মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   মঙ্গলবার ২১শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ



আমে সফল আনোয়ার বিদেশেও ছড়িয়েছে আমের খ্যাতি
প্রকাশ: ১৭ জুলাই, ২০২২, ১:২৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

আমে সফল আনোয়ার বিদেশেও ছড়িয়েছে আমের খ্যাতি

মামুন-অর-রশিদ

আম মূলত মৌসুমী সুসাদু ফল। আম পাকার পর তিন থেকে সাড়ে তিনমাস চলে আমের ব্যবসা। তবে এই সময়ের ব্যবসার জন্য আমচাষী কিংবা ব্যবসায়ীদের ব্যস্ত থাকতে হয় সারা বছরই। গাছে মুকুল আসার পর থেকে চলে বাগানের নিবিড় পরিচর্যা। তার আগে থেকেই শুরু হয় যতœ-আত্তি। বছরব্যাপী বাগানের পরিচর্যার পরই পাওয়া যায় ভাল আম। আর এ আমের ব্যবসা সফল হতে হলে পরিশ্রম করতে হয় আরও বেশি।

আমের রাজধানী খ্যাত বিভাগীয় শহর রাজশাহী। এ জেলার আমের খ্যাতি এখন দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। রাজশাহীতে আম কেন্দ্রিক মৌসুমী ব্যবসায়ীর সংখ্যা অনেক। কেউ বাজারে আম বিক্রি করেন কেউ অনলাইনে এ মৌসুমে আমের পসরা সাজান। কেউ বিদেশে আম পাঠিয়ে অর্জন করেন বৈদেশিক মুদ্রা। গুণগতমান ও কেমিক্যালমুক্ত নিরাপদ আম উৎপাদনের পর দেশের বাজারের পাশাপাশি বিদেশে রফতানি করেন অনেকে। কেউ সফলতার মুখ দেখেন কেউ লোকসান গুনেন।

তবে সফলতার দিক থেকে এগিয়েছেন রাজশাহীর একজন আম ব্যবসায়ী। নাম আনোয়ারুল হক (আনোয়ার)। গত ১০ বছর ধরে আমের ব্যবসায় সফল তিনি। শুরু থেকেই কঠোর পরিশ্রম ও পরিকল্পনায় আম দেশের বাজারে তো বটেই বিদেশেও সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বছরের শুরুতে গুটি জাতের আম পাকার পর থেকে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এরপর ফজলি ও আশ্বিনা জাতের আমের মাধ্যমে শেষ হয় তার আমের মৌসুম। এবারও তিনি আমের ব্যবসায় সফল হয়েছেন।

সম্প্রতি কথা হয়, রাজশাহীর এ সফল আম ব্যবসায়ীর সঙ্গে। আনোয়ারুল হক নামের এ ব্যবসায়ীর জন্মস্থান আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে। তবে ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাজশাহী নগরে। রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া-জিন্নানগর এলাকায় বাড়ি বানিয়েছেন। এখানেই তার আমবাগান সম্প্রসারণ করেছেন।

প্রথমে বন বিভাগে চাকরি করতেন তিনি। ২০১৬ সালে অবসর গ্রহণের পর আমের ব্যবসায় নেমে পড়েন। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। বছরের পর বছর ধরে আম বাগানের সম্প্রসারণ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে গুনগতমান সম্পন্ন আম উৎপাদন করেন তিনি। এজন্য সব আমেই ফ্রুটব্যাগিং ব্যবহার করেন তিনি। রাজশাহী নগরে এখন তার ৬০ বিঘা জমিতে বিশাল আমের বাগান।

কাচামিঠা থেকে শুরু করে গুটি জাতের আম উৎপাদনের পাশাপাশি গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, লক্ষণা, ল্যাংড়া, রাণী পছন্দ, হাঁড়িভাঙ্গা, আম্রপালি, ফজলি, বারী-৪, আশ্বিনা- বলতে গেলে সব জাতের আম উৎপাদনের কারিগর তিনি। ফ্রুট ব্যাগিং এবং নন ফ্রুটব্যাগিং দুই পদ্ধতিতেই তিনি আম উৎপাদন করেন। তার ফ্রুটব্যাগিং আমের কদর দেশেও যেমন রয়েছে বিদেশেও সুনাম অর্জন করেছে। সফল এ ব্যবসায়ী বলেন, রফতানির ক্ষেত্রে তিনি ফ্রুট ব্যাগিং আম উৎপাদন করেন। এতে আমের রং গুণগতমান, স্বাদ ও শতভাগ নিরাপদ থাকে।

সম্প্রতি তার আমের রাজ্যে গিয়ে দেখা যায় আম নিয়েই ব্যস্ত তিনি। কাজের ফাকে, আনোয়ারুল হক বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি ৬টি চালানের মাধ্যমে সাড়ে ১২ মেট্রিকটন আম বিদেশে পাঠিয়েছেন। ইউকে, ইতালী ও সুইডেনে গেছে বেশিরভাগ আম। এখন রফতানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে নিরাপদ ফজলি। এছাড়া সারাদেশের বাজারেই রয়েছে তার আমের রাজত্ব। রাজধানী ঢাকার বড় বড় আড়তে আমের জোগান দেন তিনি। তিনিই মূলত দেশে প্রথম ফ্রুট ব্যাগিং ব্যবহার করে নিরাপদ আম উৎপাদন করেছেন। তার দেখাদেখি এখন অনেকে এ পদ্ধতি রপ্ত করেছেন। তিনি অন্যদের বাগানেও নিরাপদ আম উৎপাদনে সহযোগিতা ও উৎসাহ দিয়ে থাকেন।

আনোয়ারুল হক জানান, তিনি নিজে সফল আমচাষীদের নিয়ে রাজশাহীতে গড়ে তুলেছেন ‘রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটি’। নিজেই এ সোসাইটির সভাপতি। এ সোসাইটির সদস্য সংখ্যা এখন ২০০ জন হলেও নিরাপদ আম উৎপাদন করছেন অন্তত ২০ জন সফল চাষী। তারাও বিদেশে আম পাঠাচ্ছেন।

সফল এ আম ব্যবসায়ী বলেন, দেশের বাজারেও আমের ভাল দাম মেলে। তবে বিদেশে বাংলাদেশের পরিচিতি তুলে ধরতে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য বেশিরভাগ আম রফতানি করেন তিনি। আরও বলেছেন, শুরুর দিকে আম রফতানি করতে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা সহ্য করতে হয়েছে।

এখন খুব সহজ হয়েছে। বাগান থেকেই আম ফড়িয়াদের মাধ্যমে তিনি সরবরাহ করেন। তারাই কোয়ারেন্টাইন মেন্টেনন্স করে বিদেশে রফতানি করেন। এতে কাক্সিক্ষত দামও মেলে। প্রথম ২০১৬ সালে তিনিই রাজশাহী অঞ্চল থেকে প্রথম আম রফতানি শুরু করেন। ওই বছর ২০ মেট্রিকটন আম রফতানি করেছিলেন তিনি। এরপর থেকে প্রতিবছরই আম রফতানি করছেন। এতে সফলতা মিলেছে বলে জানান তিনি। গত দুই টার্ম করোনা মহামারীর কারণে রুট বন্ধ থাকায় সেভাবে আম রফতানি না করা গেলেও দেশের বাজারে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। এ বছর করোনা মহামারীর আগ্রাসন কমে যাওয়ায় রফতানিতে সফলতা পেয়েছেন। সফল এ ব্যবসায়ী বলেন, তার নিরাপদ আমের উৎসাহদাতা একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি ড. শরফ উদ্দিন। একসময় তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে উদ্যানতত্ত্ববিদ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এখন তিনি গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফল বিভাগের উদ্যাণতত্ত্ব ও গবেষণাকেন্দ্রে উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

আনোয়ারুল হক বলেছেন, আমের ব্যবসা চলে বছরে তিনি থেকে সাড়ে তিনমাস। তবে এ জন্য বছরব্যাপী তিনি বাগানেই যুক্ত থাকেন। গাছের পরিচর্যা থেকে শুরু করে অন্য চাষীদের নিরাপদ আম উৎপাদনে প্রশিক্ষণও দিয়ে থাকেন। আগামীতে তিনি তার বাগানের আওতা আরও বৃদ্ধি করবেন। বিদেশে যাতে রাজশাহীর আমের স্থায়ী মার্কেট তৈরি হয় সে বিষয়েও কাজ করবেন। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিশে^ আম উৎপাদনে অষ্টম দেশ হিসেবে রফতানিতে বাংলাদেশের রয়েছে ব্যাপক সম্ভাবনা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, গত মৌসুমে ১ হাজার ৬২৩ টন আম বিদেশে রফতানি করা হয় যা এই বছর আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

ফল ও সবজির সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন। তিনি স্বল্পখরচে আমের প্রাকৃতিক হিমাগার নির্মাণ করেছেন যাতে পাকা আম এক মাসেরও বেশি সংরক্ষণ করা যায়। অধ্যাপক ড. মনজুর হোসেন বলেন, দ্রুত পচনশীল পাকা আম ব্যবসার পাশাপাশি সংরক্ষণ ও ফুড প্রসেসিং করে আমের আচার, জেলি, জ্যাম, জুস করা গেলেও বেশি লাভবান হওয়া যায়। ভারত ও থাইল্যান্ডের মতো দেশ এভাবে বাজারজাত করে আমের ব্যবসায় শীর্ষে রয়েছে। তিনি বলেন, আনোয়ারুল হকের মতো অন্যান্য আম ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসলে বিদেশে বাংলাদেশের আমের রফতানি আয় বাড়বে। ইতোমধ্যে এদেশের আমের খ্যাতি ছড়িয়েছে বহির্বিশ্বে। এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এগুতে হবে। এজন্য সরকারী পৃষ্ঠপোষকতাও জরুরী বলে মনে করেন এ গবেষক।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

প্রধান উপদেষ্টা : প্রফেসর শাহ্ সাজেদা ।

উপদেষ্টা সম্পাদক : সৈয়দ এহছান আলী রনি ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।

যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল।

ইমেইল: [email protected]

মোবাইল: 01713799669/01711358963

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।
© বরিশাল খবর সম্পাদক মামুনুর রশীদ নোমানী কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  নলছিটির মগড় ইউনিয়নবাসীর সেবা করতে চান মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন তালুকদার   প্রাণ ফিরছে বরিশাল নগরীর ৭ খালে   বেতারের সঙ্গীত শিল্পী (পল্লীগীতি) হিসেবে মনোনীত হলেন অ্যাড: জুয়েল   বরিশালের মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাচারী প্রধান শিক্ষিকা স্ট্যান্ড-রিলিজ !   বরিশাল ল’ কলেজে দুর্নীতি, উন্নয়নের নামে অর্থ আত্মসাৎ   অনিয়ম দুর্নীতির আতুরঘর বরিশাল বেতার : চলছে জোড়াতালি দিয়ে   বরিশাল ডাকঘরের ক্যাশিয়ার নুরুল কবিরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ   দেড় লাখ মামলা মাথায় বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীর   আলু শুন্য বরিশালের পাইকারী বাজার   বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর মার্কিন ভিসানীতি শুরু   মাদারীপুরের হিমাগারে ৩০ হাজার বস্তা, বাজারে আলুর কৃত্রিম সংকট   যুদ্ধ স্যাংশন সংঘাতের পথ এড়াতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান   Mamunur Rashid Nomani charged with violating Bangladesh’s Digital Security Act   ঝালকাঠিতে রোহিঙ্গা আটক এসেছিলো ভোটার হওয়ার জন্য   সাঈদুর রহমান রিমনকে নিয়ে দিলিপ কুচক্র মহলের ষড়যন্ত্রের জবাব!   বাবুগঞ্জে ইজিবাইক ছিনতাই চক্রের চার সদস্য আটক   নলছিটিতে ৫০তম গ্রীষ্মকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ   অপরাধ ঘটাতে আগাম ‘রেকি‘ করে গেছেন তারা!   ঝালকাঠি কারাগার: কু-প্রস্তাবের দাম দশ লাখ টাকা! জেলার বহাল তবিয়তে   রাজাপুর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস দুর্নীতির আখড়া