আবদুস সোবহান গোলাপের যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি, যা বলছে নির্বাচন কমিশন
প্রকাশ: ১৫ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:৫২ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও দলটির প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান গোলাপের নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এখন কিছুই করার নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তবে তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা আদলত যদি তথ্য গোপন সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে জানায় তখন আইন অনুযায়ী ইসি ব্যবস্থা নেবে।
রোববার নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি। যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
মো. আবদুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক বাড়ি কিনেছেন। বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি উল্লেখ করেননি। এছাড়া তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হওয়ার পর দ্বৈত নাগরিকত্ব ত্যাগ করেন। এসব তথ্য অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপি তাদের ওয়েবসাইটে করা একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। ওই প্রতিবেদন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে যে হলফনামা জমা দেন, এটা প্রকাশ করা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাজ। কেউ ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচনের আগে সেটা কেউ চ্যালেঞ্জ করলে কমিশন তা যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে কেউ নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়ে ইসির কিছু করার নেই। তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা আদলত যদি তথ্য গোপন সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে জানায় তখন আইন অনুযায়ী ইসি ব্যবস্থা নেবে।
এক প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, হলফনামা একটা জমা দেবেন কিন্তু সেই হলফনামার সত্য-অসত্য তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের কিছু করার আইনে নাই। এটা হলো হলফনামা এক ধরনের জাতিকে তথ্য জানানোর জন্য। এটার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিমূলক কিছু যদি করে থাকে সেটা দুদক তদন্ত করে দেখবে। যদি তারা প্রমাণ পায় তারা আদালতে মামলা করবে। সে যদি ট্যাক্স না দিয়ে থাকে, সম্পদ বিবরণীতে না দেখিয়ে থাকে, রাজস্ব বোর্ডও এটা করতে পারে, দুদক করতে পারে। সেই মামলার শাস্তি অনুযায়ী পরবর্তীতে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা হবে। সংসদ সদস্য পদ হারানোর জন্য যে বিষয়গুলো আছে সেটা যদি হয় তাহলে তার আগে কিছু করার নেই।
অভিযোগ আছে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে আব্দুস সোবহান নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, বিদেশি নাগরিক ভোট করতে পারেন না। তবে এটা কি প্রমাণিত? নাগরিকত্ব দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা এটা জানালে আমরা এটা আইন অনুযায়ী দেখব। তবে কেউ যদি মিথ্যা তথ্য দেয় বা তথ্য গোপন করে তাহলেও কি সে প্রার্থী হতে পারবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রার্থী হতে পারবে না। কোনো ভুল তথ্য দিলে নির্বাচনের যোগ্য হবেন না। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ না করে এবং যদি নির্বাচিত হয়ে যান, পরবর্তীতে কিছু করতে হলে উনার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। উদাহরণ দিয়ে মো. আলমগীর বলেন, একজন যদি শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকার পরও শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখান এটার জন্য ‘ক্রিমিনাল’ মামলা হবে। থানা পুলিশ মামলা করবে। শাস্তি হলে তখন ইসি ব্যবস্থা নেবে।
নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা প্রমাণ না করাতে পারছেন, যেহেতু নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কেউ এটাকে নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে নাই, এখন উনি নির্বাচিত হয়ে গেছেন, এখন উনি যে ভুল তথ্য দিয়েছেন এটা খালি বললে হবে না- এটা প্রমাণ করাতে হবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃক্ষ সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। ব্যবস্থা নেওয়ার পর যখন আমাদের কাছে পাঠাবেন তখন আমরা ব্যবস্থা নেব।
মো. আলমগীর বলেন, আমাদের কাজ হলো হলফনামা প্রকাশ করা। হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা ইসিকে দেওয়া হয়নি। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় কেউ চ্যালেঞ্জ করলে ইসি তা যাচাই-বাছাই করে দেখবে। যাচাই-বাছাইয়ে যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল হবে। এটুকু ক্ষমতা ইসির আছে। এরপর যদি কিছু হয় তাহলে প্রতারণা করেছে, প্রতারণার মামলা হবে। এ ধারার শাস্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন আদালত। আদালত ব্যবস্থা নিয়ে জানালে ইসি ব্যবস্থা নেবে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন যথাসময়ে: সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. আলমগীর বলেন, রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি। যথাসময়ে নির্বাচন হবে। জাতীয় সংসদের স্পিকারের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) আলাপ হবে। তারপর ভোটের তারিখ ঠিক হবে।