উজিরপুরে আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা ও তার ছেলে হত্যা।: ১ বছরেও গ্রেফতার হয়নি প্রধান আসামী
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:৩০ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
উজিরপুর সংবাদ দাতা ::বরিশালের উজিরপুরে জমি বিরোধে মুক্তিযোদ্ধা ও তার ছেলেকে হত্যার ১ বছরেও প্রধান আসামী সহ ১৯ আসামীকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। হত্যা মামলার আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরলেও খুজে পাচ্ছে না বলে জানান পুলিশ। মামলার তদন্তের কোন অগ্রগতি না থাকায় বিস্ময় প্রকাশ করে সোমবার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট উজিরপুর আমলী আদালতের বিচারক এস এম মাহফুজ আলম হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়ান্দা শাখা(ডিবি)’র উপ-পরিদর্শক ওবায়দুলকে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তাধীন সকল কাগজপত্র সহ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মামলা সূত্রে জানাযায়, ২০২১ সালের ২৯ জুলাই মঙ্গলবার সকালে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে উজিরপুরের বামরাইল ইউনিয়নের আটিপাড়া গ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধার দেলোয়ার হোসেন ও তার পরিবারের উপর অর্তর্কীত হামলা চালিয়ে গুরুত্বর আহত করে প্রতিপক্ষরা। ওই দিন হাসপাতালে নেওয়ার পথে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার নিহত হয়েছে এবং তার বড় ছেলে মোঃ বিপ্লব তালুকদার ৭ আগষ্ট শনিবার ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ওই হামলায় সোহগ তালুকদার, বড় ছেলে বিপ্লবের স্ত্রী রোজিনা বেগম ও মামলার বাদী জুয়েল তালুকদার গুরুত্বর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ ঘটনায় ৩১ জুলাই উজিরপুর থানায় নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেনের ছেলে জুয়েল তালুকদার বাদী হয়ে ৩২জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নং ১৬ পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৩, ৪৪৭, ৩২৩, ৩২৪, ৩২৫, ৩২৬, ৩০৭, ৩০২,৩৫৪, ৫০৬(দ্বিতীয় অংশ), ১০৯,১১৪ ধারায় মামলাটি রুজু করা হয়েছে। ওই হত্যা মামলায় ৭ জন আসামীকে গ্রেফতার করে উজিরপুর থানা পুলিশ। ওই মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামীসহ ১৩ জান আসামী উচ্চ আদালত ও নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিলেও প্রধান আসামী নরুল ইসলাম সিপাই, জলিল সিপাই সহ ১৯আসামী কেউ জামিন নেয়নি আদলত থেকে। জামিন না নিয়ে ঘুরে বেড়ালেও গ্রেফতার করেনি পুলিশ। হত্যা মামলায় উজিরপুর থানা পুলিশের কোন অগ্রগতি না থাকায় ন্যায় বিচার পেতে সঠিক তদন্তের জন্য বাদী আদালতকে অবহিত করে। ২০২২ সালে ৪ জানুয়ারী আদালত বাদী কথা আমলে নিয়ে পুলিশ সুপারকে মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করার জন্য অবহিত করে। পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বিপিএম মামলাটি তদন্তের জন্য জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)কে নিদের্শ প্রদান করে। জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি)’র ওসি মামলাটির তদন্তের জন্য ডিবি’র উপ-পরিদর্শক ওবায়দুলকে দায়িত্ব দেন। মামলাটি ডিবিতে নেওয়ার ৮ মাস অতিবাহিত হলেও জামিনে না থাকা প্রধান আসামী সহ ১৯ আসামীর একজনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি ডিবি পুলিশ। হত্যা মামলায় জামিন না নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রধান আসামী নুরুল ইসলাম সেপাই, জলিল সেপাই সহ অন্যান্য আসামী হলো আকাব্বার সেপাই,নাইম সেপাই, সৈয়দ মিরাজ হোসেন, নুর মোহাম্মদ সেপাই, সৈয়দ নবিন, ইউনুছ সেপাই, শাহিন সেপাই, তুহিন সেপাই, কালাম সেপাই, আমির সেপাই, নাসির সেপাই, আ: জব্বার সরদার, ইউসুফ খান, দুলুফা বেগম ও শাহজাহান হাওলাদার। এনিয়ে বাদীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে পুলিশের কর্মকান্ড নিয়ে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ারের মেঝ ছেলে সন্ত্রাসী হামলায় আহত মোঃ সোহাগ তালুকদার বলেন, আমার বাবা ও ভাইকে যারা নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশকে খবর দিলেও আসামীদের গ্রেফতারে তাদের কোন অভিযান পরিচালনা করেনি। মামলার একবছর হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত তদন্তরির্পোট আদালতে জমা দিতে পারেনি এবং মেডিকেল রির্পোটটিও সংগ্রহ করে নি। বরং আমাদেরকে রির্পোট সংগ্রহ করতে বলে পুলিশ। এছাড়া আসামী পক্ষের সাথে পুলিশের যোগসাজশ থাকার কারনে তাদেরকে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন বাদী জুয়েল তালুকদার। এ মামলার সঠিক বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন নিহত ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। স্থানীয় বাসিন্দা বামরাইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক মো: মিজানুর রহমান কবির বলেন, এখনও প্রধান আসামীসহ ১৯ জন আসামী জামিন না নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে না পারা পুলিশের জন্য একটা দু:খজনক বিষয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি খুবই অসহায়। ওই ঘটনার পর থেকে পরিবারটি খুব আতংক থাকছে । বেচেঁ যাওয়া বাকী আহতরা টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারেনি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও প্রকাশ্যে দিবালোকে বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার সঠিক বিচার না পায় তাহলে এর চেয়ে আর কষ্টের কিছু নাই! এই হত্যার সঠিক বিচার চেয়ে প্রশাসনসহ আদালতের কাছে জোর দাবী জানান সাবেক মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার হারুন অর রশিদ সহ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নেতৃবৃন্দ ও বামরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ ইউছুফ হাওলাদার । এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কমর্কতা জেলা গোয়েন্দা শাখা(ডিবি) ওবায়দুল বলেন, আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা করেছি। তবে বাদী যে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আসামীরা প্রথমে বিচ্ছিন্ন থাকায় গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। কিছুদিনের মধ্যে আসামীরা যে যার মতো সেইভ সাইডে চলে গেছে তাই আসামীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।বর্তমানের চরম নিরাপত্তাহীনতায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি।