বাবুগঞ্জ প্রতিনিধি :
বরিশালের বাবুগঞ্জের কেদারপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ভুতুরদিয়া গ্রামে নিহত দুই নারীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করছে পুলিশ। তবে কী কারণে, কেন এ হত্যাকাণ্ড ও কারা এর সঙ্গে জড়িত সেটি নিয়ে তদন্ত করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
হত্যাকাণ্ডের শিকার ওই দুই নারী হচ্ছেন- গৃহবধূ নাজমুন্নাহার রিপা ও তার দাদি শাশুড়ি ১০২ বছর বয়সী লালমুন্নেছা। এ ঘটনায় মিনারা বেগম শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। রিপা ওই গ্রামের খন্দকার বাড়ির সোলায়মান সোহাগের স্ত্রী এবং লালমুন্নেছা সোহাগের দাদি। চিকিৎসাধীন মিনারা সোহাগের মা।
গ্রাম পুলিশ আব্দুল হানিফ প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান, বুধবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার দিকে ওই ঘর থেকে চোর চোর চিৎকার শুনে গ্রামবাসী সেখানে গিয়ে দুটি কক্ষে তিন বিছানায় তিন নারীকে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর ওই তিন জনকে নেওয়া হয় বাবুগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে রিপা ও লালমুন্নেছাকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং মিনারাকে বরিশাল মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে বাবুগঞ্জ থানায় নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, দক্ষিণ ভুতুরদিয়া গ্রামে খন্দকার বাড়ির একটি জরাজীর্ণ টিনশেড ঘরে বসবাস করতেন তারা। নিহত লালমুন্নেছার খাটের নিচ থেকে মাটি খোঁড়া হয়। ওই পরিবারের দাবি, ওই গর্ত দিয়ে চোর ভেতরে প্রবেশ করে বিষাক্ত স্প্রে করে তাদের অচেতন করলে তারা মারা যায়। কিন্তু সেখানে সিঁধ কাটা থাকলেও চোর ঢোকার আলামত পায়নি পুলিশ।
নিহত রিপার ভাই তারিকুল ইসলাম শাওন বলেন, তিন বছর আগে সোলায়ামান সোহাগের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগেই থাকতো। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রিপার গায়ে হাত তুলতো সোহাগ। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত বকাঝকা করতো। এ কারণে তাকে বাড়িতে এনে রাখা হয়। ওই সময় তালাকও দেয় তার স্বামী। পরে সালিশি মীমাংসার পর আবারও বিয়ে করে সোহাগ। তার ধারণা, রিপাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে তার স্বামী।
শাওন আরও বলেন, সোহাগের পরিবার দাবি করছে, চোর এ কাজ করেছে। এ জন্য নিহত লালমুন্নেছার খাটের নিচে বাইর থেকে সিঁধ কাটা হয়। কিন্তু সেখান দিয়ে একজন মানুষ কোনোভাবেই ঘরে প্রবেশ করতে পারবে না। আর প্রবেশ করলেও খাটের নিচে মাকড়সার বাসা ছিল তা নষ্ট হয়নি। এতে বোঝা যায়, ঘরের ভেতরে থেকেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
রিপার বোন মাহিনুর আক্তার শিখা বলেন, মারা যাওয়ার আগে ওই রাতে রিপা তার মায়ের সঙ্গে শেষবার কথা বলেন। তার কোনও অসুখ ছিল না। তাহলে কী কারণে সে মারা যাবে- বিষয়টি তদন্ত করে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের কঠোর শাস্তির দাবি জানান তিনি।
সোহাগের ভাই খন্দকার আলী আকবর জানান, তিনি ঢাকায় কর্মরত। গভীর রাতে রিপা ও তার দাদির মৃত্যুর খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন। তিনিও শুনেছেন, চোর এসেছে। ওই সময় সোহাগ বরিশালে ছিল। তার ধারণা, চোরের করা স্প্রেতে রিপা ও তার দাদির মৃত্যু হয়েছে। মা আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। এ ছাড়া তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
রিপার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় চাকরি করি। এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।
বাবুগঞ্জ থানার ওসি মাববুবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে ঘটনা শোনার পর ওই রাতে পুলিশ ফোর্স নিয়ে সেখানে গিয়ে তিন জনকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে দুজনকে মৃত ঘোষণা করলে তাদের লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়। মিনারাকে বরিশাল মেডিক্যালে পাঠানো হয়।
তবে এ হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত বলে দাবি করেছেন ওসি। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি আরও তদন্ত করে ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা চলছে। রিপা হত্যা মামলায় তার বাবা বাদী হয়ে মামলা করবেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফরহাদ হোসেন বলেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটানটি কী কারণে ঘটিয়েছে এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা নিয়ে অধিকতর তদন্ত চলছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘাতকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com