স্টাফ রিপোর্টার : বরিশাল নগরীর ২২ নং ওয়ার্ড কাজীপাড়ায় গত ১০/০৭/২০২০ তারিখ ইয়াসমিন (২৬) নামে এক গৃহবধূ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন।
মৃত্যুর কারন প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষণ, পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিকদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে চালঞ্চকর তথ্য। নিহত ইয়াসমিন দিন মজুর হেল্লালের স্ত্রী, দুই সন্তানের জননী জাকিয়া (৫), মাহিম (১)। দুটি সন্তানের পর অসচেতনতার কারনে দরিদ্র পরিবারে চলে আসে আরেক সন্তান।
ইয়াসমিন তখন ৫ মাসের গর্ভবতী, দিন মজুর স্বামীর ২টি সন্তান নিয়ে সংসার চলছে কোন মতে। বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর ভিতরই তার গর্ভে চলে আসে নতুন অতিথি। দারিদ্র্যতার কাছে হেরে যাচ্ছিল ইয়াসমিনের জীবন, এমনই অবস্থায় এক আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেন গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য।
পরামর্শ নেন স্থানীয় ঔষধ ব্যবসায়ী বিসমিল্লাহ ফার্মেসীর মালিক ও বরিশাল সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের অনিয়মিত শ্রমিক (পোর্টার) জাহাঙ্গীর হোসেন এর কাছ থেকে, তার পরামর্শ মত বাচ্চা নষ্ট করার জন্য (ইসোবেন্ট) নামক ঔষধ খেয়ে থাকেন, জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন ঔষধ খেলে ৪ দিনের ভিতর বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাবে। রক্ত ক্ষরণ হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার কথাও বলেন ইয়াসমিনকে।
ঔষধ খাওয়ার তিন দিনের মাথায় অস্বাভাবিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরেন ইয়াসমিন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে অবশেষে জীবন যুদ্ধে হেরে গিয়ে গত ১০ই জুলাই শেবাচিমে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরন করেন। নিহত ইয়াসমিন চরকাজল গলাচিপা ভুট্টু মাঝির মেয়ে।
নিহত ইয়াসমিনের স্বামী হেল্লাল (৩০) প্রতিবেদকের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন আমার স্ত্রী প্রায় ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলো, আমার কাছে না জিগ্যস করে বিসমিল্লাহ ফার্মেসীর মালিক জাহাঙ্গীর হোসেনের কাছ থেকে বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ এনে খেয়েছে। জাহাঙ্গীর হোসেন আমার অনুমতি ছাড়া আমার স্ত্রীকে বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ঔষধ দিয়েছে সেই ঔষধ খেয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি জাহাঙ্গীর হোসেনে কাছে উক্ত বিষয় তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন, তার কাছ থেকে ইয়াসমিন এমন কোন ঔষধ নেয়নি। এদিকে তার ছেলে রাফির দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাহাঙ্গীর হোসেন (ইসোবেন্ট) নামে গর্ভপাতের ঔষধ দিয়েছে তার সিকারউক্তি রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।
দন্ডবিধি -১৮৬০ এর ৩১২-৩১৬ অনুযায়ী গর্ভপাত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ
দন্তবিধি- ৩১২ : ভ্রূণ হত্যা খুনের শামিল গর্ভধারনীর সম্মতি নিয়ে অথবা তার বিনা সম্মতিতে যে ভাবে করা হোকনা কেন দন্ডবিধি ৩১২ নাম্বার ধারায় উক্ত অপরাধের জন্য তিন বছরের কারা দন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ড হতে পারে।
দন্ডবিধি- ৩১৪ : যে ব্যক্তি কোন গর্ভবতী নারীর গর্ভপাত ঘটানোর উদ্দেশ্য এমন কোন কাজ করে যাতে নারীর মৃত্যু ঘটে তাহলে ১০ বছর কারাদণ্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।
বরিশাল সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার যতিন চক্রবর্তী বলেন গর্ভপাতের জন্য যদি কোন ঔষধ দিয়ে থাকেন ফার্মেসীর মালিক জাহাঙ্গীর হোসেন তাহলে আইনের দৃষ্টিতে সে অপরাধী, অনুমতি ছাড়া এরকম ঔষধ বিক্রয় নিষিদ্ধ।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় খবর নিয়ে জানা গেছে এই সংক্রান্ত বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ হয়নী।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com