ঝলসানো দাহের নির্মমতায় অগ্নি বীরেরা উত্তর দিতে পাররনি। আমার ভয়ংকর তান্ডবে ডিপোর ,কনটেইনার, পণ্য, শ্রমিকের গলিত চোখ,বেড়িয়ে যাওয়া ভুড়ি, হাত, পা ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকাতে দেখেছি বহুদূর। সেদিনের ঘটনায় মানুষ্যদের কেউ কেউ সেখানে কর্মরত ছিল বেতনের টাকাটা বাড়ির নববধূ, মা,ভাই,অন্ত:স্বত্বা স্ত্রীকে পাঠাবে বোলে ।
বিস্ফোরণের বিকট শব্দ,অস্পষ্ট কালো ধোঁয়ার মৃত্যুর থাবা প্রত্যক্ষ করতে সেদিন ভীড় জমিয়েছিলো হাজারো জনতা। দেয়ালের অনাকাঙ্খিত মরমর ভাঙ্গন শব্দে অসহনীয় বেদনায় কেউ কেউ এসেছিলো খুঁজতে স্বজন। কেউ বা তুলোর গাড়ির দাহ থামাতে।
আমার দুর্দমনীয় শক্তির উন্মাদনায় সীতাকুন্ডের মাটি তোলপাড় করে সেদিন দেখেছিলাম ,অস্থি, ঘিলু, মজ্জার ময়দার পোড়ার ন্যায় পড়ে থাকার দৃশ্য। দেখেছি লাইভে থাকা দগ্ধ অলিউর রহমানের ছিটকানো পা।
শুনেছি অগ্নিবীর মনিরুল,রবিউল, শফিউল সহ শত শত বিকৃত বিভৎস শ্রমিক ও অগ্নি যোদ্ধাদের অতৃপ্ত বাসনার কথা। দেখেছি সাংবাদিক,সেচ্ছাসেবক,আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর রক্ত,ঔষধ,শুশ্রুষা দানের পরম মানবিকতা।
চারদিকের গ্রাসের করুণ কাকুতিতে একটু ঘুরে তাকাতেই দেখেছি খাম্বা মার্কা বিড়ি ধরানো জ্ঞানহীনদের,আমারই তান্ডবের সুযোগ নেবার দৃশ্য। দেখেছি অঙ্গার মুমুর্ষু সময়ে হাতী সম ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে কৃতীত্ব নিতে। কাউকে কাউকে দেখেছি সরকার ও নাগরিকদের পক্ষে, বিপক্ষের মনগড়া প্রাসঙ্গিক,অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য বুলি ছুড়তে।
দেখেছি এদিক ওদিক তাকিয়ে আহতদের পকেট হাতিয়ে অমানুষদের বিড়বিড় করে বলতে , এমন ফাঁকা পকেট বাপের জম্মেও দেখিনি বাবা;
অবিশ্বাস্য হলেও দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কিছু প্রতিহিংসুকদের উপরে উপরে আহারে অশ্রুচোখ আর ভেতরে ভেতরে ,জ্বালাও পোড়াও অঙ্গার করে দাও বলার আক্রোশাত্বক উক্তি।
আমি আমার অনিয়ন্ত্রিত মর্মান্তিক স্ফুলিঙ্গ নিয়ে অস্ফুট দৃষ্টতায় ঈশ্বরের কাছে প্রশ্ন করলাম, এ ঘটনাকে মানুষেরা নাম কি দেবে? নেহাত দুর্ঘটনা, নাকি রাসায়নিক দ্রবের অসতর্কতা? না কৌশলে কারো স্বার্থচিন্তায় দায় চাপানোর পরিকল্পিত নাটক মহরা ?
বিশালাকার এলাকা গ্রাস করে দেখি একমুঠো ছাই। তাই একই সপ্তাহের মধ্যে আবারও দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে উদরপূর্ণ করতে ছারখার করলাম মিরপুরের রুপনগর বস্তি, মৌলভীবাজারের ট্রেন,চুড়িহাট্টা, তাজরিন ফ্যাশন,নিমতলা। আর সিদ্দিক বাজারের অগ্নি বিস্ফোরণের ভয়াবহতার পোনে এক মাসের মধ্যেই আবারো ভয়ংকরভাবে ভষ্ম করলাম রাজধানীর গুলিস্থানের বঙ্গবাজার।
আমার বিষাক্ত কালো ধোঁয়ার ঘনায়মান অন্ধকারে সকল উদ্ধারকারী সহ মার্কেটের দোরগোড়ায় অবস্থিত দমকল হেড কোয়ার্টার, রাস্তার উল্টোদিকের পুরাতন রেলওয়ে,বার্ণ প্লাষ্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউট,হাসপাতাল,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুফিয়া কামাল হল সহ লাগোয়া ভবন ও পথে বসা সর্বস্ব খোয়ানো দোকান মালিক, কর্মি,শ্রমিক ও লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিয়োগকারী,ব্যবসায়ী সহ সাধারণ জনগণ সকলেই বাকরুদ্ধ। চারিদিকে যখন সমস্ত উদ্ধার অভিযানকারীরা ও দমকল বাহিনীর যোদ্ধারা আমাকে দমাতে ব্যতিব্যস্ত, ততক্ষণে দগদগে দেহে , বিদগ্ধ শ্বাসে , ঘনঘনে চোখে অসহায় জনতাকে কেন্দ্র করে বিরাট এক ঢেঁকুর তুলে বললাম, কি,বোলেছিলাম কিনা ; আমি মহাখাদক অহংবাদী অগ্নি, আমার বেশ ধরা কিন্তু খুবই কঠিন।