পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় এক কলেজছাত্রীকে প্রকাশ্যে মারধর ও বসতঘরে ভাঙচুর শেষে ‘বিবস্ত্র করে’ তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মালয়েশিয়া প্রবাসী সাবেক স্বামী ও তাঁর লোকজনের বিরুদ্ধে। মেয়েকে রক্ষা করতে গেলে তাঁর মাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের মারধর করা হয়েছে। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ দুই ঘণ্টা পর ছাত্রীকে সাবেক স্বামীর বসতঘর থেকে উদ্ধার করে।
এ ঘটনার দুই দিন পার হলেও মামলা নেয়নি পুলিশ। মারধরে আহত মা খোর্শেদা বেগমকে (৫০) স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেপে ভর্তি করেন। দুই দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
পারিবারিক সূত্র ও কলেজছাত্রী আজ সোমবার জানান, শহরের মহিউদ্দিন আহমেদ মহিলা ডিগ্রি কলেজের স্নাতকের ছাত্রীর সঙ্গে অভিযুক্ত প্রবাসীর বিয়ে হয় ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর। বিয়ের পর থেকেই তাঁদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। তুচ্ছ ঘটনায় স্বামী নির্যাতন চালাতেন বলে অভিযোগ ওঠে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী ২০১৯ সালে তাঁকে ডিভোর্স দেন। এতে স্বামী ক্ষুব্ধ হয়ে মালয়েশিয়ায় থাকাকালেই ফোনে হুমকি দিতেন।
দেশে এসে ছাত্রীর বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলাও করেন, যা বিচারাধীন। এরই মধ্যে ২০২০ সালে সাবেক স্বামীর অব্যাহত হুমকির মুখে ভুক্তভোগী মঠবাড়িয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
ভুক্তভোগী ও তাঁর পরিবারের অভিযোগ, গতকাল রোববার সকালে সাবেক স্বামী মালয়েশিয়া থেকে সরাসরি ছাত্রীর বাড়িতে ১৮-২০ জন নিয়ে হাজির হন। এ সময় ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে টেনেহিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে নেন।
ছাত্রীর অভিযোগ, তাঁকে বাড়িতে নিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মোবাইল ফোনে অশ্লীল দৃশ্য ধারণ করেছে। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে দুই ঘণ্টা পর সাবেক স্বামীর বসতঘর থেকে ছাত্রীকে উদ্ধার করে।
বেতমোর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন কলেজছাত্রীকে বিবস্ত্র করে অজ্ঞান অবস্থায় মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি গাড়ি থামাতে বললেও তাঁরা দ্রুতগতিতে চলে যান।
ভুক্তভোগীর মা খোর্শেদা বেগম জানান, রোববার সকালে নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ সময় মেয়ের সাবেক স্বামী দলবলসহ এসে মারধর করে মেয়েকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যান। এর প্রতিবাদ করলে তাঁকেসহ পরিবারের সদস্যদের মারধর করেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত প্রবাসী জানান, বসতঘর ভাঙচুর ও ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে তুলে নেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়। কলেজছাত্রী তাঁর স্ত্রী। মালয়েশিয়া থেকে তাঁর আসার খবর পেয়ে পালিয়ে যাবে ভেবে তাঁকে গাড়িতে করে বাড়ি নিয়ে যান।
মঠবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করে পুলিশ। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ বিষয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সাবেক স্বামীর কাছ থেকে ছাত্রীর ব্যবহূত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে।