স্টাফ রিপোর্টার : হামলার শিকার বরিশাল যুবলীগ নেতা সাইদুর রহমান বাহাদুর প্রাণে রক্ষা পেলেও তার দুই চোখ আর স্বাভাবিক হবে না, দেখতে পাবে না বৈচিত্রময় পৃথিবীর দৃশ্যপট। বলা যায় তরুণ বয়সে অন্ধত্ব বরন করতে হলো এই যুবককে। গতকাল শনিবার ঢাকা শেরে বাংলা নগরস্থ জাতীয় চক্ষু ইনস্টিটিউট হাসপাতালের চিকিৎসকবৃন্দ টিম গঠন করে তার পরিবারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে । আজ সকালে তার চোখের অপারেশন হওয়ার কথা রয়েছে।
স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে দুটি চোখই উপড়ে ফেলার চেষ্টায় তা গলে যাওয়ায় এ অবস্থা থেকে ভবিষ্যতে মানসিক সমস্যা ও ক্যান্সারের সমূহ সম্ভাবনার পথ রুখতেই চিকিৎসকরা এই অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হামলার শিকার বাহাদুরের সহোদর মিজানুর রহমান মিল্টন এই তথ্য দেন। উল্লেখ্য শুক্রবার রাতে চেয়ারম্যান বাড়ি হিসেবে পরিচিত রূপাতলির বটতলা এলাকার নিজ ভবন থেকে বের হলে আপন বোনজামাই বাহাদুরকে অপহরন করে হত্যার চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হলেও তার দেহের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়।
এর মধ্যে চোখের অবস্থা বেশিমাত্রায় গুরুতর হওয়ায় তাকে ঐদিন রাতেই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো। প্রথমে ঢকা মেডিকেল কলেজ, পরবর্তীতে পরামর্শের আলোকে জাতীয় চক্ষু হাসপাতালে এখন চিকিৎসা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডাঃ সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করে বাহাদুরের দুই চোখের ভ’ত-ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনায় চিকিৎসকবৃন্দ ঐক্যমতে পৌঁছান । এই তথ্য দিয়ে সেখানে অবস্থানরত বাহাদুরের ঘনিষ্ট বন্ধু ও নিকটাত্মীয় ফরহাদ হোসেন “বরিশাল বাণী”কে জানান, আজ রবিবার অপারেশনের কথা রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখার প্রাক্কালে সকাল ১১টায় বাহাদুরকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পরবর্তী পরিস্থিতিতে করণীয় কী, তা নিয়ে চিকিৎসকরা আগে ভাগেই বাহাদুরের পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছে যে , তার দুই চোখ দিয়ে আর দেখা সম্ভব নয়। কারন চোখের মনি গলে গেছে। শিরা-উপশিরাও ধীরালয়ে অচল হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের রুগী ভবিষ্যতে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়তে পারে। এমনকি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বাহাদুরের পরিবারের দাবী ছিলো, যেকোন উপায়ে তার চোখ সচল করে স্বভাবিক করে তুলতে তারা যেকোনো পথে অগ্রসর হতে রাজি ছিলো। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে ভারত বা বিশ্বের অন্য কোনো রাষ্ট্রে উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রাখায় চিকিৎসকবৃন্দ বোর্ড বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের অভিমত ব্যাক্ত করেন। শনিবার রাতে বাহাদুরের বড়ভাই মিজানুর রহমান মিল্টনকে চিকিৎসক বোর্ডের প্রধান ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন একান্তে ডেকে নিয়ে ‘স্যরি’ বলে তার অন্ধত্ব বরণ থেকে অন্য কোনো পথ নেই , এমন মন্তব্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন।
এদিকে বরিশালে বাহাদুরের উদ্ধিগ্ন পরিবার তার শারিরীক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরিকল্পনায় অপেক্ষামান রয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে । যদিও পুলিশ হামলার কারন ও কারা অংশ নিয়েছিলো তাদের নাম-পরিচয় এখনও নিশ্চিত হতে না পারলেও মূল নেতৃত্বে থাকা ব্যাক্তি মহসীনকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। মহসীন এখন পলাতক। হামলার পরপরই সে আত্মগোপনে চলে যায়।
কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর ইসলাম এই প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ মহসিনের খোঁজে মাঠে নেমে একটি ফোনালাপে নিশ্চিত হতে পেরেছে আপন শ্যালক বাহাদুরকে তিনি হত্যা করতে চেয়েছিলো কোন উদ্দেশ্যে। মূলত এঘটনার পেছনে রয়েছে একটি জমি নিয়ে মহসিনের বিরোধিতায় অন্য পক্ষকে সমর্থন করা। সেই ক্ষোভ থেকে প্রতিশোধ নিতেই পরিকল্পিতভাবে বাহাদুরকে অপহরন করা হয়। এসময় ২৫নং ওয়ার্ড অর্থাৎ জাগুয়া ও রূপাতলীর মধ্যবর্তী স্থান বটতলার চেয়াম্যান বাড়ি থেকে রাত ৯ টার দিকে ওষুধ ক্রয়ের উদ্দেশ্যে বের হলে মহসিনের নেতৃত্বে ৫/৬ জনের একদল মুখোশধারী যুবক তার পথরোধ করে সন্নিকটে আরাফাত হাউজিং মাঠে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যার চেষ্টা চালায়।
মিল্টনের ভাষ্য, হামলার পরপরই তাদের বোন শাহানারা আক্তার চায়না অর্থাৎ মহসীনের স্ত্রী তার ভাইয়ের মৃত্যু ঘটেছে এমন ধারনায় নিজের বৃদ্ধ মা কে ফোনে আফসোস না করে নিশ্চুপ থাকার পরামর্শ দিয়ে নিজে উল্লাস প্রকাশ করেন। সেই ফোনালাপের রেকর্ড পুলিশ সংরক্ষণ করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই সূত্র ধরেই পুলিশ মহসীনকে গ্রেফতারে সর্বাত্মক চেষ্টায় গত শুক্রবার রাত থেকেই বিভিন্ন স্থানে দফায় দফায় অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারেনি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আটকে মাঠে নেমে পুলিশ মহসীনের অতীত-বর্তমান ইতিহাস ঘাটাঘাটিতে ভ’মিদস্যুতার একাধিক প্রমাণ পেয়েছে। এই উৎসমূলে অর্থবিত্তে হঠাৎ ফুলে-ফেপেঁ ওঠা নলছিটির দপদপিয়া এলাকা গোয়ালকাঠীর এই বাসিন্দা মহসিন চেয়ারম্যান বাড়ির সাথে আত্মীয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলেও এখন শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে শুধুমাত্র তাকে সহায়তা না করায়। বাহাদুর ও মিল্টন উভয়ই ক্ষমতাসীন দলীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। প্রথমজন ওয়ার্ড যুবলীগ ও দ্বিতীয়জন মিল্টন মহানগর যুবলীগের অন্যতম নেতা হিসেবে রাজনীতিতে সক্রিয় বলে জানা গেছে।
এছাড়া পারিবারিকভাবে তাদের রূপাতলীর চেয়রম্যার বাড়ির অতীত ইতিহাস ও পরিচিতির পাশাপাশি রয়েছে বিয়োগাত্মের দুটি আলোচিত ঘটনা। চেয়ারম্যান বাড়ির বাহাদুরদের পরিবার শক্তি-সামর্থ্যরে দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও মহসিন টাকার জোরে একটি সংঘবদ্ধ বাহিনী লালন-পালন করে শুধূ শ্বশুরালয় নয়, অন্যের জমি দখল নিতে এই বাহিনীকে ব্যাবহার করে আসছিলো। কিন্তু আপন শ্যালক বাহাদুরের উপর হামলার ঘটনায় তার সশস্ত্র স্বরূপ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এবার পরিচিতি পেলো।
মহসিনের বিরুদ্ধে জমি দখল,জালজালিয়াতীর মাধ্যমে জমি দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। শুন্য থেকে হঠাৎ কনে বড় লোক হওয়া ভুমি দস্যু মহসিন আলমকে জমি দখলের অভিযোগে কোতয়ালী থানা পুলিশ একাধিকবার আটক করেছিল। টাকার বিনিময়ে বারবার ছাড়া পেয়ে যেত। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে ভুমি দস্যুতা করে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com