দুর্গাপূজা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি অফিস-আদালতে টানা ছুটি থাকায় কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় দেখা দিয়েছে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। তবে পর্যটকরা অভিযোগ করেছেন, হোটেল-মোটেলে গলাকাটা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সুযোগ বুঝে খাবারের দামও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে পর্যটকরা ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। পর্যটকদের সুরক্ষায় নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
কক্সবাজার: কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত এখন লাখো পর্যটকে ভরপুর। উত্তাল সমুদ্রে গোসল, বালুচরে দৌড়ঝাঁপের পাশাপাশি তাঁরা ছুটে বেড়াচ্ছেন জেলার পর্যটন পল্লিগুলোতে। তবে এবার বিপুল পর্যটকের কারণে হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টে অগ্রিম বুকিং বন্ধ করে দিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ উঠেছে, পর্যটকদের এমন ভিড় দেখে সাগরপাড়ের বেশ কিছু হোটেল-মোটেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য ছিল। টানা ছুটিতে সৈকতে এসেছেন প্রায় ২ লাখ পর্যটক। পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানান, ১ অক্টোবর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ছুটি চলবে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত। এর মধ্যে দুর্গাপূজা, ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারি অফিস-আদালত ছুটি।
গত দুই বছর করোনার কারণে পর্যটনকেন্দ্রগুলো প্রায় বন্ধ ছিল। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। গত ঈদেও পর্যটকের তেমন সমাগম হয়নি। এবার প্রত্যাশার বেশি পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টুুয়াক) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়াহ বলেন, ১০ দিনে পর্যটন শহরে ৫ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শুক্রবার দুপুরে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, বালিয়াড়িতে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরেছেন অনেকে। ঘোড়ার পিঠে বসে ছবি তুলে আনন্দে মেতেছেন। কেউ কেউ ওয়াটার বাইক ও সাগরের নোনাজলে গা ভাসিয়েছেন। উত্তাল সাগরে ঢেউয়ের ধাক্কায় কোনো পর্যটক যেন সমুদ্রে ভেসে না যান, সেজন্য লাইফগার্ডের কর্মী, ডুবুরি ও ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত রয়েছেন। পর্যটকদের সতর্ক করতে লাল ও সবুজ পতাকা ওড়ানো হচ্ছে।
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের কলাতলী এলাকার এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় তারকা মানের আটটিসহ হোটেল, মোটেল, গেস্টহাউস ও কটেজ আছে প্রায় ৪৫০টি। এসব হোটেলে দৈনিক দেড় লাখ মানুষের রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে।
এদিকে প্রায় ৭ মাস পর পর্যটকদের পদচারণে মুখর প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন। হোটেল থেকে বের হয়ে পর্যটকরা নেমে পড়ছেন সৈকতে। কেউ কেউ সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জলে নেমে গোসলে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেন্টমার্টিন দ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ৭ শতাধিক পর্যটক দ্বীপে রাত যাপনের সুযোগ পেয়েছেন। তিনি জানান, সেন্টমার্টিনে বর্তমানে হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে ১৪৪টির মতো। সমুদ্রসৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।
পটুয়াখালী: পর্যটকদের পদচারণায় মুখর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত। বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন প্র্রকৃতির রূপে সাজানো মনোমুগ্ধকর এই সৈকতে। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে মেতে উঠছেন পর্যটকরা। তবে সব আনন্দ ম্লান করে দিচ্ছে কুয়াকাটার আবাসিক ও খাবার হোটেল মালিকরা। পর্যটকদের বাড়তি চাপের সুযোগে তাঁরা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখানে হোটেল-মোটেলের সংখ্যা ১৫০।
পর্যটকরা ঘুরছেন লেম্বুরচর, গঙ্গামতিচর, ফাতরার বন, কাঁকড়ার চর ও রাখাইন পল্লিসহ কুয়াকাটার আকর্ষণীয় স্পটগুলো। উপভোগ করছেন সাগরের নীলরাশি ও প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য। আবার সেলফি তুলে উপভোগ করছেন কুয়াকাটার অপরূপ সৌন্দর্য।
এবারের কুয়াকাটার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু খুলে দিয়েছে ভাগ্যের চাকা। এখন আর শুধু মৌসুমি পর্যটকের অপেক্ষা নয়, পদ্মা সেতু হওয়ার পর থেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও থাকছে বিপুলসংখ্যক পর্যটকের উপস্থিতি। ঢাকাসহ পদ্মার ওপারের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে এখন আর ফেরি পারাপারের ভোগান্তি নেই। ঢাকা থেকে মাত্র ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টায় পর্যটকরা কুয়াকাটায় পৌঁছে যাচ্ছেন। এর আগে সময় লাগত ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা।
পাবনা থেকে আসা কাওসার মোল্লা ও মোহাম্মদ নাসিম বলেন, 'আমরা কয়েক বন্ধু মিলে বৃহস্পতিবার কুয়াকাটায় এসেছি। জীবনে এই প্রথমবার এলাম। কিন্তু আবাসিক হোটেলগুলোতে ভাড়া অনেক। উপায় না পেয়ে রাত গাড়িতেই কাটিয়েছি। ঢাকার দক্ষিণ বনশ্রী থেকে আসা আবিদা-রফিক দম্পতি জানান, স্বপ্নের পদ্মা সেতু হওয়ায় প্রথমবার এলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে। পরিবেশটা ভালোই লাগছে। তবে আবাসিক ও খাবার হোটেলে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে। তবে কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মোতালেব শরীফ বলেন, বিচ ম্যানেজমেন্ট নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সব হোটেল-মোটেলের কাউন্টারে রয়েছে। এখানে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই। কুয়াকাটা জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় তৎপর রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com