বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম পেয়েছেন ৩৩ হাজার ২২৮ ভোট।
বরিশাল নগরীর শিল্পকলা একাডেমিতে স্থাপিত ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র থেকে সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর ভোটের ফল ঘোষণা করেন। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হয়।
বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির মো. ইকবাল হোসেন (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৬ হাজার ৬৬৫ ভোট ও জাকের পার্টির প্রার্থী মিজানুর রহমান বাচ্চু (গোলাপফুল) পেয়েছেন ২ হাজার ৫৪৬ ভোট।
বাকি তিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে মো. আলী হোসেন হাওলাদার (হরিণ) ২ হাজার ৩৮১ ভোট, মো. আসাদুজ্জামান (হাতি) ৫২৯ ও মো. কামরুল আহসান রুপন (টেবিল ঘড়ি) ৭ হাজার ৯৯৯ ভোট পান।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি বরিশাল কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন সেরনিয়াবাত)। এর আগে সকাল ৮টায় নগরীর রূপাতলী হাউজিং আ. রব সেরনিয়াবাত মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী ও দলটির জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম।
হাতপাখার প্রার্থীর ওপর হামলা
দুপুরের দিকে নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউনিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ফয়জুল করিম অভিযোগ করেন, নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা তাঁর ওপরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। এ সময় নৌকার কর্মী-সমর্থকরা তাকে কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেন।
পরে হামলার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
বরিশালে হাতপাখার প্রার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা।
মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার খবরে দলটির বিপুল সংখ্যক কর্মী-সমর্থক বরিশাল নগর অভিমুখে রওনা হন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দপদপিয়া সেতু বন্ধ করে দেওয়ায় তারা শহরে প্রবেশ করতে পারেনি। তারা সেতুর অপরপ্রান্তে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন।
দপদপিয়া ব্রিজ ছাড়াও বিভিন্ন প্রবেশপথ (গড়িয়ারপার, কালিজিরা ব্রিজ) থেকে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী-সমর্থকরা শহরে ঢুকে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টার অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট আফজালুল করিম। তিনি অভিযোগ করেন, তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে শহরে ঢোকার পায়তারা করছে। একত্রিত হয়ে সংঘর্ষ বাঁধিয়ে তারা নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার পরিকল্পনা করছে।
ফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের
সংবাদ সম্মেলন করে বরিশাল ও খুলনা সিটি নির্বাচনের ভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে সিলেট ও রাজশাহী সিটি নির্বাচনের ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় দলটি। সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর চাঁদমারীতে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন দলটির আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম। বরিশাল সিটি মেয়র প্রার্থী মুফতি ফয়জুল করীম সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বরিশালের ভোট চলাকালে প্রার্থীসহ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আগামী শুক্রবার দেশের জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণাও দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
ভোট দেননি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ
নির্বাচনে ভোট দেননি বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মেয়র পদে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সাদিক আবদুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। মনোনয়ন নিয়ে শুরু থেকেই চাচা-ভাতিজার মধ্যে বিভেদ চলছিল।
সাদিক আবদুল্লাহ প্রায় আড়াই মাস ঢাকায় অবস্থান করছেন। চাচার নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় ছিলেন না। সোমবার ভোট দিতেও আসেননি।
উল্লেখ্য, ৩০টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১১৬ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলর পদে ৪২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। বরিশাল সিটি নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্র ১২৬টি। এই সিটিতে মোট ভোটার দুই লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৮৯ জন এবং নারী এক লাখ ৩৮ হাজার ৮০৯ জন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com