থাকায় কাজ করতেও চরম বেগ পেতে হয়।
স্থান সংকটের কথা স্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন ভবনের মেডিসিন বিভাগে ডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রম স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে ডায়ালাইসিস মেশিনের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি স্বতন্ত্র কিডনি ওয়ার্ড চালু করা হবে। এর সুফল খুব শিগগিরই ভোগ করতে পারবেন রোগীরা।
নেফ্রোলজি বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী রুমি বলেন, এখানে অন্তত ১০০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে ৫০ শয্যার ডায়ালাইসিস ইউনিট চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। ১০টি নতুন মেশিন পেলেও স্থান সংকটে সেগুলো চালু করতে পারিনি। এখানে নেফ্রোলজি বিভাগের স্বতন্ত্র ওয়ার্ড নেই। মেডিসিন বিভাগের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কিডনি রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নতুন মেডিসিন বিভাগে নেফ্রোলজি বিভাগ চালুর কথা রয়েছে। এজন্য ভবনটির অবকাঠামোগত পরিবর্তন ও বর্ধিতকরণ প্রয়োজন।