বিশেষ প্রতিনিধি
দেশব্যাপী পুলিশের ১৫ দিনের বিশেষ অভিযানে প্রায় ২৪ হাজার জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়ে মোট অভিযান চালানো হয় ৩৩ হাজার ৪২৯টি। ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে এ অভিযান। গত বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা শেষ হয়েছে।
পুলিশের দাবি, বিজয় দিবস, বড়দিন, খ্রিষ্টীয় বর্ষবরণ উদযাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে এবং ঢাকায় আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে এ অভিযান চালানো হয়। তবে বিএনপির ভাষ্য, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় দলটির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে অভিযানের নামে নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সদরদপ্তর সূত্র জানায়, অভিযানে গ্রেপ্তার ২৩ হাজার ৯৬৮ জনের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় পরোয়ানাভুক্ত ১৫ হাজার ৯৬৮ জন। আর অভিযান চলাকালে ৫ হাজার ১৩২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৮ হাজার জনকে। অভিযানকালে ২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২ লাখ ইয়াবা, ৮ কেজি ৬ গ্রাম হেরোইন ও ৫ হাজার ৪১৫ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে তালিকাভুক্ত জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ৭২ জন।
বিশেষ অভিযান চালাতে এর আগে পুলিশ সদরদপ্তরের অপারেশন শাখা থেকে ৬৪ জেলার পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়। পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. হাসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছিল, ঢাকার আদালত এলাকা থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় সৃষ্ট প্রেক্ষাপট বিবেচনা, বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে এ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
আদেশ অনুযায়ী আবাসিক হোটেল, মেস, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অপরাধীদের সম্ভাব্য লুকিয়ে থাকার সব স্থানে অভিযান চালানো হয়। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তার, মাদক এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করার নির্দেশ দেওয়া হয় মাঠ প্রশাসনকে।
অভিযান শুরু হওয়ার আগে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এ সময় তাঁরা অভিযোগ করেন, ঢাকায় ৩১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশ টার্গেট করে এ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা শুরু হয়েছে। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বিএনপির প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়- এটি রুটিন অভিযান। দলটির নেতাকর্মীকে হয়রানি করা হবে না। পরোয়ানাভুক্ত আসামি, মাদক কারবারি ও জঙ্গিদের আইনের আওতায় আনা হবে।
ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীর সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হন। সংঘর্ষের পর পুলিশ বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালায়। ঘটনার পরদিন পল্টন, মতিঝিল, রমনা ও শাহজাহানপুর থানায় চারটি মামলা করে পুলিশ। এতে ২ হাজার ৯৭৫ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। তাঁদের মধ্যে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৭২৫ জনের। গ্রেপ্তার করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে। এর মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা রয়েছেন। পুলিশের করা মামলায় নাম উল্লেখ করা নেতাদের মধ্যে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাস ছিলেন না। এ ছাড়া ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে নতুন ও পুরোনো মামলায় পরোয়ানা রয়েছে এমন অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায় পুলিশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: nomanibsl@gmail.com মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com