সাব্বির আলম বাবু, বিশেষ প্রতিনিধি:
ভোলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি বৃদ্ধ মফিজল মিয়া। মুখে অক্সিজেন লাগানো। সকালেই শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। উপসর্গ থাকায় তাকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
মফিজল মিয়ার ছেলে সেলিম বলেন, ‘সকালে সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়ন থেকে বাবাকে নিয়ে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসি। পরে আমাদের করোনা ইউনিটে পাঠানো হয়। করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কি-না, এজন্য পিসিআর ল্যাবে নমুনা দিতে বলেন চিকিৎসক। করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর কর্তব্যরত নার্স এসে মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে চলে যান।’ তিনি বলেন, ‘ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পিসিআর ল্যাবে করোনা পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকাও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু সকাল সাড়ে ৭টায় করোনা ইউনিটে ভর্তি হওয়ার পর দুপুর ১২টা পেরিয়ে গেলেও নমুনা সংগ্রহ করা হয়নি। করোনা ইউনিটে কোনো চিকিৎসকও আসেননি।’
করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন হাসনুর বেগমের ছেলে আকবর আহমেদ রুদ্র অভিযোগ করেন, ‘গত ২৭ জুন থেকে আমার মাকে নিয়ে করোনা ইউনিটে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো ডাক্তার রুমে এসে চিকিৎসাসেবা দেননি। ডাক্তার এলে নার্সরা ওয়ার্ডে থাকেন। বাইরে থেকে ফাইল দেখে আবার চলে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতাল থেকে ওষুধ দেওয়া হলেও বেশকিছু ওষুধ বাইরের দোকান থেকে কিনতে বলা হয়। করোনা ইউনিটে রোগীর সেবায় আমরা যারা থাকি তাদেরকেই বাইরের দোকানে যেতে হয় ওষুধ আনতে। এভাবে আমাদের মাধ্যমেও সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে।’ করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন লোকমান হোসেন বলেন, ‘১৭ দিন ধরে আমি করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন। এখানকার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে আমি যতটুকু সুস্থ ছিলাম তার চেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। এটা করোনা ওয়ার্ড না যেন মৃত্যুপুরী।’
আরেক করোনা রোগীর স্বজন উৎস বলেন, গত ৩০ জুন আমার মা করোনায় আক্রান্ত হন। তার দেখভাল করতে এসে আমারও ঠান্ডা-জ্বর শুরু হয়। টেস্ট করার পর আমারও করোনা শনাক্ত হয়। আমি ১ জুলাই ভর্তি হই। এ ওয়ার্ডের যে অবস্থা, সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে।’ তিনি বলেন, করোনা ইউনিটের দুটি ওয়াশ রুমের একটিতেও বদনা নেই। বেসিনগুলোর বেহাল অবস্থা। ওয়ার্ড বয়রা এসে ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো দায়সারা কাজ করে চলে যায়। যেখানের ময়লা সেখানেই থাকে যায়। করোনা ইউনিটের বর্জ্য আগুনে পুড়িয়ে মাটিচাপা দেওয়ার কথা থাকলেও ভোলা সদর হাসপাতালে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। করোনা ইউনিটের সিঁড়িতে, জানালার পাশে এবং নমুনা সংগ্রহের রুমের পাশে খোলা স্থানে করোনা ইউনিটে ব্যবহৃত গ্লাভস, মাস্ক, সিরিঞ্জ, পানির বোতল, পিপিই, রোগীর পোশাক ও নানা প্লাস্টিকের সামগ্রী পড়ে আছে। খোলা জায়গায় ফেলে রাখা হয়েছে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বর্জ্যও। পাখি ও বাতাসের মাধ্যমে এসব বর্জ্যের দূষণও ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়। যা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ।
এ বিষয়ে করোনা ইউনিটে কর্তব্যরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আছিয়া বেগম বলেন, করোনা ইউনিটের বর্জ্য আগুনে পোড়ানোর জন্য সুইপাররা নিয়ে যান। জানালার পাশে যেগুলো দেখা যাচ্ছে তা রোগীর স্বজনরা ফেলেছেন। এগুলো অপসারণের ব্যবস্থা চলছে। জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘স্থায়ী জিনিস গুলো ১৪ দিন পরপর ওয়াশে দেওয়া হয়। আর যে বর্জ্যগুলো ধ্বংস করা হয় তা আমাদের নমুনা সংগ্রহের রুমের পাশেই ড্রামের ভেতরে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ওয়ার্ডের বর্জ্যগুলো পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে সব কার্যক্রম শেষ। আমরা সাইড সিলেকশন করে দিয়েছি। আশা করি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য অপসারণে আর কোনো ঝামেলা হবে না।’
ভোলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্ত হয়েছেন ২১০৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ২০০২ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৬ জন। করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৬০ জনের। বর্তমানে ভোলা সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন ১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ জন এবং নারী চারজন। এছাড়া ৭৬ জন হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com