পবিত্র ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফেরার সময় নিজ দেশেরই বিমানবন্দরে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলে জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি সরকারকে নিয়ে তাঁর সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি চুপ থাকলেও চুপ থাকেনি চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সংগঠনটির সভাপতি ও দেশের গুণী পরিচালক কাজী হায়াৎ বলেছেন, ‘মাহিকে এভাবে হুড়োহুড়ি করে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়াটা আমি ব্যক্তিগতভাবে সমীচীন মনে করিনি। মানবিক দিক থেকেও সঠিক হয়নি।’
ওমরাহ পালন শেষে দেশে ফেরার সময় নিজ দেশেরই বিমানবন্দরে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে মাহিকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে পুলিশের করা মামলায় ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মাহিকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে গাজীপুর আদালতে নিয়ে মাহির সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালতের বিচারক রিমান্ড মঞ্জুর না করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মাহিকে গ্রেপ্তার করায় ক্ষুব্ধ বিনোদন অঙ্গনের অনেকে। তাঁরা এভাবে মাহিকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তবে চুপ আছে চলচ্চিত্রশিল্পী মাহির সংগঠন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি।
ওমরাহ পালন থেকে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা মাহির গ্রেপ্তারের খবর শুনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি ও গুণী পরিচালক কাজী হায়াৎ প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাহি একজন শিল্পী।
সে যদি আইন অমান্য করেও থাকে, তার জন্য একটু মার্সি থাকা উচিত ছিল। তাকে অন্তত কোর্টে হাজিরা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল। এভাবে এয়ারপোর্ট থেকে একেবারে বন্দী করে নিয়ে যাওয়াটা মোটেও ঠিক হয়নি। সে প্রেগন্যান্ট—এই মানবিক দিকটাও অন্তত বিবেচনা করা উচিত ছিল।’
ক্ষুব্ধ কাজী হায়াৎ আরও বললেন, ‘এয়ারপোর্ট থেকেই মাহিকে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যেতে হবে, এই ধরনের কোনো পরিস্থিতি কিন্তু তৈরি হয়নি। সে তো পালিয়ে যাচ্ছে না। সে তো তার দেশেই আসছে নাকি। তার সঙ্গে পরে কথা বলতে পারে, “ম্যাডাম, আপনার বিরুদ্ধে একটা মামলা হয়েছে। আপনি যদি না যান, তাহলে অ্যারেস্ট করব। আপনি চলেন, আমাদের সঙ্গে আদালতে কিংবা পুলিশের কাছে।” এভাবে তাঁকে হুড়োহুড়ি করে অ্যারেস্ট করে নিয়ে যাওয়াটা আমি ব্যক্তিগতভাবে সমীচীন মনে করিনি। মানবিক দিক থেকেও সঠিক হয়নি।’
কথায়–কথায় কাজী হায়াৎ ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়েও কথা বললেন। তিনি বললেন, ‘আমার মতে, সংবিধানের ৩৯–এর (ক) ধারায় ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের অধিকার দেওয়া হয়েছে। বাক্স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেই ৩৯ ধারা অনুযায়ী সব আইন হতে হবে। সেই ৩৯ ধারা অমান্য করে কোনো আইন আমার কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এখন যাঁরা বিশেষজ্ঞ, সংবিধানবিশেষজ্ঞ—তাঁরা এগুলো বিবেচনা করবেন যে ৩৯–এর ধারা অনুযায়ী এই আইন হয়েছে কি না।’
চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে এভাবে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে দেশের সবার মধ্যে একটা ভয়ের বার্তা দেওয়া হচ্ছে বলেও মনে করছেন গুণী পরিচালক কাজী হায়াৎ।
তিনি বললেন, ‘এভাবে গ্রেপ্তারের বিষয়টা ভয়ের বিষয়। আতঙ্কের বিষয়। আমি মনে করি, প্রচণ্ডভাবে একটা আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা। এই ধরনের ঘটনা, একটা পুরো জাতির বিবেকের আতঙ্ক। এই জন্য আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন হইনি। আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। মুক্তির জন্য যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও কথা ছিল—এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর সেই বাংলাদেশে এসব দেখলে কষ্ট হয়। আর কিছু বলার নেই। আমারও ভয় আছে। আতঙ্ক আছে।’
সম্প্রতি মাহিয়া মাহি ওমরাহ পালন করতে স্বামীর সঙ্গে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সেখান থেকেই গতকাল শুক্রবার ভোরে ফেসবুক লাইভে এসে অভিযোগ তোলেন, গাজীপুরে অবস্থিত তাঁদের গাড়ির শোরুমে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ওই ঘটনায় স্থানীয় পুলিশের বিরুদ্ধে ‘ঘুষ’ নেওয়ার অভিযোগও তোলেন তাঁরা। এদিন রাতেই মাহি-রকিবের বিরুদ্ধে মামলা করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ। সেই সূত্রে দেশে ফেরামাত্রই মাহিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com