কবিতায় ‘দাগ সাহিত্য পুরস্কার’ পাওয়ায় সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক কবি আমিনুল ইসলামকে ফ্রেন্ডস ফর লাইফ সমবায় সমিতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ২:৪৮ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
মামুনুর রশীদ নোমানী :
সাহিত্যের ছোটকাগজ দাগ আয়োজিত ‘দাগ সাহিত্য সম্মাননা’ পেলেন সমবায় অধিদপ্তরের রেজিষ্টার কবি আমিনুল ইসলাম। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদান রাখায় তাকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। ৯ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভিআইপি হলে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এদিকে অনুষ্ঠানে ৭ গুণী ব্যক্তিকে ‘দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮’ প্রদান করা হয়। সবশেষে অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ৭১ জন কবি কবিতা পাঠ করেন।
অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত ছিলো।কবিতা পড়তে আগ্রহীরা অনুষ্ঠানস্থলে নাম নিবন্ধন করেন। এ বিষয়ে আয়োজক মিজানুর রহমান বেলাল বলেন, কবি আমিনুল ইসলামকে সম্মাননা দিতে পেরে আমরা গর্বিত। তিনি একজন প্রতিভাবান সাহিত্যিক।তার কবিতা অসাধারন। সহজ সরল ভাষায় তিনি কবিতা লিখেন।
কবি আমিনুল ইসলাম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করে বলেন,
৯.১২.২০১৯ সোমবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘দাগ সাহিত্য পুরস্কার -২০১৮’ দেয়া হলো। ঘোষণার অনেকদিন পর। কথাসাহিত্যে আনিসুল হক, কবিতায় আমিনুল ইসলাম, ছোটগল্পে নূরকামরুন নাহার এবং তরুণ কবি হিসেবে তুষার কবির।
কিন্তু কি হবে এই পুরস্কার দিয়ে? কাজী নজরুল ইসলাম সুস্থাবস্থায়, জীবনানন্দ দাশ জীবদ্দশায় কোনো পুরস্কার পাননি; জসীমউদদীন বাংলা একাডেমি পুরষ্কার নিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিলেন। অথচ বাংলা সাহিত্যে ইনারাই রাজত্ব করছেন। অন্যদিকে বাংলা একাডেমির বোর্ডের দিকে তাকালে দেখা যায় পুরস্কারপ্রাপ্ত অজস্র নাম— যাদের কোনো পাঠক নেই বললেই চলে। যারা বাংলাসাহিত্যে কেবলই এক একটি তথ্যমাত্র।
তাহলে ‘দাগ সাহিত্য পুরস্কার’ নিলাম কেন? কোন লোভে? ‘দাগ’ একটি লিটল ম্যাগাজিনের নাম, সম্পাদক কবি নাট্যকার মিজানুর রহমান বেলাল। দাগ–এর অনেকগুলো সংখ্যায় আমি কবিতা লিখেছি এবং আমার কবিতার মূল্যায়ন-গদ্য দাগে ছাপানো হয়েছে। কবি-সম্পাদক মিজানুর রহমান বেলাল কি উদ্দেশ্যে ‘ দাগ সাহিত্য পুরস্কার ‘ চালু করেছেন ( ২০০২ সালে) তা আমার জানা নেই, সে ধরনের ঘোষণাও দেখিনি। কিন্তু এটি একটি লিটল ম্যাগাজিনের সাহিত্য-লালন পালনের অংশ বলে পুরস্কারটিকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছি। এর আগে কবি হাসান হাফিজ এবং কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এই পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। ‘ দাগ সাহিত্য পুরস্কার ‘ যদি কোনোদিন ‘ আলাওল সাহিত্য পুরস্কার ‘ ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার ‘ এর মতো নিজের ‘সাহিত্যমূল্য’ সৃষ্টি করতে পারে, তবে এই পুরস্কার প্রবর্তন এবং গ্রহণ, দুই-ই সার্থক হবে। অন্যথায় মূল্যহীনতায় ডুবে থাকবে অথবা তলিয়ে যাবে। ‘ দাগ’ ইতিবাচকতায় জয়ী হউক, এমনটাই কামনা করি। আপাতত ‘দাগ’ এর সম্পাদক কবি মিজানুর রহমান বেলালকে ধন্যবাদ জানাই।
কবি আমিনুল ইসলামের জীবন বৃত্তান্ত :
মোঃ আমিনুল ইসলাম ১৯৬৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার টিকলীচর গ্রামে এক কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা: বেলায়েত আলী মন্ডল, মাতা: সাজেনুর নেসা। বিবাহিত। জীবনসঙ্গিনী: রোকশানা পারভীন লীনা। মেয়ে: ডালিয়া নওশিন লুবনা; ছেলে রাগিব ইশরাক সজন। তিনি ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি লাভ করেন। ১৯৭৮ সালে সুজন একাডেমী হাইস্কুল থেকে মানবিক বিভাগে ১ম শ্রেণীতে এসএসসি পাস করেন। ১৯৮০ সালে রাজশাহী সরকারী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে রাজশাহী বোর্ডে ৬ষ্ঠ স্থান দখলসহ এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ে ১ম স্থান দখল করে বিএ অনার্স এবং পরে কৃতিত্বের সাথে এমএ পাস করেন। তিনি নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে গভর্নেন্স স্টাডিজ বিষয়ে এমএস ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি বিসিএস পরীক্ষায় ৬ষ্ঠ স্থান দখল করে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে সহকারী কমিশনার ও ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন ১৯৮৮ সালে। পরের বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োগপত্র লাভ করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে থেকে যান। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক পদে বদলী করা হয়। ইতঃপূর্বে তিনি মাঠ পর্যায়ে সহকারি কমিশনার ও ম্যাজিস্ট্রেট, এসি(ল্যান্ড), আরডিসি, এলএও, এডিসি প্রভৃতি পদে চাকরি করেছেন প্রায় ১৫ বছর। তিনি সিনিয়র সহকারি সচিব, উপসচিব, যুগ্মসচিব এবং অতিরিক্ত সচিব হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কাজ করেছেন।
চাকরি জীবনে তিনি ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক , ইটালি, মিশর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিজি, স্পেন, পর্তুগাল প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছেন।
মোঃ আমিনুল ইসলামের আরেকটি বড় পরিচয় হচ্ছে তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত কবি ও গবেষক। কবি-প্রাবন্ধিক হিসাবে আত্মপ্রকাশ নব্বই দশকে।
লেখার বিষয় :
কবিতা, প্রবন্ধ, ছড়া এবং সংগীত বিষয়ে গবেষণাধর্মী নিবন্ধ। বাঙালির শেকড় অন্বেষা এবং কবিতায় তা তুলে ধরা একটি প্রিয় বিষয় তার। নদী, প্রেম এবং আন্তর্জাতিক ঘটনাবলী তাঁর কবিতায় বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। কবিতা রচনায় দশকের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে শব্দ ও ভাষার ব্যবহারে তিনি কবিতার নিজস্ব একটি ধরন নির্মাণে সক্ষম হয়েছেন বলে তার কবিতার আলোচকগণ প্রায় সকলেই বলেছেন। দুর্বোধ্য নয় অথচ গভীর ব্যঞ্জনাময়-এটি হচ্ছে তাঁর কবিতার সবচেয়ে বড় দিক। মননশীল প্রবন্ধের জন্যও তিনি সমানভাবে স্বীকৃত। তাঁকে এসময়ের একজন মৌলিক ও শক্তিমান কবি হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি নজরুল সঙ্গীত নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণামূলক কাজ করে চলেছেন।
প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ :
ক. কবিতা : তন্ত্র থেকে দূরে-২০০২; মহানন্দা এক সোনালি নদীর নাম-২০০৪; শেষ হেমন্তের জোছনা -২০০৮; কুয়াশার বর্ণমালা -২০০৯; পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি-২০১০; স্বপ্নের হালখাতা -২০১১; প্রেমসমগ্র-২০১১; . জলচিঠি নীলস্বপ্নের দুয়ার-২০১২; শরতের ট্রেন শ্রাবণের লাগেজ-২০১৩; কবিতাসমগ্র-২০১৩; জোছনার রাত বেদনার বেহালা : ২০১৪ ; তোমার ভালোবাসা আমার সেভিংস অ্যাকাউন্ট ২০১৫ প্রণয়ী নদীর কাছে (২০১৬), ভালোবাসার ভূগোলে(২০১৭), অভিবাসী ভালোবাসা (২০১৮) এবং জলের অক্ষরে লেখা প্রেমপত্র (২০১৯)।
খ. ছড়া : দাদুর বাড়ি-২০০৮; এবং, ২. ফাগুন এলো শহরে-২০১২ এবং রেলের গাড়ি লিচুর দেশ ২০১৫, গ.প্রবন্ধ : বিশ্বায়ন বাংলা কবিতা ও অন্যান্য প্রবন্ধ-২০১০।
সম্মাননা/পুরস্কার :
১.রাজশাহী সাহিত্য পরিষদ সাংগঠনিক সম্মাননা ২০০৪; ২.বগুড়া লেখক চক্র স্বীকৃতি পুরস্কার ২০১০ ; ৩.শিশু কবি রকি সাহিত্য পুরস্কার ২০১১ ; ৪. জাতীয় সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) – ২০১২, এবং ৫. ‘নজরুল সংগীত শিল্পী পরিষদ সম্মাননা ২০১৩’; ৬. গাঙচিল সাহিত্য পুরস্কার ২০১৫; এবং মানুষ পুরস্কার ২০১৭ এবং দাগ সাহিত্য পুরস্কার ২০১৮।
এ দিকে সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধক ও মহাপরিচালক কবি আমিনুল ইসলাম কবিতায় “দাগ সাহিত্য পুরুস্কার পাওয়ায় ফ্রেন্ডস ফর লাইফ সমবায় সমিতি, বরিশাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। প্রেস বার্তায় তার সফলতা ,উজ্জল ভবিষ্যত ও সু-স্বাস্থ্য দীর্ঘ নিরোগ মঙ্গলময় জীবন কামনা করা হয়।