আগৈলঝাড়ায় সৌর বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে জমিতে পানি দিতে পেরে খুশি কৃষকেরা। এই সেচ পাম্পের সাহায্যে ডিজেল ও বিদ্যুৎচালিত পাম্পের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে জমিতে পানি দিতে পারেন তাঁরা।
এই উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় একটি ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) আওতায় একটি সৌর সেচ পাম্প রয়েছে। এর আওতায় রয়েছে দুটি বোরো ব্লকে ৫০ একরের বেশি জমি। দুই ব্লকে ৮০ জন কৃষক রয়েছেন।
২০২০-২১ অর্থবছরে উপজেলার যসার সোলার সেচ স্কিমে ৩০ একর কৃষিজমিতে বিএডিসি ৪২টি সৌর প্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার ওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প স্থাপন করে। এখানে ৫০ জন কৃষক। এ বোরো ব্লকে ৩০ একর জমিতে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপরও প্রতিদিন সাড়ে ১০ হাজার ওয়াট এবং বোরো মৌসুম বাদে বাকি আট মাস প্রতিদিন ১৬ হাজার ওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে বলে জানান সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা।
ব্লকের ম্যানেজার হেমায়েত হোসেন জানান, সৌর সেচের মাধ্যমে জমিতে পানি দেওয়া বাবদ শতাংশপ্রতি ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। পাশের অন্য বোরো ব্লকে বিদ্যুতের মাধ্যমে মোটর দিয়ে পানি দিতে খরচ হচ্ছে ৩৫ টাকা। আর ডিজেলচালিত বোরো ব্লকে খরচ পড়ছে ৪০ টাকা। তিনি বলেন, এভাবে সৌর সেচের মাধ্যমে ব্লক করায় কৃষকের প্রায় অর্ধেক টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের পশ্চিম কোদালধোয়া গ্রামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সৌর সেচের মাধ্যমে বোরো ব্লকে ২০ একর জমিতে পানি সরবরাহ করছে। এখানে কৃষকের সংখ্যা ৩০।
এই ব্লকের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য গণেশ পাণ্ডে জানান, তাঁদের সৌর সেচে বোরো ব্লকে একজন চাষি তাঁর জমিতে ফলানো ধান থেকে পানির খরচ বাবদ ২০ ভাগের ১ ভাগ ধান ব্লক ম্যানেজারকে দেন। অন্যদিকে তাঁদের পাশেই ডিজেলচালিত বোরো ব্লকের ফলানো ধান থেকে ম্যানেজারকে পানির খরচ বাবদ ১০ ভাগের ১ ভাগ ধান দিতে হয়। কোদালধোয়া সৌর পাম্পে ২৬টি সোলার প্যানেল রয়েছে।
সৌর সেচ পাম্প সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে চালু করে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত চলে। তবে মেঘলা আবহাওয়া, ঘন কুয়াশা, ঝড়বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সূর্যের মুখ দেখা না গেলে পাম্প বন্ধ থাকে।
বাকাল নওপাড়া ডিজেলচালিত বোরো ব্লকের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, তাঁদের ব্লকে ৪০ টাকা হারে প্রতি শতাংশ জমিতে পানি দিচ্ছেন। তাঁর ৬৭ শতাংশ জমি। সৌর সেচ পাম্পে পানি দিতে পারলে তাঁর অর্ধেক খরচ হতো। এ ব্লক সৌর সেচ প্রকল্পের আওতায় আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।
আগৈলঝাড়ার দায়িত্বে থাকা বিএডিসির উপসহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্র সেচ) বিশ্বজিৎ সিকদার বলেন, যসার সৌর স্কিম বোরো ব্লকে সোলার প্যানেলে প্রতিদিন ১৫ হাজার ৩৩০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়। ৫ হাজার ৫০০ ওয়াট সেচ পাম্পে খরচ হয় আর অবশিষ্ট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হতে পারে। এখানে কৃষকদের জন্য একটি হাস্কিং মেশিন দেওয়া হয়েছে, যার সাহায্যে ধান সিদ্ধ ও ভাঙানো যায়। ডিজেল ও বিদ্যুৎ সাশ্র্রয়ের পাশাপাশি জমিতে দেওয়ার জন্য ভূগর্ভস্থ থেকে ওঠানো পানি ৩০ থেকে ৫০ ভাগ সাশ্রয়ী হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকৌশলী (বরিশাল অঞ্চল) জি এম আবদুর রহমান বলেন, এটি সরকারের পরিবেশবান্ধব প্রকল্প। এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ, বিদ্যুৎ সংকটের চাপ কমানো, পানির অপচয় রোধ হচ্ছে।
বরিশাল বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী বলেন, এ প্রকল্পে একরে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ। আর বিদ্যুৎ বা ডিজেলচালিত সেচযন্ত্র দিয়ে পানি দিলে একরে ৩-৪ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়, যা সৌর সেচের চেয়ে ৩-৪ গুণ বেশি।