মো. নজরুল ইসলাম, স্বরূপকাঠি :
স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার আটঘর কুড়িয়ানায় এখন উৎসবের আমেজ চলছে। স্বরূপকাঠি এবং এর পার্শ্ববর্তী বরিশালের বানারীপাড়া ও ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৩৪টি গ্রাম নিয়ে পেয়ারা রাজ্যের শতভাগ মানুষ এখন বাগান থেকে পেয়ারা উত্তোলন, হাটের আড়তগুলোতে নিয়ে বিক্রির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে এ নয়নাভিরাম পেয়ারা রাজ্য দর্শনে এখানে প্রতিনিয়ত পর্যটকের সংখ্যা বাড়ছে।
উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব সীমান্তে আটঘর কুড়িয়ানা এলাকাটির অবস্থান। যে এলাকার শতভাগ মানুষ পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িত। বয়োবৃদ্ধ চাষিদের মতে, প্রায় ২০০ বছর আগে ব্রাহ্মণকাঠি গ্রামের পূর্ণচন্দ্র মণ্ডল ও কালাচাঁদ মণ্ডলের হাত ধরে ভারতের গয়া থেকে এখানে পেয়ারার আগমন। সেখান থেকেই পেয়ারা চাষ শুরু হয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে গোটা আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নে ছড়িয়ে পড়ে পেয়ারার চাষ। কুড়িয়ানার নাম অনুসারে কুড়িয়ানার পেয়ারা বলে সবার কাছে পরিচিত হলেও পেয়ারার চাষ এখন আর কুড়িয়ানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পেয়ারার চাষ এখন পাশের বিভিন্ন উপজেলায় বিস্তৃতি ঘটেছে। আটঘর কুড়িয়ানা ইউনিয়নের ১৮টি গ্রাম, পাশের জলাবাড়ি ইউনিয়নের ৫টি, সমুদয়কাঠি ইউনিয়নের ২টি গ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলার ২টি ও ঝালকাঠি সদর উপজেলার ৫টিসহ মোট ৩৪টি গ্রাম নিয়ে এ বিশাল এলাকায় পেয়ারার বাগান রয়েছে। এ ছাড়াও বানারীপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি ইউনিয়নের ৪টি, বিশারকান্দি ইউনিয়নের ১টি, উদয়কাঠি ইউনিয়নেরর ২টি গ্রামেও সম্প্রতি পেয়ারা বাগান গড়ে উঠেছে। স্বরূপকাঠি উপজেলায় ১০৫০ হেক্টর পেয়ারা বাগানের মধ্যে শুধু আটঘর কুড়িয়ানায়ই রয়েছে ৮২৫ হেক্টর। স্বরূপকাঠি উপজেলায় ২ হাজার ৫৫টি বাগান রয়েছে। এখানে পেয়ারা চাষির পরিবার রয়েছে ১ হাজার ৩৪৫টি। এখানে গড়ে প্রতি হেক্টরে বছরে ৯ থেকে ১১ টন পেয়ারা ফলে।
কটুরাকাঠির বড় পেয়ারা চাষি বঙ্কিম মণ্ডল জানান, আটঘর কুড়িয়ানায় পেয়ারা বিক্রির জন্য রয়েছে ৮টি গালা (বিক্রি করার স্থান) এবং অগণিত ভাসমান ক্রয়কেন্দ্র। গালার আড়ত ভাসমান ক্রয়কেন্দ্র থেকে নৌকা বা ট্রলারে করে বেপারীরা পেয়ারা কিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। কুড়িয়ানা থেকে মিনি ট্রাক ও মাঝারি সাইজের ট্রাকে এবং আটঘর, মাগুরা ও জুমবদ্বীপ থেকে বড় ট্রাকে করে ঢাকার শ্যামবাজার, ওয়াইজঘাট, সিলেট, কুমিলল্গা, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে পেয়ারা পাঠানো হয়।
আদমকাঠি, কটুরাকাঠি ও রাজাপুর পেয়ারা চাষি সমিতির সভাপতি জহর লাল মল্লিক, জিন্তাকাঠির পেয়ারা চাষি স্কুল শিক্ষক দীনেশ চন্দ্র মণ্ডল ও বিজন মৈত্র জানান, এ পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য এখানে আজও কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। ফলে বছরে বহু পেয়ারা নষ্ট হয়। পেয়ারা চাষিদের প্রতি বছর কোনো না কোনো প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। স্বরূপকাঠি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যাপারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com