বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২০০৮-এর ফলাফলই কি ফিরছে আবার? এমনই ভাবনা নগরে। ওই নির্বাচনে মাত্র ৫৮৮ ভোটে জিতে মেয়র হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের শওকত হোসেন হিরন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সরফুদ্দিন সান্টু পান ৪৬ হাজার ২০৮ ভোট। সান্টু হারলেও সেবার কিন্তু বিএনপির পাওয়া মোট ভোটের সংখ্যা ছিল প্রায় ৯২ হাজার। বিজয়ী হিরনের তুলনায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েও ভোটযুদ্ধে বিএনপি হারে দলের অন্য দুই বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে। ৩ জন মিলে ৩ ভাগে ভাগ করে ফেলে বিএনপির ভোট।
এবারও একই কারণে শেষ জয়ের হাসি হাসবে নৌকা-এমন আলোচনাই এখন নগরজুড়ে। কেননা এবারের নির্বাচনে ৪ ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে বিএনপির ভোট। এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া কামরুল আহসান রুপনসহ মোট ১৯ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। নোটিশ পাওয়া বাকি ১৮ জন প্রার্থী হয়েছেন সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে।
ভোটব্যাংক প্রশ্নে সব সময়ই বরিশালে শক্তিশালী অবস্থান বিএনপির। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে এখানে কখনোই হারেনি দলটির কোনো প্রার্থী। ২০০৮-এর সিটি নির্বাচনে অবশ্য ঘটে ব্যতিক্রম ঘটনা। একই দলের শক্তিশালী ৩ প্রার্থীর মধ্যে ভাগ হয়ে যায় বিএনপির ভোট। ফলে সামান্য ভোটের ব্যবধানে জিতে মেয়র হন হিরন। নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে সেটাই ছিল বরিশালে আওয়ামী লীগের প্রথম ও শেষ বিজয়।
২০১৮-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র হলেও সেবারের ভোট নিয়ে ছিল বিস্তর অভিযোগ। দলীয় সিদ্ধান্তে এবার নির্বাচন থেকে দূরে আছে বিএনপি। কোনো প্রার্থীও দেয়নি তারা। তবু বিএনপির ভোটেই হবে জয়-পরাজয়-এমনটা বলছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। তবে সেই জয় নৌকার পক্ষে নাকি বিপক্ষে যাবে সেটা নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
বরিশাল নাগরিক পরিষদের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গাজীপুরের নির্বাচনের পর ভোটকেন্দ্রিক ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। প্রথমে ভাবা হয়েছিল নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। বিএনপির ভোটারদের অনুপস্থিতিতে কমবে ভোটগ্রহণের হার। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত আর নিরপেক্ষ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে ভোট। গাজীপুরের অভিজ্ঞতায় নিরপেক্ষ ভোট হওয়ার আশা করছেন ভোটাররা। কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক ভোটার যাবে এমন আভাস পাচ্ছি আমরা। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিশ্চিত করবেন ভোটার উপস্থিতি। এমন বাস্তবতায় বিএনপির ভোটারদের বড় একটা অংশ যে ভোট দিতে যাবেন তাতে সন্দেহ নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে তারা মেয়র পদে পছন্দ করবে কাকে।’
নগরের ২১নং ওয়ার্ডের ভোটার জিয়াউল আহসান। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তিনি। জিয়াউল যুগান্তরকে বলেন, ‘যে যাই বলুক না কেন নৌকার ভোটাররা যেমন ধানের শীষে ভোট দেবে না, তেমনি ধানের শীষের ভোটাররা নৌকায় দেবে না। এমন পরিস্থিতিতে বরিশালে বিএনপির ভোট ৪ ভাগ হবে বলে ধারণা আমার। একটি অংশ দলীয় নির্দেশ মেনে ভোট দিতে যাবে না কেন্দ্রে। বাকি ৩ ভাগের একটি পাবেন হাতপাখার মুফতি ফয়জুল করীম, একটি লাঙ্গলের ইকবাল হোসেন তাপস এবং আরেক ভাগ পাবেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন। ভোটব্যাংক প্রশ্নে বরিশালে অন্যদের তুলনায় শক্তিশালী হলেও এই শক্তি কোনো কাজেই আসবে না বিএনপির ভোটারদের এমন বিভক্তির কারণে। যখনই বিএনপির ভোট ৪ ভাগে ভাগ হবে তখনই জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে নৌকার। এখানে বিএনপির ভোটাররা যদি কোনো এক প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিত তাহলে তা নৌকার জন্য হতো শঙ্কার কারণ। কিন্তু বিএনপি যেহেতু নির্বাচনে নেই তাই তাদের সেভাবে কেউ উদ্বুদ্ধও করছে না। ফলে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ছে নৌকার।’
বিষয়টি সম্পর্কে আলাপকালে বরিশাল মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে বিএনপির ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন না সেটাই আমরা জানি। এই নির্বাচনকে যেহেতু আমরা বৈধ বলে বিবেচনা করছি না তাই কে হারল বা কে জিতল তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’
ভোটের মাঠে জয়-পরাজয়ের যখন এমন হিসাব-নিকাশ ঠিক সেই সময়ে বরিশালের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামালের পুত্র কামরুল আহসান রুপনসহ ১৯ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ওই নোটিশ দেওয়া হয়েছে তাদের। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত নোটিশগুলো বৃহস্পতিবার রাতে পৌঁছানো হয় তাদের। নোটিশে দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ার কারণে কেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানাতে বলা হয়েছে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মেয়র প্রার্থী রুপন বলেন, কেন্দ্রের চিঠি পেয়েছি। আমার কথা হচ্ছে, আরও আগে তারা কেন আমাকে কোনো নির্দেশনা দিলেন না। মনোনয়ন দাখিলের পরপরই এই চিঠি দিলে স্বাভাবিক নিয়মে তা প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল। তবু যেহেতু আমি বিএনপি পরিবারের সন্তান তাই দলের চিঠির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্ধারিত সময়েই জবাব দেব।
দলের প্রাথমিক সদস্য পদ না থাকা রুপনকে এই চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে বিএনপি তাকে দলের বলে স্বীকার করে নিল এমন আলোচনাও অবশ্য এখন চলছে নগরে। কারণ দর্শানোর চিঠি পাওয়া অন্য ১৮ জনের মধ্যে ৪ জন প্রার্থী হয়েছেন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে। বাকি ১৪ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন সাধারণ কাউন্সিলর হিসাবে। এই তালিকার ১১ জন রয়েছেন বিএনপি ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে। বাকিরা সাবেক পদধারী নেতা।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের গাজীপুরের মতো বরিশালেও দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হোক এমনটাই চাইছি আমরা।
খোকনের মতবিনিময়, জাপানের বিনিয়োগ আনবেন তাপস : এদিকে নৌকার মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মসুল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। নগরীর চকবাজার জামে এবায়দুল্লাহ মসজিদে জুমার নামাজের পর এই মতবিনিময় করেন তিনি। এ সময় তিনি নির্বাচিত হলে বরিশালে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণসহ সার্বিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। এর আগে নগরীর সাগরদী বাজারে গণসংযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। এ সময় তাপস জানান, মেয়র নির্বাচিত হলে জাপানের বিনিয়োগে বরিশালের আইটি সেক্টরসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে কাজ করবেন তিনি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com