দর্শনার্থীদের জন্য থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা করা হলে পর্যটনের নতুন দিগন্ত হতে পারে দখিনা হাওয়া বিচটি, এমনটাই মনে করছেন এলাকাবাসী। বিচটির সৌন্দর্য বাড়ানোসহ উন্নয়নের জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরকন্যা হিসেবে ভোলার মনপুরা উপজেলার সৌন্দর্য দেশব্যাপী পরিচিত। এখানকার চারপাশ জুড়ে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ এক সৌন্দর্যের লীলাভুমি। নতুন করে এখানেই প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে দখিনা হাওয়া সি-বিচ। এটি উপজেলার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে সাগর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত। এ দ্বীপটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অন্যতম এক পর্যটন কেন্দ্র।
প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য দেখেই এটিকে আরো আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেয় স্থানীয় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। তারই ধারাবাহিকতায় এখানে ছাতা, চৌকি, ছাউনি ও ওয়াশজোনসহ নানা স্থাপনা বসানো হয়েছে।
সাঁতার কাটার আয়োজনের পাশাপাশি ঘুরে বেড়ানের জন্য রয়েছে স্পিডবোটের ব্যবস্থা। দ্বীপের সৌন্দর্যের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
এখানে এলেই দেখা যাবে সাগরের উত্তাল ঢেউ, প্রকৃতির নির্মল বাতাস আর মনোরম দৃশ্য, এতেই মন জুড়িয়ে যায় পর্যটকদের। শুধু তাই নয়, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দেখা মেলে এখানে বসেই। গভীর বনের বৃক্ষ-তরুলতা দখিনা সি-বিচের সৌন্দর্য যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে কাজ করছে একদল স্বেচ্ছাসেবী দল। এখানে থাকা-খাওয়ার সু-ব্যবস্থাসহ আরো কিছু সুযোগ সুবিধার দাবি দর্শনার্থীদের।
পর্যটক আনিসুর রহমান টিপু বলেন, দখিনা হাওয়া সি-বিচে এর আগে একবার এসেছিলাম। এবার পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছি। সত্যি অনেক ভালো লাগছে।
ঘুরতে আসা পর্যটক শাওন ও মামুন বলেন, এখানে এসে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার মতই দেখতে ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচ’। প্রকৃতির এমন সৌন্দর্য সত্যিই মুগ্ধ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ জুয়েল বলেন, প্রতিদিন দখিনা হাওয়া সি-বিচে মানুষের সমাগম হয়, তবে শুক্র ও শনিবার এর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। বিভিন্ন জেলার মানুষ আসেন এই বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
ভোলা শহরের বাসিন্দা বিজয় বাইন জানান, আমি দুই দিন আগে দখিনা হাওয়া সি-বিচে ঘুরে এসেছি, সত্যিই আমি মুগ্ধ। ভোলায় এমন সুন্দর পর্যটন স্পট রয়েছে জানতাম না, এটি সত্যিই অতুলনীয়। বিচটি এতো নান্দনিক এখানে যে আসবে তারই মন জুড়িয়ে যাবে।
ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানালেন, দখিনা হাওয়া সি-বিচ যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি আকর্ষণীয়। কিন্তু এখানে যদি থাকা ও এবং খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে এটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং আরো পর্যটকের সমাগম হবে।
সম্প্রতি নতুন এই পর্যটন স্পট দখিনা হাওয়া সি-বিচ উদ্বোধন শেষে এর উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।
নতুন সি-বিচকে ঘিরে এই এলাকাকে পর্যটকমুখী করতে নানা উদ্যোগের কথা জানিয়ে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অলিউল্যাহ কাজল বলেন, কক্সবাজার এবং কুয়াকাটার মতই ভ্রমণ করার মত স্থান দখিনা হাওয়া বিচ। এর একপাশে সাগর ও অন্য তিন দিকে বনভূমি রয়েছে যার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে দর্শনার্থীরা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় এখানে বসেই। এ পর্যটন কেন্দ্রটিকে আরো সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে কাজ করছি।
সাগর উপকূলের দ্বীপ দক্ষিণা হাওয়া সি-বিচের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগাতে নানামুখী উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কথা জানালেন মনপুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেলিনা আক্তার চৌধুরী।
তিনি বলেন, এ বিচটিকে ট্যুরিজমের জন্য প্রস্তুত করতে আমরা চেষ্টা করছি। এই সি-বিচটি আরো সৌন্দর্যবর্ধন করতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। আমরা ইতোমধ্যে পর্যটন করপোরেশন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি, আশাকরি খুব শিগগিরই বিষয়টি তারা দেখবেন। এখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে আরো বেশি পর্যটকের আগমন ঘটতো। পর্যটন কেন্দ্রের জন্য যত ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকার কথা তার সব করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আমরা।
ভোলার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা খুব শিগগিরই স্পটটি সরেজমিনে দেখবো এবং যদি পর্যটন স্পটের সম্ভাবনা থাকে তাহলে আমরাও সুপারিশ করবো। এছাড়া পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় সেই বিষয়টিও দেখা হবে। এখানে পর্যটন স্পট হলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং আর্থিক স্বচ্ছলতাও বাড়বে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
যেভাবে যাওয়া যাবে দখিনা হাওয়া সি-বিচে: ঢাকা সদরঘাট থেকে হাতিয়া কিংবা মনপুরাগামী লঞ্চে উঠতে হবে। এরপর মনপুরা ঘাটে নেমে অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে করে যাওয়া যাবে দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের ‘দখিনা হাওয়া সি-বিচে’। এছাড়াও ভোলার তজুমদ্দিন, দৌলতখান ও চরফ্যাশন উপজেলা থেকেও লঞ্চ বা স্পিড বোটে যাওয়া যাবে ওই বিচে।