কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন ভূমিহীনদের তালিকার সঙ্গে ৪২ বিত্তবানদের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৭২ একর খাসজমি দলিল করে দেওয়ার ঘটনায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের নামে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক মামলাটি করেন।
এর আগে বুধবার সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
মামলায় বলা হয়েছে, মুজিব শতবর্ষের গৃহহীন, ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক খাসজমিসহ সেমিপাকা ঘর দেওয়ার লক্ষ্যে ২৮ মার্চ, ২৪ এপ্রিল ও ১৯ মে তিনটি স্মারকে ১৯৫টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়াত রেজিস্ট্রি কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সার্ভেয়ার মো. হুমায়ুন কবিরকে ক্ষমতা প্রদানপূর্বক তার স্বাক্ষর সত্যায়ন করে খেপুপাড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে পাঠানো হয়।
কিন্তু সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির অফিসের মূল ফরোয়ার্ডিং গোপন করে নিজের তৈরি স্ক্যান করা ফরোয়ার্ডিং দিয়ে তিন দফায় আরও ৪২টি বিত্তবান, কথিত ভূমিহীনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তাদের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাসজমির দলিল রেজিস্ট্রি করে দেন।
এ বছরের ১৯ এপ্রিল ২২টির স্থলে ৩১টি, ২৪ এপ্রিল ১২০টির স্থলে ১৩২টি এবং ১৯ মে ৫৩টির স্থলে ৭৪টি কবুলিয়াত দলিল রেজিস্ট্রি করে নেন সার্ভেয়ার হুমায়ুন।
এ অতিরিক্ত ৪২টি দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাসজমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নাম্বার থেকে ৪২টি নামে এ পরিমাণ খাসজমি মুজিব শতবর্ষের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। কবুলিয়াতের দুই শতক লেখা জায়গায় হাতের লেখায় কাটাছেঁড়া করা হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরের মোবাইল নাম্বার বন্ধ রয়েছে। তাকে অফিসেও পাওয়া যায়নি।
তাকে চাকরি থেকেও সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক নিশ্চিত করেছেন। তবে এ ঘটনার সঙ্গে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
মুজিববর্ষের সব কবুলিয়াত রেজিস্ট্রিতে দুই শতক খাসজমি দেওয়ার কথা লেখা থাকলেও কীভাবে একে একে ৪২টি কবুলিয়াত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন একর খাস জমির। ওই অফিসের এক স্টাফের নামেও বন্দোবস্ত দলিল সম্পাদন করা হয়েছে। বর্তমানে এ ৭২ একর খাস জমির মূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
সাব রেজিস্ট্রার রেহেনা পারভিন বলেন, যেহেতু ভূমিহীন, গৃহহীনদের দলিল ছিল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সই ছিল। সার্ভেয়ার তাড়াহুড়া করে নামজারির কথা বলেছেন। তাই সরল বিশ্বাসে প্রত্যেক পাতা দেখিনি। এখন তো দেখি এ অবস্থা। তবে ওই ৪২টি কবুলিয়ত দলিল বাতিল করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা প্রশাসন নিশ্চিত করেছে।
কলাপাড়া থানার ওসি মো. জসীম জানান, মামলাটি একজন এসআইকে তদন্ত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন তথ্যসূত্রে জানা যায়, মুজিব শতবর্ষে গৃহহীন ভূমিহীন পরিবারকে দুই শতক খাস জমি সহ সেমিপাকা একটি ঘর প্রদানের লক্ষ্যে তিনটি স্মারকে ১৯৫ টি বন্দোবস্ত কেসের কবুলিয়াত রেজিষ্ট্রী করতে খেপুপাড়া সাব রেজিষ্ট্র্রী অফিসে প্রেরণ করা হয়। সেখানে অতিরিক্ত আরোও ৪২টি দলিল বিত্তবানদের নামে অন্তর্ভূক্ত করে তাদের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমির দলিল রেজিষ্ট্র্রী করা হয়। এ বছরের ১৯ এপ্রিল ২২টির স্থলে ৩১টি, ২৪ এপ্রিল ১২০টির স্থলে ১৩২টি এবং ১৯ মে ৫৩টির স্থলে ৭৪ টি কবুলিয়াত দলিল রেজিষ্ট্রী করা হয়। এই ৪২টি দলিলে সর্বোচ্চ তিন একর থেকে নিচে এক একর করে খাস জমি বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে। ৬০ এর দশক থেকে ২০০২-২০০৩ দশকের তালিকার কেস নম্বর থেকে ৪২ টি নামে এই পরিমান খাস জমি মুজিব শতবর্ষের তালিকায় ঢুকিয়ে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। যার অনুমোদন নিতে হয়েছে জেলা প্রশাসনের কাছ থেকেও। কবুলিয়াতের দুই শতক লেখা জায়গায় হাতের লেখায় কাটা ছেঁড়া করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার সঙ্গে সাবরেজিষ্ট্রী অফিসের যোগসাজশ থাকার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ। কারণ মুজিববর্ষের সকল কবুলিয়াত রেজিষ্ট্রীতে দুই শতক খাস জমি দেয়ার কথা লেখা থাকলেও কিভাবে একে একে ৪২টি কবুলিয়াত রেজিষ্ট্রী করা হয়েছে সর্বোচ্চ তিন একর খাস জমির।
খেপুপাড়া সাব রেজিষ্ট্রার রেহেনা পারভিন বলেন, যেহেতু ভূমিহীন গৃহহীনদের দলিল ছিল, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সই ছিল। সার্ভেয়ার তাড়াহুড়া করে নামজারির কথা বলেছে। তাই সরল বিশ্বাসে প্রত্যেক পাতা দেখিনি। এখন তো দেখি এই অবস্থা।’ সাবরেজিষ্ট্রী অফিসের অপর একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি বন্দোবস্ত কেসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিল। বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর সকল কাগজ পত্র উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হস্তগত করেছেন। তবে এ অনিয়মের সাথে আর কে কে জড়িত এমন প্রশ্ন এখন অফিস পাড়ায় মানুষের মুখে মুখে ঘুরপাঁক খাচ্ছে।
এদিকে ৪২ বিত্তবানের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাস জমি দলিল রেজিষ্ট্রী কান্ডে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক এর সই স্ক্যানিং করে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির এমন অপকর্ম করেছে বলে দাবী করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি সার্ভেয়ারকে অভিযুক্ত করে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, বিত্তবানদের নামে দেয়া ৭২ একর খাস জমি বন্দোবস্ত কেসগুলো বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com