দেশের পাঁচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে এবার দলীয় টিকিট পাননি বরিশালের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। আর এ নিয়ে রাজনীতির অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ। তবে মনোনয়ন না পাওয়ার নেপথ্যে সাদিকের বিরুদ্ধে থাকা নানা অভিযোগ উঠে এসেছে।
জানা যায়, বরিশাল সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহকে বাদ দিয়ে তার চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোয়নয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মাধ্যমে বরিশালের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি করলো বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে গত ৫ বছরে একাধিক বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। তার সঙ্গে স্থানীয় প্রশাসনের বিরোধ হয়েছিল এবং যার জের ধরে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার লাঞ্ছিত হবার ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি সামাল দিলে পরবর্তিতে সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠে।
বরিশাল জেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামানের সঙ্গে তর্কে জড়ান। ইউএনও মনিরুজ্জামানকে স্টুপিড বলে সম্বোধন করেন তিনি। এনিয়ে প্রশাসনের লোকজন বিরক্ত সাদিকের প্রতি। এছাড়া সিটি করপোরেশনের দাপ্তরিক কাজগুলো রাতের বেলায় নিজ বাসায় বসে করা,সিটি কর্পোরেশনের প্রায় দু শতাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা,শতাধিককে বিনা বেতনে ওএসডি করে রাখা, জন্ম নিবন্ধনের কাজে সেবা প্রার্থীদের ভোগান্তি, নতুন ভবনের অনুমোদনের জন্যও নানা ধরনের ভোগান্তি,মাত্রাতিরিক্ত কর বাড়ানো,বাস টার্মিনাল দখলের ইন্ধন,বিসিকের ব্যবসায়ীদের হয়রানী,কথায় কথায় ময়লা আবর্জনা দিয়ে সড়ক অবরোধ,লঞ্চ -বাস অবরোধ,সড়কে পার্ক নির্মান,
সকল বাজার নিজ দখলে রাখা,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রুপিং সৃষ্টিসহ এন্তার অভিযোগ সাদিকের বিরুদ্ধে। ৮ থেকে ১০ জন লোক নিয়ে তার রাজনীতি ভালো ভাবে নেয়নি স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতারা। নিরব হোসেন টুটুল নির্ভর রাজনীতির কারনে ক্ষুব্ধ আওয়ামীলীগের অধিকাংশ শীর্ষ নেতারা।
বিশেষ করে দলের অন্যান্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা, সাংবাদিকদের নির্যাতন করা,সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া, প্রশাসনের সাথে উচ্ছৃংখল আচরণ করা– এক ধরণের বলপ্রয়োগনীতির মাধ্যমে বরিশাল পরিচালনার অভিযোগ উঠেছিলো সাদিক আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে।
এই সমস্ত অভিযোগগুলোর প্রেক্ষিতেই সাদিক আব্দুল্লাহকে এবার মনোনয়ন দেয়া হয়নি বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য বলেছেন, সাদিক আব্দুল্লাহর অতীত কর্মকাণ্ড অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনভিপ্রেত। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে ভোটারদের কাছে ভুল বার্তা যাবে এবং আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী ও দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দেয় এমন ধারণা পাওয়া যাবে।
সাদিক আব্দুল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর পুত্র। বরং তার বদলে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ছোটভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দেয়া হলো।
বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত শীতল। হাসনাত আব্দুল্লাহর কারণে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ দীর্ঘদিন রাজনীতিতে কোণঠাসা হয়েছিলেন। এবং সেখান থেকেই শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করলেন।