ফরিদপুরের নগরকান্দায় কনেকে সোনার পরিবর্তে ইমিটেশনের আংটি দেওয়া নিয়ে বরপক্ষকে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলার ফুলসূতি ইউনিয়নের হিয়াবলদী গ্রামে কনের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৯ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে চারজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ঘটনার পর রাতেই দুই পক্ষের অভিভাবকেরা বৈঠকে বসেন। সেখানে বিয়ের কাজি রেজাউল করিম ও ফুলসূতি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মো. আলমগীর হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উভয় পক্ষের মধ্যস্থতায় তালাকের সিদ্ধান্ত হয়। উভয় পক্ষ পরস্পরকে দেওয়া উপহারসামগ্রী ফেরত দেবে। কাজি রেজাউল ও সাবেক ইউপি সদস্য আলমগীর হোসেন তালাকনামায় উভয় পক্ষের স্বাক্ষরের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।
পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ২৫ দিন আগে কাজি ডেকে এ বিয়ে পড়ানো হয়। কনে (১৯) একাদশ শ্রেণির ছাত্রী, বর (৩৪) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী। গতকাল কনেকে তুলে নিতে উপজেলার লস্করদিয়া ইউনিয়নের দাদপুর গ্রাম থেকে হিয়াবলদী গ্রামে আসে বরপক্ষ। বেলা আড়াইটার দিকে ৫০ জনের একটি বরযাত্রীর বহর কনের বাড়িতে পৌঁছায়। তাদের খাওয়াদাওয়া শেষে কনেকে সাজানোর কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে কনেপক্ষের লোকজন বরপক্ষের কাছে সোনার আংটি চান। তখন বরপক্ষ একটি ইমিটেশনের আংটি দেয়। সোনার পরিবর্তে ইমিটেশনের আংটি দেওয়া নিয়ে বর ও কনেপক্ষ বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। কনেপক্ষের লোকজন বরকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলেন।
হিয়াবলদী গ্রামের ঘটনাটি একটি তুচ্ছ ব্যাপার থেকে শুরু হয়ে এখন বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
আরিফ হোসেন, ফুলসূতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান
খবর পেয়ে ফুলসূতি ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য হাফিজুল মাতুব্বর এসে বরপক্ষকে সমঝোতার প্রস্তাব দিলে তাঁকে মারধর করে বরপক্ষ। এরপর শুরু হয়ে যায় হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা।
কনের মা আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিয়ের পর যৌতুক হিসেবে ছেলেপক্ষ আমাদের কাছে চার লাখ টাকা দাবি করে। আমরা দিতে দেরি করলে তারা আমাদের বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছিল। এ ছাড়া মুঠোফোনে আমার মেয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে থাকেন বর।’
বর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দুলাভাইয়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে মেয়েপক্ষ। এ জন্য এ বিয়ে থেকে আমার মন উঠে গিয়েছিল। তারপরও আমরা বিয়ের উদ্দেশ্যেই তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। এরপর তারা আমাকেসহ আমার সঙ্গের লোকেদের পিটিয়েছে। এরপর আর এই সামাজিক সম্পর্ক টিকতে পারে না। তাই বিবাহবিচ্ছেদে এগিয়েছি।’
ফুলসূতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হিয়াবলদী গ্রামের ঘটনাটি একটি তুচ্ছ ব্যাপার থেকে শুরু হয়ে এখন বিবাহবিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়িয়েছে।
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিল হোসেন বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত দেখতে পান। এ ব্যাপারে কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।