জাজিরায় অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহত ফজলে রাব্বির পরিবারে চলছে শোকের মাতম। খবর শুনে এলাকাবাসীও শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। আশপাশের মানুষজনের চিকিৎসায় রাতবিরাতে এগিয়ে আসার জন্য ভালোবাসার পাত্রে পরিণত হয়েছিলেন রাব্বি।
রাব্বির মৃত্যুর পর থেকেই কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন রাব্বির স্ত্রী ইলিন জাহান, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে সবকিছু দেখছেন রাব্বির আড়াই বছরের ছেলে অমর। আজ মঙ্গলবার ভোর ৬টার দিকে বন্ধুর মায়ের চিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকা যাওয়ার পথে শরিয়তপুরের জাজিরায় একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে রাব্বিসহ ছয়জন নিহত হন। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বহরমপুর ইউনিয়নের আদপুরা এলাকার সাবেক সরকারি কর্মকর্তা রাজ্জাক মল্লিক ও ব্রাকের এ্যাকাউন্টস কর্মকর্তা রিনা বেগমের ছোট ছেলে ফজলে রাব্বি।
রাব্বি ২০১২ সালে দশমিনা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০১৪ সালে দশমিনা সরকারি আব্দুর রসিদ তালুকদার ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে বরিশাল ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করেন। রাব্বি বরিশালের একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্য সহকারী পদে কর্মরত ছিলেন। রাব্বি ২০১৮ সালে দশমিনা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. আমীর হোসেনের মেয়ে ইলিন জাহানকে বিয়ে করেন। অমর নামে আড়াই বছরের একটি ছেলে রয়েছে তাদের। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রাব্বি ছিলেন সবার ছোট।
স্থানীয় সূত্র জানায়, রাব্বি ছিলেন খুবই পরোপকারী। দশমিনা উপজেলার কোন মানুষের জটিল চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বরিশালে দিন রাত তাদের চিকিৎসা সেবা পেতে সহায়তা করতেন রাব্বি এমনকি নিজের রক্ত দিয়েও মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রাব্বির সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় শত শত মানুষ পোস্ট দিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মানবসেবা সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে রক্তদান কর্মসূচিসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সেবার আয়োজন করতেন।
রাব্বির গ্রামের বাড়ি বহরপর ইউনিয়নের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সৈয়দ সাকিব বলেন, ‘রাব্বি ছিলেন পরোপকারী। মানুষের গুরম্নতর রোগের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে ছুটে যেতেন রাব্বির কাছে এবং তাদের চিকিৎসা সেবা পেতে সহয়তা করতেন রাব্বি।’
বহরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান সোহাগ বলেন, ‘ছেলেটা খুবই পরোপকারী ছিলেন তার এই মর্মান্তির মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।’
রাব্বির স্ত্রীর বড় ভাই মো. আব্দুল কাইউম বলেন, ‘রাব্বির মরদেহ বুঝে পেয়ে জাজিরা থেকে তারা দশমিনায় রওয়ানা হয়েছেন। আদমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।’