ভোট টানতে মেয়র সাদিকের বিরুদ্ধে বলাকেই কৌশল হিসাবে নিয়েছেন নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত। এমনকি প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির বিরুদ্ধেও কিছু বলছেন না তিনি। তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোর দাবি, ‘খোকনের মনোনয়ন লাভে নতুন জীবন পেয়েছে সাদিকে অতিষ্ঠ মানুষ। সাদিকের আবার ফিরে আসা ঠেকাতে বিএনপির লোকজনও এবার নৌকায় ভোট দেবে। যে কারণে সাদিকের বিরুদ্ধে বলাকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে প্রচার-প্রচারণায়।’ খোকন অনুসারীরা এভাবে বললেও ভিন্নমত আওয়ামী লীগের তৃণমূলের সমর্থক ভোটারদের। তাদের মতে, স্পষ্ট এই বিভক্তি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে ভোটের মাঠে। বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখে বললেও সাদিকপন্থিরা যে নৌকায় ভোট দেবে না তা নিশ্চিত সবাই। তেমন হলে জয় নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে খোকনের জন্য। এদিকে ভোটের মাঠে ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন লাঙ্গলের মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। ব্যক্তি ইমেজ আর সাংগঠনিক দক্ষতায় আলোচনায় চলে এসেছেন জাতীয় পার্টির এই প্রার্থী। হাতপাখার প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমও বেশ জোরেশোরেই নেমেছেন প্রচারে। প্রচার মাইকে ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ ও রাসুলে করিম (স.)-এর নামে ভোট চাইছেন তার রাজনৈতিক দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে নগরে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার দিন থেকেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে আওয়ামী লীগ। সাদিকবিরোধীরা অবস্থান নিয়েছে খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে আর প্রচারে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় সাদিকপন্থিরা। এই দুপক্ষকে এক করার সব চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে ইতোমধ্যে। সর্বশেষ শুক্রবার জেলার গৌরনদীতে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতেও যাননি খোকন। তার এই অনুপস্থিতিতে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, ভোটের আগে আর সম্ভব নয় চাচা-ভাতিজার ঐক্য। এমনকি চাচা খোকন কিংবা তার অনুসারীরা চান না বলে নির্বাচনের আগে বরিশালেও আসছেন না মেয়র সাদিক। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, ‘দেখানোর জন্য হলেও এক মঞ্চে ওঠা উচিত ছিল দুপক্ষের। সেক্ষেত্রে অন্তত ইতিবাচক একটা বার্তা যেত সব পর্যায়ের কর্মী-সমর্থকদের কাছে। বর্তমান পরিস্থিতিকে নিজেদের অস্তিত্ব সংকট হিসাবে দেখছে সাদিকপন্থিরা। কারণ খোকন অনুসারীদের দাপটে বর্তমানে কোণঠাসা তারা। তার ওপর অনৈক্যের এই বার্তা আরও সংকটে ফেলেছে তাদের। এই অবস্থায় তারা যে নৌকায় ভোট দেবেন না সেটা নিশ্চিত। তেমন হলে সেটা নিশ্চয়ই নৌকার জন্য সুখবর হবে না।’
একই বিষয়কে আবার সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখছেন খোকন অনুসারীরা। তাদের মতে, সাদিকের বিরোধিতাই নৌকার ভোটের মাঠের ট্রাম্পকার্ড। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মীর আমিন উদ্দিন মোহন বলেন, ‘সর্বস্তরের মানুষ এখন খোকন সেরনিয়াবাতকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। এর একমাত্র কারণ মুক্তির প্রত্যাশা। গত সাড়ে ৪ বছরই কেবল নয়, যুগ যুগ ধরে এই সাদিকদের হাতে নিষ্পেষিত হয়েছে নগরের মানুষ। তাদের একনায়কতান্ত্রিক আচরণের কাছে জিম্মি ছিল সবাই। সেই জিম্মিদশা থেকে মুক্তির আশায়ই গণজোয়ার উঠেছে নৌকার পক্ষে। সে কারণেই ঐক্যের চেয়ে মানুষের চাওয়াকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি আমরা।’
খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য বরিশাল আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. লস্কর নূরুল হক বলেন, ‘পুরোপুরি অনৈক্য তা কিন্তু ঠিক নয়। দেরিতে হলেও ভোটের মাঠে প্রচার শুরু করেছে মেয়র সাদিকের অনুসারীরা। শুক্রবারের বর্ধিত সভার পর থেকে মাঠে নেমেছে তারা।’
নৌকার এমন পরিস্থিতিতে ভোটের মাঠে ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন লাঙ্গলের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। দলীয় সমর্থনের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজ আর টানা ৫ বছর ধরে নির্বাচনি মাঠে পড়ে থাকার ফল পেতে শুরু করেছেন তিনি। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, কয়েকটি কারণে এখানে উত্থান ঘটছে লাঙ্গলের। তাপসের শিক্ষাগত যোগত্য ও জনসম্পৃক্ততা। অভিজাত শ্রেণির পেছনে না ছুটে নিুআয়ের মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছেন তাপস। নিজের সামাজিক সংগঠন ‘ফর এভার লিভিং সোসাইটি’র মাধ্যমে নানাভাবে সহায়তা করেছেন দরিদ্র মানুষকে। তাছাড়া নগরের স্থায়ী বাসিন্দা, সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং সব সময়ের হাসিমুখ আর ক্লিন ইমেজের কারণেও এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে হাতপাখার প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীমের প্রচারে ইসলাম ধর্মকে বেশি ব্যবহার করছেন তার কর্মীরা। নগরে প্রচার মাইকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে (স.) রাজিখুশি করার জন্য ভোট দিতে বলা হচ্ছে ভোটারদের। বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ভোট প্রশ্নে ধর্মের ব্যবহার কমবেশি সব দলই করে। তবে তা করা হয় রাখঢাক রেখে। কিন্তু এখানে যেভাবে সরাসরি মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রচার করা হচ্ছে এমনটা আগে হয়নি। ২০১৮-র নির্বাচনেও এখানে হাতপাখার প্রার্থী ছিল। তখনো কিন্তু এই ধারায় প্রচার চালায়নি দলটি। এবার কেন চালাচ্ছে তা তারাই বলতে পারবে।’
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মিডিয়া সেলের কর্মী শহিদুল কবির বলেন, এ রকম হওয়ার তো কথা নয়। আমাদের প্রার্থীকে স্যাবোটাজ করার জন্য কেউ এটা করতে পারে। আমি এখনই বিষয়টি দেখছি এবং কারা এটি করেছে তা ধরতে পারলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com