খলিলুর রহমান :
আজ ১৭ ই রমজান!
ঐতিহাসিক ‘বদর দিবস’। ইসলামের ইতিহাসে এই দিনটির গুরুত্ব অনন্য। বদরের যুদ্ধ ছিল আত্মরক্ষার্থে সত্যের পক্ষে, নিপীড়িতদের পক্ষে, মানবকল্যাণের নিমিত্তে। এ যুদ্ধের মাধ্যমে মুসলমানরা সংখ্যায় অনেক কম হয়েও মক্কার কাফির শক্তিকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছিল। এ যুদ্ধের মাধ্যমেই সত্য-মিথ্যার পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। তাই এই যুদ্ধকে সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী যুদ্ধ বলা হয়। আল-কুরআনে এই দিনকে ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহতে বিশ্বাস করো এবং (বিশ্বাস করো বিজয়ঘটিত) সে বিষয়টির প্রতি, যা হক ও বাতিলের চূড়ান্ত মীমাংসার দিন, একে অপরের মুখোমুখি হওয়ার দিন আমার বান্দার ওপর নাজিল করেছিলাম। (তাহলে তোমরা জেনে রেখো) আল্লাহ তায়ালা হচ্ছেন সব বিষয়ের ওপর একক ক্ষমতাবান।’ (সূরা আনফাল: ৪১)
বদর যুদ্ধে দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে উভয়ের মধ্যকার আদর্শিক ও নৈতিক পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে গেছে। একটি বাহিনী পার্থিব স্বার্থ ও উদ্দেশ্য এবং ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে নিছক আল্লাহর নির্দেশমোতাবেক মানবজাতির সঠিক কল্যাণ সাধনের নিমিত্তে প্রাণপণ সংগ্রামে নামে। অপর বাহিনী বিরাট বিরাট ভোজ সভা, মদের আসর, গান-বাজনার জলসা ও নর্তকীদের নৃত্য ইত্যাদি উপভোগ করতে করতে এগিয়ে আসে। এক বাহিনী ময়দানে আসে সংখ্যার স্বল্পতা ও অস্ত্রশস্ত্রের অপ্রতুলতার পাশাপাশি ঈমান, ঐক্য, শৃঙ্খলা ও চরিত্রের দিক দিয়ে অধিকতর মজবুত ও শক্তিশালী অবস্থায়।
অন্য বাহিনী সংখ্যায় অধিক এবং সাজসরঞ্জামে শক্তিশালী, কিন্তু নৈতিক শক্তির বিচারে নিতান্তই হীনবল ও অকর্মণ্য। এরপর আল্লাহ তায়ালা উভয়ের মধ্যে হার-জিতের মাধ্যমে স্পষ্ট ফায়সালা করে দেন, কোন পক্ষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার যোগ্য আর কোন পক্ষ সুশোভিত হয়ে টিকে থাকার যোগ্য। ইসলামের শত্রুরা ইসলামের আলোকে চিরতরে নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘এ লোকেরা মুখের ফুঁৎকারেই আল্লাহর নূর নিভিয়ে দিতে চায়; অথচ আল্লাহ তাঁর এ নূর পরিপূর্ণ করে দিতে চান। তা কাফিরদের কাছে যতই অপছন্দ হোক না কেন।’ (সূরা সাফ : ০৮)
ইরাকের শাসনকর্তা ও কুফা নগরীর স্থপতি, পারস্য বিজয়ী বীর সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস রা: আশি বছর বয়সে মৃত্যুশয্যায় বলেছিলেন, বদর যুদ্ধে পরিহিত বর্ম আমাকে পরিয়ে দাও। এই বর্ম পরিহিত অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব বলে এতদিন তা সযত্নে তুলে রেখেছি।’ ইসলামে যুদ্ধের অনুমতি দেয়ার পর বদর যুদ্ধ ইসলামে প্রথম যুদ্ধের ঘটনা।
আল্লাহ তায়ালা দ্বিতীয় হিজরির ১২ সফর যুদ্ধের অনুমতি দিয়ে নাজিল করেন, ‘তোমরা আল্লাহ তায়ালার পথে সেসব লোকের সাথে লড়াই করো যারা তোমাদের সাথে লড়াই করে (কিন্তু কোনো অবস্থায়ই) সীমালঙ্ঘন করো না। কারণ আল্লাহ তায়ালা সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না’ (সূরা বাকারা : ১৯০)।
তিনি অন্য আয়াতে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে (কাফিরদের পক্ষ থেকে) যুদ্ধ চালানো হচ্ছিল, তাদেরও (এখন যুদ্ধ করার) অনুমতি দেয়া গেল। কেননা তাদের ওপর সত্যিই জুলুম করা হচ্ছিল; নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা এদের (মজলুম) সাহায্য করতে সম্পূর্ণ সক্ষম’ (সূরা হাজ : ৩৯)।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, (এরা হচ্ছে কিছু মজলুম মানুষ) যাদের অন্যায়ভাবে নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে শুধু এ কারণেই তারা বলেছিল আমাদের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ তায়ালা।’ (সূরা হাজ : ৪০)
হে আল্লাহ্ আমাদেরকে বদরের ঐতিহাসিক শিক্ষা নিয়ে আমাদের জীবন গঠনের তাওফীক দিন। আমীন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com