ঈশ্বরদী আলহাজ্ব মোড় থেকে বানেশ্বর অভিমুখী রাস্তা প্রসস্তকরণ কাজের জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ রাস্তার উভয় পার্শ্বে চার শতাধিক দোকান-পাট উচ্ছেদ করে। তাদের মধ্যে লেপ-তোষকের দোকানদার হাশেমও ( ছদ্মনাম) উচ্ছেদ হয়। হাশেম একজন ভূমিহীন, অন্যের বাড়িতে বাসা ভাড়া করে থাকে। তার দোকানটি উচ্ছেদ হলে তিনি হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। কান্নারত করুণ ছবিটি স্থানীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ইউএনও সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়। ইউএনও সাহেব দরিদ্র হাশেমকে আশ্রায়ন প্রকল্পে একটি ঘর বরাদ্দ দেন। হাশেমের দুই কন্যা। বড় কন্যার বিয়ে হয়ে গেছে, ছোট কন্যা চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। তার স্ত্রী জীবিত। তার পরেও তিনি বলেন, তার কন্যারা মা হারা, এতিম। কারণ তার স্ত্রী তার অনুমতি না নিয়ে সৌদি অারবে গিয়ে গৃহকর্মীর কাজ করছে। সেজন্য তার বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজন প্রায়ই তার স্ত্রীর প্রসঙ্গ তুলে নানা রকম খোটা দেয়। এতে তার পৌরষত্বে(!) অাঘাত লাগে, সর্বক্ষণ মর্মযাতনায় ভুগেন। এদিকে তার বড় কন্যার সংসারে অশান্তি। মদ্যপ স্বামী প্রায়ই মারধর করে। একদিন ফুটন্ত পানি স্ত্রীর শরীরে ঢেলে দেয়। এতে তার কাধ ও বুকের একাংশ ঝলসে যায়। কিন্তু তার কন্যা স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে রাজি নয়। সে অাবারও স্বামীর ঘরে যেতে চায়। তার কন্যার বক্তব্য নিশ্চয়ই তার দোষ ছিল। স্বামী একদিন ভুল বুঝতে পারবে৷ হাশেম একজন পুরুষ মানুষ। সে পুরুষতন্ত্র পেয়েছে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে। একইভাবে তার কন্যাও পুরুষতন্ত্র পেয়েছে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, রাষ্ট্র সর্বোপরি ধর্মীয় সংস্কার থেকে। একজন ধর্মীয় রাজনৈতিক কর্মীকে জানি, যিনি নিজে প্রেম করে বিয়ে করেছেন কিন্তু ছোট বোন প্রেম করে বিয়ে করায় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন। এরকম শত শত ঘটনা দেশের আনাচে-কানাচে প্রত্যহ ঘটছে। অনেকে মনে করেন, মেয়েরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী না হওয়ায় পুরুষের উপর নির্ভরশীল থাকে। স্বামী পরিত্যাক্তা, বিধবা ও অবিবাহিতা মহিলাদের সমাজে বসবাস করা কঠিন। পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি সর্বক্ষণ তাড়া করে। সেজন্য পুরুষ নামক একজন ব্যক্তির ' ছাতা' হিসেবে হলেও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েও স্বামী কর্তৃক অত্যাচাড়িত হওয়ার ঘটনা রয়েছে প্রচুর। প্রায় ১১ বছর অাগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঘটনা উদাহরণ হতে পারে। রুমানা মনজুর নামের একজন শিক্ষিকাকে তাঁর বেকার স্বামী প্রায়ই মারধর করতেন। একদিন তার দুই চোখ উৎপাটন করে ফেলে( শিক্ষিকাটি বর্তমানে ক্যানাডায় বসবাস করছেন)। তিনি উচ্চ শিক্ষিতা ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী। তারপরেও স্বামীর অত্যাচাড় কেন মেনে নিতেন? এর পিছনে রয়েছে তার মস্তিষ্কে অবস্থানকারী পুরুষতান্ত্রিকতা( সেসময় লেখিকা শাকিলা নাছরিন পাপিয়া 'চোখ উৎপাটন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে? ' শিরোনামে একটি কলাম লিখেছিলেন)। সমাজ ও রাষ্ট্র অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। মেয়েদের বেলায় গ্রাম্য সালিশের সর্বশেষ রায় হলো- মেয়েটারই দোষ ছিল।গণ ধর্ষণের শিকার হলে বলা হয়- মেয়েটার চলাফেরায় ভুল ছিল। সেসঙ্গে পোশাকের দোষ তো রয়েছেই। কোনো ধর্মই মেয়েদের স্বাধীনতা স্বীকার করে না। অতএব পুরুষতান্ত্রিকতা দূর করা সহজ কাজ নয়৷ ইউরোপে প্রোটেস্ট্যান্টদের হাত ধরে রেনেসাঁস, পুজিবাদ ও গণতন্ত্র এসেছে। ওসব দেশ পুজিবাদী হলেও মেয়েদের চলাফেরা ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা মেনে নিয়েছে। তবে পুরুষতান্ত্রিকতা সম্পুর্ণ দূর হয়নি। সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে নানারকম বৈষম্যের সঙ্গে পুরুষতান্ত্রিকতাও দূর হয়। সামাজিক বিপ্লব সফল করতে হলে উপযুক্ত সাংস্কৃতিক আন্দোলন সহ রাজনৈতিক কর্মসুচির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
লেখক: গণতন্ত্রায়ন ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকার বিষয়ক গবেষক।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com