সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক জনপদ ঝালকাঠি
প্রকাশ: ১৩ এপ্রিল, ২০২০, ২:৩৯ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

ইতিহাস ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ এক জনপদ ঝালকাঠি

মো. আতিকুর রহমান : ঝালকাঠি ভূখন্ডে ঠিক কবে থেকে জনবসতি শুরু হয়েছিল তা নিশ্চিতভাবে বলা না গেলেও নাম দেখে বোঝা যায়-এখানে অতি প্রাচীনকাল হতে কৈবর্ত জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরাই প্রথম আবাদ আরম্ভ করেছিল। কৈবর্ত জেলেদের ঝালো বলা হতো এবং তাদের পাড়াকে বলা হতো ঝালোপাড়া। অনেকের ধারণা এ ঝালোপাড়া থেকেই ঝালকাঠি নামের উৎপত্তি। কবি বিজয় গুপ্ত মনসামঙ্গল কাব্যেও জেলে সম্প্রদায়কে ঝালো নামে উল্লেখ করেছেন। মেহেদীপুরের জেলেদের সঙ্গে স্থানীয় লোকদের মনোমালিন্য দেখা দিলে তারা বাসন্ডা ও ধানহাটা খালের উভয় তীরে কাটাবাখারী জঙ্গল কেটে আবাদ করে বসতি স্থাপন করে। ঝালকাঠি বন্দরে পূর্বে অধিকাংশ নাগরিকই ছিল কৈবর্ত দাস বা জেলে সম্প্রদায়ের লোক। বর্তমান ঝালকাঠির পশ্চিম তীরে জেলেরা জঙ্গল সাফ করে বাসস্থান তৈরি করত: জেলে+ কাঠি = জাল + কাঠি অপভ্রংশে ঝালকাঠি নামকরণ করা হয়েছে। এই জেলে ও জঙ্গলের কাঠি থেকেই উৎপত্তি হয় ঝালকাঠির নাম। তেমনি চাঁদকাঠি, কৃষ্ণকাঠি, চরকাঠি, বিনয়কাঠি ইত্যাদি। যা বিস্তৃত রয়েছে স্বরূপকাঠি পর্যন্ত। বিশ্বরূপ সেনের একখানি তাম্রলিপিতে ঝালকাঠি ও নৈকাঠির নামোল্লেখ আছে। এ থেকেও ঝালকাঠি নামটি যে জেলেদের কাছ থেকে পাওয়া তার সমর্থন মিলে।
ঝালকাঠি জেলার প্রাচীন নাম ছিল মহারাজগঞ্জ। সুগন্ধা নদীর দক্ষিণ তীরে পোনাবালিয়া এবং উত্তর পাড়ে ছিল উজিরপুর শিকারপুর। মাঝের বিস্তীর্ণ অঞ্চলটাই ছিল নদী। ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত নীলকরদের দ্বারা ওইসব নামকরণ করা হয়। ঐ সব নীলকর কুঠিয়াল গভর্নর জেনারেলের অনুমতি নিয়ে বরিশাল ও ঝালকাঠিতে নীল চাষ শুরু করে। তারা এখানে নীলচাষিদের ভূমি দাস প্রথার বিরুদ্ধে জনৈক নীলকর সাহেবকে আক্রমণ করে এবং তার শিরশ্ছেদ করেন। ঝালকাঠি শহরের সরকারি বিদ্যালয়ের নিকট আজও সেই মৃতের সমাধি দৃষ্ট হয়। ১৭৫৭ সালের পর পর্তুগিজ নাগরিক মি. উড ও ইউয়াট একটি লবণ স্টেটের এজেন্ট ছিলেন। ১২০৫ সালে রায়েরকাঠির রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মদনমোহনের ছেলে শ্রীনাথ রায় সম্রাটের নিকট থেকে পাট্টা লাভ করেন। মদনমোহন পূর্বে নলছিটি থানাধীন বর্তমানে ঝালকাঠি থানার নথুল্লাবাদ গ্রামে জমিদারির প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন। মদনমোহন রায়ের পৌত্র রাজা রুদ্র নারায়ন শক্তিমান রাজা ছিলেন। তিনি স্বপ্নযোগে বলেশ্বর নদীর পূর্ব তীরে জঙ্গলে জগদম্বার দশভুজা পাষাণময়ী মূর্তি পেয়ে তা রায়েরকাঠি গ্রামে স্থাপন করেন এবং রায়েরকাঠিতে রাজধানী স্থাপন করেন। রুদ্র নারায়নের প্রপৌত্র জয়নারায়নের সময় আগাবাকের খাঁ নামক এক পাঠান যুবক তার জমিদারির অর্ধেক জোরপূর্বক দখল করলে উভয়ের মধ্যে ঝালকাঠির পূর্বদিকে সুতালরি এবং পূর্ব দক্ষিণে বারৈকরণ গ্রামে এক প্রচ- যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে বাকের খাঁ ২২টি কামান ফেলে পলায়ন করেন বলে ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায়। রায়েরকাঠিতে জমিদারি অর্ধেকের মালিক ঘোষাল মহারাজ। ঝালকাঠিতে তাদের কাছারি স্থাপন করেন। ঘোষাল বাহাদুর সরকার হতে রাজা বাহাদুর পদবি প্রাপ্ত হন। তার প্রজারা তাকে মহারাজ সম্বোধন করত। এই মহারাজ সম্বোধন থেকেই কাছারিবাড়ী সংলগ্ন এলাকার নাম হয় মহারাজগঞ্জ। ঝালকাঠির পূর্ব নাম মহারাজগঞ্জ। অর্থাৎ ত্বদীয় পুত্র রাজা সত্যস্মরণ ঘোষাল বাহাদুর বাণিজ্য বন্দর ঝালকাঠি প্রতিষ্ঠা ও উন্নতি তারই চেষ্টায়। তার চেষ্টা ও যতেœ রাজপ্রসাদতুল্য অট্টালিকা প্রশস্ত রাজরতœ ও অসংখ্য জলাশয় নির্মিত হয়েছিল। সে সময় ঝালকাঠি বন্দর তৎকালীন বাংলার একটি শ্রেষ্ঠ ও উন্নত বাণিজ্য বন্দর হিসেবে গড়ে উঠেছিল। ঝালকাঠি বন্দর হিসেবে বহুদিন আগ থেকেই পরিচিত। কথায় কথায় আজও লোকে একে দ্বিতীয় কলিকাতা বলে। ভারত বিভক্তির পূর্বে কলিকাতার পরেই এ বন্দরের গুরুত্ব ছিল অত্যধিক। তদানিন্তন ঝালকাঠির সত্যজ্জল অতীত আছে। অতীতে এখান থেকেই দক্ষিণ বাংলার অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হতো। ১৭৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর মি. ম্যাসি কর্তৃক ইস্ট ইন্ডিয়া সরকারের নিকট পেশকৃত প্রতিবেদনে ঝালকাঠি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য প্রদান করা হয়েছে। ১৭৯৭ সালে এই অঞ্চল বাখরগঞ্জ জেলায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৮২ সালে ঝালকাঠিকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এবং ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা পায়। ঝালকাঠি জেলায় সুবিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ গাছ-গাছালি, নদী-নালা, খাল-বিল, অপার সৌন্দর্য্যম-িত ৭৩৫.০৯ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট ছোট্ট একটি জেলা ঝালকাঠি। ১৯৮৪ সাল থেকে বাংলাদেশের মানচিত্রে এ জেলাটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো বিরাজ করছে। এ জেলার নাম উচ্চারণ করার সময়ই সারা দেশের মানুষের হৃদয় আকাশে চাঁদের মতো ভেসে ওঠে কবি জীবনানন্দ দাশ এর বিখ্যাত আবার আসিব ফিরে কবিতার ধানসিঁড়ি নদীটি। এ জেলার আছে এক গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস যা প্রদীপ্ত ভাস্করের মত জ্যোতি ছড়াচ্ছে অনর্গল।
এ জেলাটি বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোর মধ্যে একটি হলেও সর্বক্ষেত্রে রাখছে স্বতন্ত্র ভূমিকা। ভৌগোলিক পরিচিতি:- অবস্থান: ২২০-২৫” হতে ২২০-৪৯” উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০০-৫৮” হতে ৯০০-১৮”  দ্রাঘিমাংশউত্তরাংশ। সীমানা:- উত্তরে বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলা। আয়তন: ৭৩৫.০৯ বর্গ কিলোমিটার।
এক নজরে ঝালকাঠি জেলা
অবস্থান: ২২০-২৫” হতে ২২০-৪৯” উত্তর অক্ষাংশ ও ৯০০-৫৮” হতে ৯০০-১৮”  দ্রাঘিমাংশ উত্তরাংশ * সীমানা:- উত্তরে বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বরগুনা জেলা, পূর্বে বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলা। * আয়তন: ৭৩৫.০৯ বর্গ কিলোমিটার। প্রশাসনিক কাঠামো: * উপজেলা : ০৪ টি (ঝালকাঠি সদর, নলছিটি, রাজাপুর ও কাঠালিয়া), * থানা : ০৪ টি, * পৌরসভা : ০২ টি (ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি), * ইউনিয়ন : ৩২ টি, * গ্রাম : ৪৭১ টি * মৌজা : ৪১২ টি * ইউনিয়ন ভূমি অফিস : ৩১ টি, * হাট-বাজার : ৮৯ টি। জনসংখ্যা (২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ): * মোট জনসংখ্যা : ৬,৯৪,০৯০ জন, * পুরুষ  : ৩,৪৬,১৬১ জন, * মহিলা : ৩,৪৭,৯২৯ জন। শিক্ষা সংক্রান্ত তথ্য: * কলেজ :  ১৮টি, * কারিগরি কলেজ :  ০৯টি, * মাধ্যমিক বিদ্যালয় : ১৫৭ টি, * নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় :  ৩৬টি, মাদ্রাসা : ১২৩, কামিল :  ০১টি, ফাযিল  : ১৫টি, আলিম : ১৩টি, দাখিল : ৯৪টি। প্রাথমিক বিদ্যালয় * সরকারি প্রাথমিক : ৩৬৪ টি, * রেজিস্টার্ড : ১৬২ টি, * শিশু কল্যাণ প্রা: বি: ঝালকাঠি-২২ : ০১টি, * শিক্ষার হার: * ৬৫.৭৪% (২০০১ সালের শিক্ষা জরিপ অনুযায়ী)।  * স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য: * হাসপাতাল ক) ১০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল : ০১ টি, খ) ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল : ০২ টি গ) ৩১ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল : ০১ টি, * উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্স : ০৩টি, * উপ -স্বাস্থ্য কেন্দ্র : ০৫ টি * ডায়াবেটিক সেন্টার : ০১ টি, * ক্লিনিক * প্রস্তাবিত কমিউনিটি ক্লিনিক : ২৪টি, * কমিউনিটি ক্লিনিক : ৬৪টি। * যাতায়াত ব্যবস্থা: * পাকা : ৩৯১.৪৩ কি:মি:, * আধাপাকা : ৭৫৭.০৭ কি:মি:, * কাঁচা : ১২৮০.৯৯ কি:মি:, * ঝালকাঠি পৌরসভা সড়ক: * পাকা : ৫৬.০০ কি:মি:, * কাঁচা : ৫০.০০ কি:মি:, * ফেরিঘাট : ০২ টি, * প্রধান নদী :  সুগন্ধা, বিষখালী ও ধানসিঁড়ি।
* ভূমি সংক্রান্ত তথ্য: * মোট ভূমি : ১,৮৬,৪৩২.১৪ একর * কৃষি জমি : ১,৪১,০০৫.৮২ একর, * অকৃষি জমি : ৪৫,৪২৬.৩২ একর। * শিল্প সংক্রান্ত তথ্য: * শীতল পাটি শিল্প, * গামছা শিল্প, * মৃৎ শিল্প, * লবণ শিল্প, * ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান: রাজাপুর সাতুরিয়া জমিদার বাড়ি, কবি জীবনানন্দ দাশের মামা বাড়ি, কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি, গাবখান সেতু, ধানসিঁড়ি নদী / রূপসা খাল, গালুয়া পাঁকা মসজিদ, নেছারাবাদ কমপ্লেক্স, পোনাবালিয়া মন্দির, সিদ্ধকাঠি জমিদার বাড়ি, নলছিটি পৌরভবন, চায়না কবর, কামিনী রায় / যামিনী সেনেরবাড়ি, কুলকাঠি (শহীদিয়া)।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া