শাওন খান :
৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও আলোর মুখ দেখেনি বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে নির্মিত সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করায় অর্ধশত কোটি টাকার দুটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু হয়নি। এতে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর বাড়ছে চাপ। এদিকে প্রয়োজনের অর্ধেক পানি সরবরাহ করতে পারছে না সিটি কর্পোরেশন। নাগরিক সুবিধা ধেকে বঞ্চিত হচ্ছে বরিশালের মানুষ। তারা প্লান্ট দুটি দ্রুত চালুর জন্য দাবি করছে।
আর এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নগরীর অধিকাংশ চাপকলে এখন আর পানি ওঠে না। তাই ভরসা সিটি করপোরেশনের পানি। কিন্তু নগরীর অনেক স্থানেই পৌঁছেনি পানির লাইন। সেখানে পানি সরবরাহ করা হয় ট্রাকের মাধ্যমে। তাও পাওয়া যায় না সবসময়।
নগরীর বেলতলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা সাবিরুল ইসলাম বলেন, তাদের এলাকায় চরম পানির সঙ্কট। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এলাকার কোনো চাপ কল থেকে পানি উঠে না। ফলে সিটি কর্পোরেশন পানি সরবরাহের গাড়ির জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়। সিটি কর্পোরেশনের গাড়িও ঠিকমত আসে না।
ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা মর্জিনা বেগম বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সকল ট্যাক্স খাজনা পরিশোধ করলেও তার বিপরীতে সে অনুযায়ী সেবা পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে এই পানির সমস্যা। সিটি কর্পোরেশনের গাড়িতে যে পানি দিয়ে যায়, তা দিয়ে কোনোরকম রান্নার কাজ সারা যায়। তীব্র পানির এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ওই এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
রুপাতলী ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাশের এক বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ সময়ে এ প্লান্ট চালু না করায় এর অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। এ প্লান্ট চালু করতে হলে পুনরায় সব কিছু নতুন স্থাপন করতে হবে।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫ লাখ নগরবাসীর জন্য ৬ কোটি লিটার বিশুদ্ধ পানির প্রয়োজন। এর বিপরীতে উৎপাদন করা হচ্ছে মাত্র তিন কোটি লিটার। ফলে নগরবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে কীর্তনখোলা নদীর তীরে বেলতলায় ২০১২ সালে হাজার ১৯ কোটি টাকা ব্যয় এবং রুপাতলীতে ২০১৩ সালে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুইটি সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের কাজ শুরু হয়। ওই প্লান্ট দুটির মাধ্যমে ১ কোটি ৬০ লাখ করে ৩ কোটি ২০ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
৬ বছরেও একদিনও নগরবাসীর জন্য পানি দিতে পারেনি এ প্লান্ট দুটি। এখান থেকে পানি সরবরাহের জন্য পুরো নগরীজুড়ে পাইপ বিছিয়ে রাখা হলেও আদৌ তা কোনো উপকারে আসেনি নগরবাসীর।
সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্র জানায়, দুটি শোধনাগারেরই নির্মাণ ত্রুটি ছিল। একই সঙ্গে স্থান নির্বাচনেও ত্রুটি ছিল।
এদিকে নির্মাণের পরপরই কীর্তনখোলা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে বেলতলার প্লান্ট। আর সুষ্ঠু বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকায় চালু করা যায়নি রুপাতলীর প্লান্ট। এছাড়াও রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি। সেজন্য ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। অর্থ অনুমোদন পেলেই আবার কাজ শুরু হবে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ জানান, নগরীতে দৈনিক প্রায় ৬ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ হয় ৩ কোটি লিটার। ফলে পানির সঙ্কট থেকেই যাচ্ছে। পানির সমস্যা-সমাধানে ৫০ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে। অচিরেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে নগরবাসী।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com