কপাল পুড়ল সাদিক আবদুল্লাহর। বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। কিন্তু কেন তাঁদের কপাল পুড়ল, এই প্রশ্নে চলছে নানা আলোচনা।
দলীয় সূত্র বলছে, বরিশালের মেয়রের কপাল পুড়েছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে। তবে ক্ষমতাসীন দলের মেয়র পদে এই পরিবর্তন ভোটের মাঠে কতটা কাজে দেয়, সেটা হয়তো সময়ই বলে দেবে। দলের ভেতরে এরই মধ্যে কিছুটা দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।
এক দশক ধরে কাছাকাছি সময়ে দেশের পাঁচটি সিটি করপোরেশনের ভোট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এগুলো হচ্ছে গাজীপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট। এর আগে কখনোই একসঙ্গে তিন সিটিতে নতুন প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে মেয়র থাকা অবস্থায় পরবর্তী নির্বাচনে কেউ বাদ পড়েননি।কেন এবার পরিবর্তন আনা হলো? এই প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক বলছেন, বিএনপি সিটি করপোরেশনের ভোটে অংশ নেবে না—এটা প্রায় নিশ্চিত। ফলে আওয়ামী লীগকে প্রার্থী পরিবর্তনে খুব একটা ভাবতে হয়নি। যদিও শক্ত প্রতিপক্ষ ছাড়া এই নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের পর দলের ভেতরে কিছুটা দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে, এমন আশঙ্কা ছিল। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে এবারের সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সে জন্য দলের প্রতীকের পাশাপাশি প্রার্থীর ভাবমূর্তি ও যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।
মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাজীপুর, বরিশাল ও সিলেটে যাঁদের প্রার্থী করা হয়েছে, তাঁদের বিষয়ে কোনো বিতর্ক নেই। কেউ তাঁদের খারাপ প্রার্থী বলতে পারবে না। অন্যদিকে রাজশাহীতে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও খুলনায় তালুকদার আবদুল খালেকও মেয়র হিসেবে অনেক কাজের প্রশংসা পেয়েছেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেছেনও, প্রার্থীদের নিজের যোগ্যতায় বিজয়ী হয়ে আসতে হবে। দল কাজ করবে। তবে কেউ সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচিত হবেন, এমন ভাবলে ভুল করবেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, সিটি নির্বাচনকে ঘিরে কোনোভাবেই যাতে বিরোধী দল ইস্যু তৈরি না করতে পারে, সেই চেষ্টা থাকবে আওয়ামী লীগের। দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ভোটের নজির সৃষ্টির লক্ষ্য আওয়ামী লীগের।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘জনগণের ভোটে অংশগ্রহণ ও উৎসাহ সৃষ্টি আমাদের লক্ষ্য।
তাই নির্বাচনে যাদের জনগণ সবচেয়ে কাছের বা পছন্দের মূল্যায়ন করতে পারবে বলে মনে হয়েছে, তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সেরা প্রার্থীকেই দলের মনোনয়ন দিয়েছে।’
মনোনয়নের লড়াইয়ে বরিশালে চাচা জয়ী
বরিশালে চাচা-ভাতিজার লড়াইয়ে দলের সমর্থন গেছে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর ওপর। তাঁর ভাতিজা ও বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বাদ পড়েছেন।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বরিশাল সিটি নির্বাচনের প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। শুরুর দিকে আলোচিত প্রার্থী না থাকায় বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ আবারও নৌকার কান্ডারি হচ্ছেন—এমন কথা শোনা যাচ্ছিল। এ ছাড়া কেন্দ্র, বরিশাল নগর ও জেলা আওয়ামী লীগে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর প্রভাব রয়েছে। ফলে তাঁর ছেলে সাদিক আবদুল্লাহর সম্ভাবনাই বেশি আলোচিত ছিল।
কিন্তু আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেওয়ায় আলোচনায় ভিন্ন মোড় নেয়। তখনই বর্তমান মেয়রের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডগুলো আবারও আলোচনায় আসে। বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের বিবাদ, ভোট দিতে গিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে বাদানুবাদের ঘটনা, স্থানীয় মন্ত্রীর সঙ্গে বিভেদসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সামনে আসে।
বরিশালে সাদিক আবদুল্লাহকে বাদ দেওয়া বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের একজন সদস্য বলেন, বরিশালের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান মেয়রের পাঁচ বছরের আমলনামাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। জরিপেও এলাকায় তাঁর অবস্থার ভালো চিত্র পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে দলের হাইকমান্ড তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হওয়ায় চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আরেকজন নেতা বলেন, আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে মনোনয়ন দেওয়ার পেছনে পারিবারিক ‘সহানুভূতি’ কাজ করেছে। কারণ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে হিসেবে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর পরিবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন প্রভাব বিস্তার করে আসছে। তাঁর ভাই হয়েও আবুল খায়ের আবদুল্লাহর তেমন কোনো পদ-পদবি নেই। এ জন্য পরিবারের সদস্য হিসেবে এবার তিনি শীর্ষ নেতৃত্বের সহানুভূতি পেয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বরিশালের প্রার্থী ঠিক করার প্রশ্নেই আলোচনা হয়েছে বেশি। সে সময় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বাবা ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। তবে তিনি তেমন কিছুই বলেননি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোন আমেনা বেগম ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাত দম্পতির ছোট ছেলে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। আবদুর রব সেরনিয়াবাত ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হন। ওই রাতে আবুল খায়ের আবদুল্লাহর দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। তবে বড় ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও আবুল খায়ের আবদুল্লাহ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। কয়েক বছর দেশের বাইরে এবং খুলনায় নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই অনেকটা নিভৃতে ছিলেন। এর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন আবুল খায়ের আবদুল্লাহ। তবে সেখানে মনোনয়ন পেয়েছিলেন ভাতিজা সাদিক আবদুল্লাহ। এবার ভাতিজার পরিবর্তে চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ পেলেন মনোনয়ন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com