মামুনুর রশীদ নোমানী :
পদ্মা সেতু উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আর কয়েক দিন পর। এরপর চলাচল শুরু হলে কুয়াকাটা পর্যন্ত বর্তমান মহাসড়ক দিয়েই ছুটতে হবে যানবাহনকে। অপ্রশস্ত এ সড়কে গাড়ির চাপ তীব্র হলেও দুর্ভোগ এড়াতে সুখবর নেই বরিশালবাসীর। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের তথ্যমতে, এ মহাসড়ক দিয়েই যান চলাচল করতে হবে। আর ফোর লেনের স্বপ্ন শিগগির পূরণ হচ্ছে না।
সম্পর্কিতপোস্ট
জানা গেছে, ২০১৬ সালে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত ১৯৫ কিলোমিটার মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।কিন্তু মাপজোখেই পড়ে আছে এখনো প্রকল্পটি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ শেষে ফোর লেনের নির্মাণকাজ কবে শুরু হতে পারে, তা বলতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, ভাঙা-কুয়াকাটা মহাসড়ক ফোর লেনে উন্নীত করার প্রস্তাব ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর একনেকে অনুমোদিত হয়। সড়কে দ্বিমুখী যানবাহন চলাচলে ডাবল লেনের দুটি সড়ক এবং উভয় পাশে ধীরগতির যান চলাচলের পৃথক দুটি লেন রাখা হয়েছে।মূল সড়ক হবে ১৭০ ফুট প্রশস্ত। মাঝ থেকে উভয় দিকে থাকবে ৮৫ ফুট করে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকা অনুমোদিতও হয়েছিল।প্রকল্পের নির্ধারিত মেয়াদ ২০২০ সালের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করতে পারেনি সওজ। ফলে বরাদ্দকৃত অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত যায়।
নতুন করে ওই প্রকল্প মাপজোখ শুরু করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সার্ভেয়ার মো. আরিফুর রহমান জানান, বরিশালের ভুরঘাটা থেকে লেবুখালী পর্যন্ত বর্তমান মহাসড়কের দুই পাশে জমি অধিগ্রহণের জরিপ চলছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
মো. আরিফুর রহমান আরও জানান, গড়িয়ারপাড় মোড় থেকে মূল নগরের বাইরে দিয়ে ঝালকাঠি সড়কের সঙ্গে যুক্ত করে একটি বাইপাস সড়ক নির্মাণে সওজ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য দুটি প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।একটিতে বাইপাস মিলবে নগরের গড়িয়ারপাড় থেকে বরিশাল বেতার স্টেশন-সংলগ্ন উকিলবাড়ি সড়কে। অপর রাস্তাটি গড়িয়ারপাড় থেকে কালীজিরা সেতু পর্যন্ত।যেটিই অনুমোদন হোক না কেন, এটি মিলবে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সেতুর ঢালে।
তিনি বলেন, ফোর লেনের কাজ কবে শুরু হবে তা এখনো বলার সুযোগ নেই। তবে বাইপাসসহ ফোর লেনের একটি প্রস্তাব নিয়ে কাজ চলছে। বরিশাল-মাওয়া রুটে বিআরটিসি বাসের চালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে অতিরিক্ত গাড়ির চাপে গতি ৪০-৫০-এর বেশি ওঠানো যাবে না। তার ওপর সরু সড়কের কারণে ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সহসভাপতি আমিনুর রহমান ঝান্ডা জানান, বহু বছর ধরে শুনছেন এ মহাসড়ক ফোর লেন হবে।
কিন্তু পদ্মা সেতু উদ্বোধনের সময় ঘনিয়ে এলেও ফোর লেনের খবর নেই।নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর বরিশালের সিনিয়র প্ল্যানার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে নগরে তীব্র চাপ বাড়বে। এখানে নগরায়ণের হার বৃদ্ধি পাবে।
যে কারণে জরুরি ভিত্তিতে ফোর লেন করতে হবে।এ প্রসঙ্গে ভাঙ্গা-বরিশাল কুয়াকাটা ফোর লেন বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের পরিচালক এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রকৌশলী এ কে এম আজাদ সাংবাদিকদের জানান, তাঁরা ফোর লেনের জমি অধিগ্রহণের জন্য মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম শুরু করেছেন।প্রস্তাবিত জমির তালিকা চূড়ান্ত করে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পাঠানো হবে। জমি অধিগ্রহণ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। অধিগ্রহণের পর সওজ ফোর লেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজ শুরু করবে। তবে তিনি স্বীকার করেন, ফোর লেন নির্মাণে অনেক বছর লাগতে পারে।
অতিরিক্ত প্রকৌশলী এ কে এম আজাদ বলেন, পদ্মা সেতু চালুকে কেন্দ্র করে এই মহাসড়কের যেসব স্থান ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রশস্ত সেগুলো চিহ্নিত করে সংস্কারের উদ্যোগ নেবেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান খান বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বৃদ্ধি পাবে এ অঞ্চলে। কিন্তু যে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, তা কাজে লাগাতে হলে ফোর লেন বাস্তবায়ন জরুরি।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com