মামুনুর রশীদ নোমানী : সমগ্র বিশ্ব ও বাংলাদেশ এখন চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। থমকে গেছে জীবন। পরিবর্তন হচ্ছে যাপিত জীবন। চারপাশে শধু মৃত্যুর খবর। প্রাকৃতিক প্রতিশোধের রোষানলের অগ্নিতে পুড়ছে পৃথিবী। অদেখা করোনাভাইরাসের ভয়াবহ ছোবলে এলো-মেলো হয়ে গেছে বিশ্ব পরিবেশ। বিশ্ব শক্তিধর দেশগুলোর হযবরল অবস্থা হয়ে যাচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে। ভেঙ্গে পড়ছে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড।
কমছে কর্ম, বাড়ছে ক্ষুধা। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাসটি। প্রতিদিন আক্রান্তের ও মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগ ও রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক সিদ্ধান্তের ফলে দেশের সার্বিক অবস্থা এখনো নিয়ন্ত্রনেই বলা যায়।তবে গার্মেন্টস খাতসহ কিছু কিছু সেক্টরে সিদ্ধান্তহীনতা ও সমন্বয়হীনতার কারনে আমাদের দেশেও বিপদ ঘিরে ফেলছে।কিছু সংখ্যক লোক ঘরে থাকছেন না।মানছেন না সরকারের নির্দেশনা।
দেশের এই বিপদকালে নিরবিচ্ছিন্ন তথ্যপ্রবাহ চাল রাখতে সাংবাদিকরা দিনরাত কাজ করে চলছেন।রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত সাংবাদিক সমাজ এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সঠিক তথ্য প্রচারের মাধ্যমে সরকারকে সহায়তা করছে গণমাধ্যমগুলো।পেশাগত এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সংবাদকর্মীদের।
জীবনের ঝুকি নিয়ে জাতীয় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন সাংবাদিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।করোনাভাইরাসের বিপদ মোকাবেলায় সরকারের নির্দেশে পুরো দেশ কার্যত লকডাউন-এ রয়েছে।অফিস-আদালত ,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,যানবাহন,ব্যবসা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানসহ সবকিছুই প্রায় বন্ধ।বেশির ভাগ মানুষ কাজে বের হচ্ছে না। তাই সংবাদপত্র পাঠকের সংখ্যা রেকর্ড হারে কমছে। ব্যাপভাবে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে সংবাদপত্র ছাপা ও সরবারহের কাজ।
সংবাদপ্রত্রের অফিস ব্যবস্থাপনা ছোট করে সংবাদপ্রত্রের কলেবর কমিয়ে প্রিন্ট সংস্করণ অব্যাহত রাখকে গিয়ে প্রত্রিকাগুলো নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে প্রতিদিন।বেশিরভাগ প্রত্রিকা অফিসে নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যাক গাড়ি,সাংবাদিকদের জন্য পর্যাপ্ত মাস্ক,গ্লাভস,পিপিই ও স্যনিটাইজার।বহু প্রত্রিকা অনলাইন ও ইলিকট্রনিক মিডিয়ার বেতন ও হচ্ছে না নিয়মিত।বর্তমান অবস্থার সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে ও নানা সমস্যার জন্য ইতিমধ্যেই অনেক দৈনিক প্রত্রিকা ঘোষনা দিয়ে প্রিন্ট সংস্করণ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে।বিদ্যমান বৈরী অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে আরও বেশকিছু প্রত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্রিকা বিক্রেতা এজেন্টরা নিরাপত্তার কারনে প্রত্রিকা বিলি-বন্টন ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয়,জেলা ও উপজেলা শহরে এবং গ্রাম এলাকাতে ও নির্বিঘ্নে প্রত্রিকা বিলি করতে পারছে না হকার এজেন্টরা। বহু বাসাবাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না তাদের। সংবাদপ্রত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না-একথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষঙ্গরা বার বার বলার পরও পাঠাকের মনের সন্দেহ দূর হচ্ছে না। প্রত্রিকা ছাড়ার পরেও পৌছানো যাচ্ছে না পাঠকের কাছে। যার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সংবাদপত্র শিল্পের সাথে জড়িত হকার, এজেন্ট,বিট পিয়ন,প্রেস শ্রমিক-কর্মচারী,পরিবহন সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীসহ হাজার হাজার মানুষ। নিম্ম মধ্যবিত্ত এই বিপুল সংখ্যক হকার-এজেন্ট জীবন যেমন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তেমনি সাংবাদিকদের বিরাট অংশ আজ চরম সংকটের মধ্যে পড়েছে।
দেশের চলমান সার্বিক সঠিক অবস্থা বিবেচনা করে মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই দুই দফায় রফতানি খাত ও সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের জন্য প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষনা করেছেন। করোনাভাইরাস মোকাবেলায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক পুলিশ,সেনাবাহিনীর সদস্য সংশ্লিষ্ট অন্যদের ঘোষণা করা বিশেষ বিমা কর্মসূচি। দায়িত্ব পালনকালে তারা করোনায় আক্রান্ত হলে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা এবং কেউ মারা গেলে ২৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা সহায়ক পারেন। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের জন্য দুস্থ-গরিব ও অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক কর্ম তৎপরতা চলানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পাশাপাশি বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান ও এগিয়ে এসেছেন দুর্গত মানুষের পাশে।
দেশের এই দুর্যোগ মোকাবেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তথ্য প্রবাহ সচল রাখতে যারা জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের মধ্যে শুধুমাত্র সাংবাদিকরাই প্রণোদনাসহ অন্য সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। সাংবাদিকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী আমরা আপনার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
আনুষ্ঠানিক ভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার দাবি :
করোনা পরিস্থিতি সামলে জনগণের সংবাদের চাহিদা মেটাতে, গণমাধ্যমকর্মীদের আর্থিক সুরক্ষা দেয়ার দাবি এবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হলো সরকারের কাছে। ৯ দফা প্রস্তাবে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমাসহ সুরক্ষার নানা দাবি তুলে ধরা হয়।
প্রাণঘাতী ভাইরাসের থাবায় সমাজের সব শ্রেণির মানুষ সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে, প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে ঘরের ভেতর। এই মানুষগুলোর কাছে করোনা পরিস্থিতির আপডেটসহ নানা খবর পৌঁছে দিতে নিরলস কাজ করছেন সাংবাদিকরা। এরই মধ্যে দেশে অসংখ্য সংবাদকর্মী করোনা পজিটিভ নিয়ে চিকিৎসাধীন।মৃত্যু বরন করেছেন চার সাংবাদিক।
করোনার প্রভাবে যখন অর্থনীতির সব খাতই প্রায় ক্ষতির সম্মুখীন, তখন গণমাধ্যমও এর বাইরে নয়। বিজ্ঞাপনের বাজারে সংকটের জটিল অঙ্কে গণমাধ্যমকর্মীদের এখন বেতন-ভাতাও প্রায় অনিশ্চিত। এ অবস্থায় এই শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়ে আবেদন জানানো হলো। তথ্যমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকের পর, সাংবাদিক নেতারা জানান- গণমাধ্যম বাঁচাতে হলে আর্থিক সহায়তার বিকল্প নেই।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা দিচ্ছেন। আমরা মিডিয়া কর্মীরারাও প্রণোদনা পাবার যোগ্য। আমরা চাই অন্তত ৩ মাসের একটি বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হোক।
এই দুর্যোগের পরিস্থিতিতে কর্মরত সংবাদকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেলিভিশন চ্যানেলে সরকারি বিজ্ঞাপনের ব্যবস্থা করাসহ ৯ দফা প্রস্তাবনা দেয়া হয় তথ্যমন্ত্রীর কাছে।
দ্রুত এসব প্রস্তাবনা আমলে নিয়ে অন্যান্য খাতের মতো গণমাধ্যম বাঁচাতেও সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেবেন বলেও প্রত্যাশা সাংবাদিক নেতাদের।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা তালিকায়
জেলা-উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন করে বিশেষ প্রণোদনা দিতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে (ডিসি) চিঠি দিয়ে প্রেস কাউন্সিল তা প্রত্যাহার করে নেয়।
গনমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা তালিকায় গনমাধ্যম কর্মীদের তালিকাভুক্ত করার দাবী জানিয়েছেন।
লেখক :নির্বাহী পরিচালক, এফ এফ এল বিডি ফাউন্ডেশন।
[email protected]
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com