প্রতিনিধি
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় সন্তান প্রসব করলেন একজন দরিদ্র মা।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মা ও শিশু দুজনকেই বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলার ফুলঝুরি এলাকার দরিদ্র রিক্সা চালক ইব্রাহিমের স্ত্রী লিমা আক্তার প্রসব বেদনা নিয়ে মঙ্গলবার ( ২৬ জুলাই ) সকালে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি।
প্রচন্ড প্রসব বেদনায় যখন ছটফট করছিলেন রাত সাড়ে ১০ টার দিকে প্রসূতি মা লিমা আক্তার কে আল রাজী নামের স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে পাঠানোর কথা বলেন জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত নার্স। বেসরকারি ওই ক্লিনিকে গেলে সেখানেও চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকৃতি জানান কর্তৃপক্ষ।
এরপরই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন বরগুনা জেলা যুবলীগের এককর্মী আবু হানিফ দোলন। হাসপাতাল সহ একাধিক বেসরকারি ক্লিনিক এর সাথে কথা বলেও প্রসূতি মা লিমা আক্তারের চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারেননি তিনি।
এমন পরিস্থিতিতে বরগুনার পশু হাসপাতাল সড়কেই সন্তান প্রসব করেন অভাগা মা লিমা আক্তার।
এরপর জেলা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে।
প্রত্যক্ষদর্শী যুবলীগ নেতা আবু হানিফ দোলন বলেন, রাত সাড়ে ১১টার দিকে আলরাজি ক্লিনিকের সামনে দিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। এমন সময় ক্লিনিকের ভেতরে দুই নারীর আহাজারি দেখে তাদের কাছে গেলে পুরো বিষয়টি জানতে পারি। আমি ওই প্রসূতিকে শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাই নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই বাচ্চা প্রসব করেন।
রীমা বেগমের মা বলেন, হাসপাতাল দিয়া মোগো প্রাইভেটে পাডাইছে। মোগো টাহা নাই তাও প্রত্যেকটা প্রাইভেট হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি চিকিৎসার লাইগা হেগোও ডাক্তার নাই। কেউ পারলোনা আমার মাইয়ার চিকিৎসা দিতে। আমার নাতি শেষ পর্যন্ত রাস্তায় হওয়া লাগলো।
শেফা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. জান্নাতুল আলম লিমা গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ডিউটি শেষে বাসায় গিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পর খবর পাই, পশু হাসপাতাল সড়কে এক নারী সন্তান প্রসব করেছেন। তাকে উদ্ধার করে আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তখন সঙ্গে সঙ্গে আমি ছুটে এসে ওই নারীকে দেখি। তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ায় অবস্থা গুরুতর, তাই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। তবে নবজাতক সুস্থ আছে কিন্তু সেও আশংকামুক্ত নয়।
এ ব্যাপারে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সোহরাব হোসেন বলেন, ওই প্রসূতি গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়। প্রসুতির প্রথম বাচ্চা বিধায় সন্ধ্যার পর প্রসবে জটিলতা দেখা দেয়। এ অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হতে পারে এই আশঙ্কায় দায়িত্বরত সিস্টার প্রসুতিকে উন্নত চিকিৎসার পরামর্শ দেন। পরে ওই প্রসুতিকে নিয়ে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সড়কেই সন্তান প্রসব করেন প্রসূতি। এমন পরিস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রসুতি ও নবজাতককে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।
রীমাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, রীমার রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। এখন আশঙ্কামুক্ত বলা যায়। ইতোমধ্যেই তাকে এক ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে। আরও দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com