বাকেরগঞ্জ সংবাদদাতা :
গত ৩০ বছরেও চালু হয়নি বাকেরগঞ্জ সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসটি। প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন তলা ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হয় দুর্গম এলাকা থেকে উপজেলা সদরের এই কলেজে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে।
তবে, এখনো ছাত্রাবাসটির তত্ত্বাবধায়কসহ কোনো পদেই লোকবল নিয়োগ করা হয়নি। এমনকি ছাত্রাবাসটি পরিচালনার দায়িত্ব কোন প্রতিষ্ঠানের হাতে, তাও জানেনা কেউ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৭০ সালে দেশের উত্তাল রাজনৈতিক সংঘাতময় পরিস্থিতিতে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির সাহসী ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপে সরকারি বাকেরগঞ্জ কলেজের বীজ বপন করা হয়। ১৯৭৮ সালে সরকারি অর্থে কলেজের অস্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তিত হয়ে স্থায়ী ঠিকানায় অবস্থান গ্রহণ করে। ১৯৮৩ সালে নির্মিত হয় মূল ভবন এবং পুরাতন বিজ্ঞান ভবনটি। ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সরকারি ঘোষণার মাধ্যমে বাকেরগঞ্জ কলেজটি সরকারি কলেজের মর্যাদা পায়।
১৯৯২ সালে বিএনপি সরকারের আমলে ছাত্রাবাস ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়। উপজেলার দুর্গম এলাকার শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে দৃষ্টিনন্দন ছাত্রাবাসটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন বিএনপি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার দুই বছরের মাথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়।
তড়িঘড়ি করে ঠিকাদার ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ করেন। জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পর ১৯৯৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদে পাস হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে ছাত্রাবাস চালু হওয়ার আগেই রাজনৈতিক কারণে তখন চালু না হলেও এখন পর্যন্তু বন্ধ রয়েছে। বাকেরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড সেতুর দক্ষিণ পাশে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে এই ছাত্রাবাস অবস্থিত। ১৪ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, তিন তলাবিশিষ্ট ছাত্রাবাসটির ভবনের নিরাপত্তার তদারকিতেও কাউকে দেখা যায়নি।
গত ৩০ বছর খালি পড়ে থাকায় ভবনের দেয়ালের রং বেশ বিবর্ণ হয়ে গেছে। জরাজীর্ণ ভবনের ইট-সুড়কি খসে পড়ছে। খসে পড়ছে পলেস্তারও। বের হয়ে গেছে রড। অনেক স্থানেই ফাটল দেখা দিয়েছে। সিলিংজুড়ে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা। আগাছা জন্মেছে যেখানে-সেখানে। বৃষ্টি হলেই ছাদ থেকে পড়ছে পানি। দরজা জানালা গ্রিল চুরি হয়ে গেছে। ভবনটি এখন পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। সন্ধ্যা ঘনালেই পরিত্যক্ত ভবনে মাদক কারবারি ও মাদকসেবীদের অভয় রাজ্যে পরিনত হয়। সরকারি কলেজের ছাত্রাবাসটি এখন যেন ভূতুড়ে বাড়িতে রুপ নিয়েছে।
কলেজ কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, ৬ একর ৩০ শতাংশ জমি উপর নির্মিত কলেজ ভবন ও ছাত্রাবাস। অথচ ছাত্রাবাস নির্মিত স্থানে মোট ৫৩ শতাংশ জমি থেকে ২৭ শতাংশ জমি কলেজের নামে রেকর্ড রয়েছে। বাকি ২৬ শতাংশ জমি হাল বিক্রির জরিপে সরকারের নামে রেকর্ড ভুক্ত না হয়ে স্থানীয় আব্দুল হাকিম গং দের নামে রেকর্ড ভুক্ত হয়। এ বিষয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে ২০১৯ সালে একটি মামলা হয়। আদালতে মামলাটি চলমান রয়েছে। যাহার মামলা নং -১৭৫৯/১৯।
সরকারি কলেজে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কলেজ মাঠের মধ্যে বিভিন্ন রকমের আগাছা জন্মে জঙ্গলে পরিনত হয়েছে। কলেজের সামনে দেয়াল সহ ফুটপাত দখল করে নিয়েছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। তারা দোকান ঘর নির্মান করে চড়া দামে ভাড়া দিয়ে আসছে। দোকানের বর্জ্য ফেলে আসছে কলেজ মাঠে।
অপরদিকে ছাত্রাবাসের জমি দখল করে দোকান ঘর নির্মান করে ভাড়া দিয়ে আসছে স্থানীয় একটি সিন্ডেকেট। কর্তৃপক্ষের অবহেলা, উদাসীনতা ও তত্ত্বাবধানের অভাবে সরকারি কলেজ বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।
এছাড়াও, কলেজে শিক্ষক সংকট রয়েছে। জীববিদ্যা, সমাজকর্ম,অর্থনীতি, শরীরচর্চা সহ একাধিক। চতুর্থ শ্রেণীর ১২ টি পদে ৭ টি শুণ্য। তৃতীয় শ্রেণীর তিনটি পদে তিনটিই শুণ্য।
কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শুকলা রানী হালদার বলেন, আমার জানামতে, ছাত্রাবাস নির্মাণের পরে কলেজ কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়নি। ছাত্রাবাস না থাকায় ছাত্রদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে ছাত্রাবাস চালু হয়নি। বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নিলেও নানা বাঁধার কারণে কলেজ ও ছাত্রাবাসের সমস্যা গুলো সমাধান হচ্ছে না।
অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা জানান, এক সময় কলেজটির সার্বিক সুশৃংঙ্খল পরিবেশ ছিল। ঐ সময় মেধাবী ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষকদের সুযোগ্য তত্ত্বাবধানে শত শত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের চঞ্চল পদচারনায় কলেজ প্রাঙ্গণ জাগ্রত ও প্রাণ-চঞ্চল হত।
আজ সব যেন হারাতে বসেছে। শীঘ্রই কলেজের সম্পত্তি রক্ষার্থে ও কলেজের সামনে নির্মিত অবৈধ স্থাপনা অপসারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয়ে না আসে আমরা আন্দোলনের নামবো।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মামুনুর রশীদ নোমানী ।
যোগাযোগ: আদালত পাড়া সদর রোড,বরিশাল। ইমেইল: [email protected] মোবাইল: 01713799669
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত 2008-2023 BarisalKhabar24.com