স্টাফ রিপোর্টার : বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের একটি অমানবিক আদেশে প্রতিষ্ঠানটির ২১ শিক্ষক ও কর্মচারীদের পরিবারে হতাশা ও হাহাকার। প্রায় আড়াই মাস যাবৎ অধ্যক্ষ কর্মস্থলে না থাকায় কোন প্রতিকার না পেয়ে অবৈধ অমানবিক আদেশ প্রত্যাহারের জন্য ২১ জন পৃথক পৃথক আবেদন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের নিকট। ১৭ মে বৈশ্বিক মহামারি করোনা চলাকালীন সময়ে নিয়মিত বেতন প্রদান শিরোনামে তারা আবেদন করেন।
সভাপতি বরাবরে খন্ডকালীন ১৩ শিক্ষক স্বাক্ষরিত আবেদনে উল্লেখ করা হয় আমরা বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজে কর্মরত আছি। বর্তমান সময় গোটা বিশ্ব করোনা ভাইরাস নামক এক ভয়ংকর মহামারির কবলে।। যেখানে দীর্ঘ মৃত্যুর মিছিল ও ঘরবন্ধি মানুষ অসহায় বাবে জিবন যাপন করছে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ও প্রশাসন নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধিনমন্ত্রী পরিস্কার নির্দেশনা দিয়েছেন যে,সকল প্রতিষ্ঠানকে তার কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন ভাতা প্রদান করতে। সেখানে আমাদেরকে মে'২০২০ সাল থেকে বেতন অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। অথচ প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী শিক্ষক ও কর্মচারিরা বেতন পাবেন নিয়মিত। স্থায়ী শিক্ষক ও কর্মচারীরা ঈদে বেতন বোনাস সহ অর্ধ লাখ থেকে এক লাখ টাকা পেয়েছে। সেখানে খন্ডকালীন ও আমন্ত্রিত শিক্ষকদের মাত্র মাসিক আট হাজার টাকা বন্ধের স্বিদ্ধান্ত দেয়া একটি অমানবিক স্বিদ্ধান্ত। আবেদনকারী শিক্ষকদের এই আট হাজার টাকা ছাড়া অন্য কোন আয়ের উতৎ নেই।বর্তমানে এ বেতন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুদর্শায় ও না খেয়ে দিন যাপন করতে হবে বরে আবেদনে উল্লেখ করা হয়। সকল প্রেক্ষাপট, পরিবার ও পরিজনদেরকথা বিবেচনায় বেতন নিয়মিত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সভাপতির নিকট আবেদন করেন।
এদিকে ১৭'মে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের নিকট প্রতিষ্ঠানটির খন্ডকালীন আট কর্মচারী স্বাক্ষরিত পৃথক একটি আবেদন করেন। আবেদনে তারা খন্ডকালীন শিক্ষকদের ন্যায় তাদের বেতন নিয়মিত প্রদানের ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেন।
বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের এমন সিদ্ধান্তে ২১ পরিবারে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তারা হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও একঘুয়েমির কারনে এসব হচ্ছে। কিভাবে একজন দ্বায়িত্বশীল লোক আড়াই মাস প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকেন। মার্চের ২০ তারিখ কর্মস্থল ত্যাগ করে ২ জুন সন্ধ্যায় প্রতিষ্ঠানে এসেছেন। খন্ডকালীন ঐ শিক্ষকরা বলেন, কিছু বলার নেই বললে খন্ডকালীন কর্মটি হারাতে হবে। তারা অধ্যক্ষের অমানবিক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,গত ঈদে খন্ডকালীন ও আমন্ত্রিত শিক্ষক ও কর্মচারীদের ঈদ বোনাস দেয়নি যা দুঃখজনক। তারা বলেন প্রতিষ্ঠানটিতে স্থায়ীরা ক্লাশ কম নেন। খন্ডকালীন ও আমন্ত্রিত শিক্ষকরা অতিরিক্ত ক্লাশ নেন। অথচ এই করোনার মহামারিতে আমাদের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি যা গভর্নিং বডি বা একাডেমিক কাউন্সিলের কেউ কিছু জানেন না।
খন্ডকালীন শিক্ষকদের বেতন বন্ধের ব্যাপারে সহকারি শিক্ষক (গনিত) মোঃ আজিম উদ্দিন জানান,এপ্রিলের বেতন যখন দেয়া হয় তখন মে মাস থেকে আমাদের বেতন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়। আমরা আমন্ত্রিত ও খন্ডকালীন শিক্ষকরা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির নিকট আবেদন করেছি নিয়মিত বেতন প্রদানের জন্য। তিনি বলেন, অধ্যক্ষের নির্দেশে আমির হোসেন আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। একই কথা বললেন সহকারি শিক্ষক (গনিত) মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন আমাদের মাত্র সামান্য টাকা বেতন তা বন্ধের সিদ্ধান্তে আমরা হতবাক।
এব্যাপারে অফিস সহকারি মোঃ রাশেদুজ্জামান
জানান আমরা খন্ডকালীন আট কর্মচারি পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির নিকট আবেদন করেছি নিয়মিত বেতন প্রদানের জন্য। আমাদের বেতন বন্ধের সিদ্ধান্ত অমানবিক। বেতন না পেলে আমরা কিভাবে চলবো কি খাবো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকরা জানিয়েছেন,অধ্যক্ষ এক একটি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন যা অমানবিক । তিনি একজন স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের। পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত তিনি একটিও কার্যকর করেন নি। বরং পরিচালনা পর্ষদ কে পাশ কাটিয়ে একেকটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম আজ তলানীতে। পরিচালনা পর্ষদ স্থায়ী শিক্ষক পুনিল সরকারকে অর্ধেক বেতন প্রদানের সিদ্ধান্ত দিলেও এখনো সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি যা সরকারি আদেস অবমাননার শামিল।নাম প্রকাশে অপারগ একাধিক শিক্ষকরা জানিয়েছেন,অধ্যক্ষের অনিয়মের ফলে আজ ডুবে যাচ্ছে এ ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির সুনাম।
অধ্যক্ষ থাকেন বেশীর ভাগ সময়ইে ঢাকা :
বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ স্টেশন লিভ দেয়ায় ও তিনি একটি গ্রুপকে বেশী পছন্দ করায় তার আদেশ কেউ মানছেন না। অধ্যক্ষ মাসের অর্ধ সময় ঢাকা থাকেন। করোনার এই দুঃসময়েও তিনি বরিশালে নেই। ঢাকায় থাকার কারনে মার্চের বেতন গত ১০ এপ্রিল দেয়া হয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ফল ফলাদী অধ্যক্ষ বিগত দিনের রেওয়াজ ভেঙ্গে বস্তা ভরে নিয়ে যান ঢাকাতে বলে অভিযোগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
এদিকে অধ্যক্ষ হাজার হাজার টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন টেন্ডার পরিচালনা পর্ষদ ও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত ছাড়াই। অথচ প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ঘোষনার ফলে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য আর্থিক ব্যয়ের জন্য শিক্ষা ও অর্থ মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নিতে হয়। অনুমোদন না নিয়েই প্রতিষ্ঠানটির সংস্করন কাজসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তারা বলেন অধ্যক্ষ সরকারি কোন আইন -কানুন ও নির্দেশনা মানছেন না। কলেজ ফান্ডের টাকা অতিরিক্ত ব্যয়ের ফলে বর্তমানে শিক্ষক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন -ভাতা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে করোনার এই দুর্যোগে গুরুত্বপুর্ন এ প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা চরম হতাশায় ভুগছে। শিক্ষার্থীদের এই মহামারি দুর্যোগে কোন নির্দেশনা না দেয়ায় অভিভাবকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব থাকলেও অনলাইন ক্লাশের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে বরিশাল সরকারি মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাহিদুর রহমান মজুমদারের সাথে যোগাযোগের জন্য কলেজের টেলিফোনে একাধিকবার কল করা হলেও কেউ রিসিভ করেন নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com